মাত্র ৩ মাসের জন্য মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বাড়াল রাজ্য! ভোট বড় বালাই, তাই কি এই সিদ্ধান্ত?

মাত্র ৩ মাসের জন্য মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বাড়াল রাজ্য! ভোট বড় বালাই, তাই কি এই সিদ্ধান্ত?

নিজস্ব প্রতিনিধি: কয়েক মাস পরেই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। বিগত বেশ কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ তাড়া করে বেড়াচ্ছে রাজ্য সরকারকে। এই অবস্থায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করে। সেই জায়গা থেকে বারবার স্বচ্ছতার বার্তা দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটা করে চালু করা হচ্ছে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ নামে একটি কর্মসূচি। এখানেই শেষ নয়, জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত মিড ডে মিলে প্রতি সপ্তাহে পড়ুয়া পিছু অত্যন্ত সামান্য বরাদ্দ বাড়াল রাজ্য সরকার। রাজ্য সরকারের স্কুল শিক্ষা দফতর বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে পড়ুয়াদের বাড়তি পুষ্টি দেওয়ার লক্ষ্যে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে পড়ুয়া পিছু মাত্র কুড়ি টাকা করে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সপ্তাহে মাত্র কুড়ি টাকা বাড়ালে একজন পড়ুয়া কতটা পুষ্টিকর খাদ্য পেতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তবু শিশুদের পুষ্টির কথা ভেবেই যদি এই বরাদ্দ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে, তবে তার চেয়ে ভাল আর কিছু হতে পারে না। এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানানো উচিত প্রত্যেকের। কিন্তু সত্যিই কি বিষয়টি তাই? এক কথায় উত্তরটা হচ্ছে না। যদি সত্যিই শিশুদের বারো মাসের পুষ্টির কথা ভাবা হতো, তাহলে এত অল্প সময়ের জন্য লোক দেখানো ভাবে  মিড-ডে মিলে বরাদ্দ বাড়ানো হতো না। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে মাথায় রেখে গ্রাম বাংলার মানুষের মন পেতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। তাই সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যাচ্ছে আগামী ২৩ জানুয়ারি থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত অতিরিক্ত টাকা বরাদ্দ করা হবে মিড ডে মিলের জন্য। এর জন্য রাজ্য সরকার ৩৭১ কোটি ৯০ লক্ষ ৭৮ হাজার ৪০০ টাকার অতিরিক্ত তহবিল দিচ্ছে। তাই সরকারের এই উদ্যোগকে প্রহসন বলতে দ্বিধা করছেন না বিরোধীরা।

২০০৪ থেকে দেশজুড়ে প্রত্যেকটি স্কুলে মিড ডে মিল প্রকল্প শুরু হয়েছে। মিড-ডে মিলের ৬০ শতাংশ টাকা কেন্দ্র এবং ৪০ শতাংশ দেয় রাজ্য সরকার। দীর্ঘদিন ধরেই মিড ডে মিলে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছিল কেন্দ্রের কাছে। এরপর গত অক্টোবর মাসে কেন্দ্রীয় সরকার ৯.৬ শতাংশ হারে এই খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করে। তাতে প্রাথমিকে ৪৮ পয়সা এবং উচ্চ প্রাথমিকে ৭২ পয়সা করে বরাদ্দ বাড়ানো হয়। তাতে মিড ডে মিলে প্রাথমিকে ৫ টাকা ৪৫ পয়সা এবং উচ্চ প্রাথমিকে ৮ টাকা ১৭ পয়সা পড়ুয়া পিছু দৈনিক বরাদ্দ হয়েছে। এবার তার সঙ্গে দৈনিক ৩ টাকা ৩৩ পয়সা অতিরিক্ত যোগ হবে পশ্চিমবঙ্গের পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে। কিন্তু সেটা শুধুমাত্র ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত। এরপর নতুন করে বিজ্ঞপ্তি জারি না হলে পুরনো বরাদ্দতেই ফিরে যাবে রাজ্য। রাজ্য সরকার জানিয়েছে পড়ুয়াদের পুষ্টির কথা চিন্তা করে সপ্তাহে তাদের পাতে ডিম, চিকেন এবং মরসুমি ফল দেওয়া হবে। কিন্তু এই বরাদ্দে কি সেটা সম্ভব? স্বাভাবিকভাবেই এই প্রশ্ন উঠছে। এ বিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ‘টিচার অ্যান্ড এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর সেক্রেটারি অনিমেষ হালদার বলেন, “আজকের যা বাজার দর সেখানে অতিরিক্ত ৩ টাকা ৩৩ পয়সা বরাদ্দে কীভাবে এক শিক্ষার্থীকে পৌস্টিক আহার দেওয়া সম্ভব সেটা মাথায় আসছে না। বড় জোর সপ্তাহে একদিন বা দু’দিন তাকে ডিম বা ফল দেওয়া যেতে পারে। বাজার দরের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে বরাদ্দ বাড়ানো উচিত৷”

তাই প্রশ্ন রাজ্য সরকার যদি সত্যিই মন থেকে শিশুদের পুষ্টিকর খাবার দিতে চায় তাহলে বছর ভর কেন বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে না? গত দুর্গাপুজোয় প্রত্যেকটি পুজো কমিটিকে আগের চেয়ে অনুদানের পরিমাণ বাড়িয়েছে রাজ্য। বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকার কয়েক হাজার কোটি টাকা প্রতি বছর খরচ করে। তাহলে সারা বছর ধরে প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিকে শিশুদের মিড ডে মিলের বরাদ্দ রাজ্য সরকার আরও বাড়াচ্ছে না কেন? কেন শুধু কয়েক মাসের জন্য তাদের পুষ্টিকর আহার দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে? মাংস বিক্রেতারা জানাচ্ছেন ৪০ গ্রামের দু টুকরো মাংস সপ্তাহে একদিন দিলেও ১৬ টাকা পড়বে। তাহলে বাকি ৪ টাকায় ডিম এবং মরসুমি ফল দেওয়া কি সম্ভব? বাজারে ছোট সাইজের কমলালেবুও ৬ টাকার কমে পাওয়া যায় না। ডিমের দাম ৬-৭ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করে। তাহলে কেন ঘটা করে পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার কথা ঘোষণা করল রাজ্য? এই প্রশ্ন অবশ্যই উঠছে এবং ওঠা উচিত। তাহলে কি বিরোধীদের দাবি অনুযায়ী পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা ভেবেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার? তবে কী রাজ্য সরকারের প্রত্যেকটি সিদ্ধান্ত এখন রাজনীতি কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে? সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন সবাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × 2 =