Aajbikel

৫০ লাখে তৃণমূলে যোগ? বিস্ফোরক শুভেন্দু! দলবদল মানেই কি টাকার খেলা?

 | 
৫০ লাখে তৃণমূলে যোগ? বিস্ফোরক শুভেন্দু! দলবদল মানেই কি টাকার খেলা?

নিজস্ব প্রতিনিধি: বঙ্গ রাজনীতিতে দলবদল গড়ের  মাঠের ক্লাবগুলিকেও হার মানিয়ে দিয়েছে। ময়দানের দলবদল ঘিরে একটা সময় টানটান উত্তেজনা দেখা যেত ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে। কে মোহনবাগানে আসছেন, কে ইস্টবেঙ্গলে যাবেন, কোন ফুটবলার মহামেডান ছাড়বেন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সবারই তুমুল আগ্রহ দেখা যেত। কিন্তু ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে পালাবদলের পর বঙ্গ রাজনীতিতে যেভাবে নেতা-মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ, কাউন্সিলরদের দলবদলের 'সংস্কৃতি' শুরু হয়েছে তা ফুটবল ময়দানকেও হার মানিয়ে দিয়েছে বলে সবাই মনে করেন। সবচাইতে বড় কথা বঙ্গ রাজনীতির  দলবদলের পিছনে লক্ষ কোটি টাকার খেলা রয়েছে বলে বহু আগেই অভিযোগ উঠেছিল। এবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিস্ফোরক বক্তব্যে সেই অভিযোগই যে মান্যতা পেল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সাগরদিঘি বিধানসভা উপ-নির্বাচনের প্রচারে গিয়ে শুভেন্দু দাবি করেছেন ২০১৯ সালে নবগ্রামের সিপিএম বিধায়ক কানাই মণ্ডল ৫০ লক্ষ টাকা ও একটি স্করপিও গাড়ির বিনিময়ে তাঁর হাত ধরেই বাম শিবির ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। যথারীতি কানাইবাবু এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আর শুভেন্দু এই দাবি করতেই যথারীতি তৃণমূল এবং বিজেপিকে একযোগে আক্রমণ করতে শুরু করেছেন বাম-কংগ্রেস নেতৃত্ব।

এখন প্রশ্ন যেভাবে বঙ্গ রাজনীতিতে একের পর এক দলবদলের ঘটনা ঘটেছে, তার সব কটিতেই কি বিপুল অঙ্কের টাকার লেনদেন হয়েছিল? একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি থেকে তৃণমূল, এবং তৃণমূল থেকে বিজেপি, নিয়মিত নেতা-নেত্রীদের যাতায়াত লেগেই ছিল। সেই দলবদলেও কি টাকার লেনদেন হয়েছিল? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে।

শুধু পশ্চিমবঙ্গ বলে নয়, ২০০৮ সালে দিল্লিতে প্রথম ইউপিএ সরকারকে যখন আস্থা ভোটের সম্মুখীন হতে হয়েছিল তখন অভিযোগ ওঠে সমাজবাদী পার্টির তৎকালীন সাংসদ অমর সিং বিপুল টাকা দিয়ে নাকি বিজেপির তিন সাংসদকে আস্থা ভোটে সরকারের পক্ষে ভোট দিতে বলেছিলেন। সেদিন লোকসভার অধিবেশন কক্ষে টাকার বান্ডিল হাতে নিয়ে ওই তিন বিজেপি সাংসদ অমর সিংয়ের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছিলেন। পরবর্তীকালে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করেছিল সংসদ। এছাড়া ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে একাধিক সেলিব্রিটিকে টাকা দিয়ে নাকি বিশেষ একটি  রাজনৈতিক দল প্রার্থী করেছিল বলে অভিযোগ ওঠে। একই ভাবে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সরকার  ভাঙাগড়ায় কোটি কোটি টাকার খেলা হয়েছে বলে বার বার অভিযোগ উঠেছে।

বঙ্গ রাজনীতিতে দলবদল ঘিরে বিভিন্ন সময়ে টাকার লেনদেন বা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে এই প্রথম প্রকাশ্যে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করলেন শুভেন্দু। শুভেন্দুর দাবি তিনি যখন মুর্শিদাবাদ জেলার পর্যবেক্ষক ছিলেন তখন তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়েই কানাই মণ্ডল সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করেছিলেন। কিন্তু তাতেও উঠছে প্রশ্ন। এটা তো অনৈতিক ব্যাপার, তাহলে শুভেন্দু তখন কেন আপত্তি জানাননি? এখন তৃণমূল  ছেড়েছেন বলেই কী সেই ঘটনা প্রকাশ্যে আনছেন তিনি? এই সমস্ত প্রশ্ন অনিবার্যভাবে উঠছে এবং তা ওঠা উচিত। অতীতে বঙ্গ রাজনীতিতে এমন অভিযোগ কোনও দিন ওঠেনি। কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া রাজ্য রাজনীতিতে এভাবে ঘন ঘন নেতা-নেত্রীদের দলবদল কেউ মনে করতে পারবেন না। এটা বাংলার সংস্কৃতি নয়। তাই যে অভিযোগ এখন শুভেন্দু করছেন সেই একই দোষে দুষ্ট কিন্তু বিজেপিও। এই পরিস্থিতিতে সাগরদিঘি বিধানসভা উপ-নির্বাচনের আগে বাম-কংগ্রেসের দাবি এতদিন তারা যে অভিযোগ করে আসছিল সেটাই আজ প্রমাণিত হল। তাই শুভেন্দুর এই বিস্ফোরক অভিযোগ উপ-নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে কিনা সেদিকে নজর থাকবে রাজনৈতিক মহলের।

Around The Web

Trending News

You May like