কলকাতা: ইঙ্গিতটা আগেই দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ নজরুলমঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি চান না, দু’একটি পুরসভার জন্য নতুন করে ভোট করিয়ে সাধারণ মানুষকে অসুবিধায় ফলতে৷ সমস্ত পুরভোট এক সঙ্গে করানোর দাবিও করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ মুখ্যমন্ত্রীর সেই ইঙ্গিত এবার বিল আকারে কার্যকর করল রাজ্য৷ মেয়াদ উত্তীর্ণ পুরসভার নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে প্রশাসকদের মেয়াদ আরও বাড়াতে বিল পাশ রাজ্য সরকারের৷ ১৭ পুরসভার প্রশাসনের মেয়াদ আরও একবছর বৃদ্ধি করতে বিধানসভার অধিবেশনে বিল পেশ সরকারের৷ একই এখন থেকে নির্বাচনে না জিতেও পুরসভার মেয়ারম্যান কিংবা মেয়র হওয়া যাবে৷ পুর আইনে সংশোধন রাজ্যের৷
এই মুহূর্তে বাংলার ১৭ পুরসভার মাথায় প্রশাসক বসানো হয়েছে৷ তাদের মেয়ারও শেষ হতে চলেছে৷ আগামী বছর কলকাতা ও বিধাননগর পুরসভা-সহ রাজ্যের ৯৪টি পুরসভায় ভোট হওয়ার কথা৷ ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের এইটাই কার্যত অ্যাসিড টেস্ট তৃণমূলের৷ পুর আইনে সাফ বলা রয়েছে, কোনও পুরসভা নাগরিক পরিষেবা না দিতে পারলে রাজ্য সরকার তা ভেঙে দিয়ে প্রশাসক বসাতে পারে৷ কিন্তু তা কার্যকর করার আগে পুর দপ্তরকে শোকজ করতে হয়৷ শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হলে বোর্ড ভাঙার সিদ্ধান্ত নিতে পারে রাজ্য সরকার৷ কিন্তু, শোকজ না করে পাঁশকুড়া পুরবোর্ডকে ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় রাজ্য সরকারকে নাস্তানাবুদ হতে হয়৷
রাজ্য সরকার অবশ্য আগেই জানিয়েছিল, লোকসভা ভোটের পর অগস্টে মেয়াদ উত্তীর্ণ পুরসভাগুলির নির্বাচন করানো হবে৷ কিন্তু ভোট মেটার পরেও রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে কার্যত মুখে কুলুপ এঁটেছে৷ উল্টে ১৭ পুরসভায় প্রশাসন বসিয়ে তাঁদের মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করতে চলেছে রাজ্য৷ নয়া পুর আইনে অনির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত পুরসভায় প্রশাসক রাখার আইনি ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে পুর দপ্তরের হাতে৷ ফলে, ১৭ পুরসভায় এখনই ভোট করতে হবে এমন কোনও আইনি বাধ্যবাধকতা নেই৷ রাজ্যে মোট ৭টি পুর নিগমসহ ১২৫ পুরসভার রয়েছে৷ এর মধ্যে আগামী বছরই রাজ্যে ৯৪টি পুরসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে৷ তবে, আগামী বছর রাজ্যে ১১২টি পুরসভা ও পুর নিগমের ভোট একসঙ্গে করানো শাসকদলের পক্ষে কতটা লাভজনক হবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে৷
অন্যদিকে, পুরসভায় প্রশাসক বসানোর আইন আগেই সংশোধন করেছিল রাজ্য৷ এবার বাংলার পুরসভা নির্বাচন ব্যবস্থায় বড়সড় পরিবর্তন আনল রাজ্য সরকার৷ ভোটে না জিতেও পুরসভার চেয়ারম্যান পদে বসার ছাড়পত্র ছিনি আনতে নয়া বিল পাশ করিয়েছে রাজ্য সরকার৷
এই বিল পাশ করিয়ে রাজ্য সরকার ভোটে না জিতেও পুরসভার চেয়ারম্যান অথবা মেয়র পদে কোনও ব্যক্তিকে বসাতে পারে রাজ্য৷ সেক্ষেত্রে ছ’মাসের মধ্যে পুরপ্রধান অথবা মেয়রকে ভোটে জিতে পদে ফিরতে পারবেন৷ ঠিক যেমনটা হয়েটিল কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হামিকের ক্ষেত্রে৷ তিনি কাউন্সিলর না হয়েও মেয়র পদে বসেন৷ পরে অবশ্য তিনি ভোটে নির্বাচিত হন৷ কাউন্সিলর না হয়েও যাতে কেউ মেয়র বা চেয়ারম্যান হতে পারেন, তার বন্দোবস্ত করতেই পুর আইনে সংশোধন করা হয়৷
১৯৮০ সালে প্রশান্ত শূরের আমলে কলকাতা পুরসভার আইন তৈরি হয়৷ ৩৮ বছর পরে সেই আইনের বেশ কয়েকটি সংশোধনী আনা হয়৷ এবার নতুন করে আইন তৈরি করে পুর নির্বাচন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন করার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে৷ কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৯৩ সালে সংবিধানের ৭৪ তম সংশোধনী আনার পর বঙ্গীয় পুর আইন, ১৯৩২ নতুন করে করা হয়৷ সেই সংশোধনী বিধানসভায় অনুমোদিত হয়েছিল ১৯৯৩ সালে৷ বঙ্গীয় পুর আইন ১৯৯৩-র উপর ভিত্তি করেই রাজ্যের ১১৮টি পুরসভা পরিচালিত হয়৷ ১৯৯৩ সালের পর ২০১৯ সালে নতুন বঙ্গীয় পুর আইনে সংশোধন রাজ্য সরকারের৷ গোটা বিলের বিরোধীতা করা হলেও বাম-কংগ্রেসের আপত্তি ধোপে টেকেনি৷