কলকাতা: ১৪ অগস্ট থেকে ২৯ অক্টোবর৷ আড়াই মাস৷ পৃথিবী বদলে গিয়েছে শোভন চট্টোপাধ্যায়-বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷ ১৪ অগস্ট দিল্লির দিন দয়াল উপাধ্যায় মার্গে বিজেপির জাতীয় কার্যালয়ে শরীরে গেরুয়া উত্তরীয় চাপিয়ে ‘বন্ধু’ অধ্যায়িকা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিজেপিতে আসে রাজ্য রাজনীতিতে চমক দিয়েছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়৷ ২৯ অক্টোবর দক্ষিণ কলকাতার ৩৪ বি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে ‘বিজেপি নেতা’ শোভন চট্টোপাধ্যায় এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে ভাইফোঁটা নিতে৷ সঙ্গে অবশ্যই, ‘বন্ধু বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়৷’
মঙ্গলবার বিভিন্ন হাইপ্রোফাইল ভাইফোঁটার মাঝেই শোভনকে দেওয়া মমতার ফোঁটা বাজার মাত করেছে৷ তৃণমূলের যে নেতারা সেই সময় বৈশাখীর দিকে শোভনের ‘অধঃপতনের’ কারণ হিসাবে আঙ্গুল তুলেছিল, আজ তাঁদেরই অনেকে বলাবলি শুরু করেছেন, বৈশাখীর হাত ধরেই ‘ঘর ওয়াপাসি’ হলো শোভনের৷ বিজেপিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি তে শোভন-বৈশাখীকে বিশেষ দেখা যায়নি৷ বিজেপি এবং শোভন-বৈশাখী উভয়পক্ষের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতের অমিল ছিল৷ তাই, বিজেপির বিভিন্ন কার্যক্রম থেকে দূরেই ছিলেন তাঁরা৷
শোভন-বৈশাখীর বিজেপিতে আগমনের পর থেকেই বিতর্ক চলার আসছে৷ কলকাতার পার্টি অফিসে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তাঁর বন্ধু বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন আমন্ত্রণ জানানো হয় নি তাই নিয়েই গোল বাধে৷ বেজায় ক্ষুব্ধ শোভন চট্টোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নেন, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে নালিশ করবেন৷ সেই মতো রাজ্যের পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেননেকে ফোন করে শোভন জানান, বৈশাখী এবং তিনি দুজনেই একসাথে দিল্লিতে বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন৷ কিন্তু, সংবর্ধনা দেওয়ার সময় রাজ্য পার্টি বৈশাখীর নাম কেন বড় দিলো৷ বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন অরবিন্দ মেননও৷ দিলীপ ঘোষ শোভন-বৈশাখীকে ‘ডাল-ভাত’ আখ্যা দেন৷ যে দুজনকেই ক্ষিপ্ত করেছিল৷
এর পরেও অনেক ঘটনা ঘটেছে৷ দেবশ্রী রায় বিজেপিতে আসতে চাইছিলেন৷ শোভন-বৈশাখী যেদিন দিল্লি ছিলেন সেই দিন তিনিও পৌঁছে যান৷ দেবশ্রী রায়কে নিয়ে একপ্রস্থ নাটক জমে যায়৷ দেবশ্রী দিলীপ ঘোষের সল্টলেকের বাড়ি যান৷ দেবশ্রীর বিজেপিতে আনাগোনা দেখে রুষ্ঠ হন শোভন-বৈশাখী৷ এরমাঝে বিজেপি নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য বিতর্কের সৃষ্টি করে৷ সেই প্রথম বৈশাখী তৃণমূলে ফিরে যাওয়ার ইঙ্গিত দেন৷ আর মাঝে রাজ্যে অমিত শাহ এবং জে পি নাড্ডা আসেন৷ সেই সভাতেও তারা দুজনে অনুপস্থিত ছিলেন৷
এর মাঝেই বৈশাখী তৃণমূল নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন৷ শোভন কিন্তু, আজ পর্যন্ত তৃণমূলে ফিরে যাবেন কিনা একবারও বলেননি৷ রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ শোভনের মমতার বাড়িতে যাওয়া নিয়ে বলেন, সামাজিক অনুষ্ঠানে কেউ কারও বাড়ি যেতেই পারেন৷ অন্যদিকে, বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাজু ব্যানার্জি বলেন, বিজেপি দলটি বড়, কোনও ‘ব্যানার্জি’ বড় নয়৷ সামাজিক অনুষ্ঠান৷ কেউ কারও বাড়ি যেতেই পারেন৷ ২০২১ সালে তৃণমূলকে উৎখাত করতে হবে, দল সেই লক্ষ নিয়েই চলছে৷
শোভন-বৈশাখী এবং তৃণামূলের সম্পর্কের মাঝে দাঁড়িয়ে ছিলেন শোভনের স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়৷ একটি দোকানে বৈশাখীকে শাড়ি কিনে দেওয়ার সময় ক্যামেরায় ধরা পড়েন শোভন৷ এরপর মমতার রোষানলেও পড়েন৷ বিধানসভায় শোভনকে একহাত নেন মমতা৷ তারপরই তৃণমূলে শোভনের হানিমুন শেষ হয়৷ কিন্তু রত্নার সঙ্গে শোভনের টানাপোড়েনের সম্পর্ক অনেক আগেই শুরু হয়েছে৷ শোভন দল ত্যাগের পর তাঁর ওয়ার্ডেই রত্নাকে উদ্যোগী হতে দেখা যায়৷ রত্না বলতে থাকেন, শোভনের পতনের মূলে বৈশাখী৷ ২৯ অক্টোবর, মমতার কালীঘাটের বাড়ি শোভনকে নিয়ে গিয়ে বৈশাখী প্রমাণ করতে চেয়েছেন, রত্না উহ্য৷ শোভনের জীবনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর তিনিই বিরাজমান৷