দুয়ারে সরকার পরিষেবার মেয়াদ বাড়াল রাজ্য সরকার, দুয়ারে পঞ্চায়েত বলেই কি এই সিদ্ধান্ত?

দুয়ারে সরকার পরিষেবার মেয়াদ বাড়াল রাজ্য সরকার, দুয়ারে পঞ্চায়েত বলেই কি এই সিদ্ধান্ত?

নিজস্ব প্রতিনিধি: অঙ্কটা বেশ কঠিন! এমনটাই মনে করছে শাসক দল তৃণমূল। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল যে এবার কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে পড়তে চলেছে, সেটা সকলেই বুঝতে পারছেন। এবারে গতবারের মতো অনায়াসে জয় আসবে না বলেই মনে করে শাসক দল। আর সেই লক্ষ্যেই গ্রামবাসীদের খুশি করার জন্য চেষ্টার কসুর করছে না তারা। পঞ্চায়েত ভোটের আগে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে জেলা সফর করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাধারণ মানুষ কতটা পরিষেবা পাচ্ছেন তার বিস্তারিত খোঁজখবর নিচ্ছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে ফের ‘দুয়ারে সরকার’ পরিষেবার মেয়াদ বাড়াল নবান্ন। গোটা ডিসেম্বর মাস জুড়ে এই পরিষেবা পাবেন রাজ্যবাসী। যদিও রাজ্যের মুখ্য সচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী কিছুদিন আগেই জানিয়েছিলেন পাঁচ ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্প চলবে। কিন্তু শুক্রবার নতুন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে নবান্ন জানিয়ে দিল ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই পরিষেবা পাওয়া যাবে। 

কয়েক মাস পরেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তাই সাধারণ মানুষ যাতে তাঁদের নিত্য পরিষেবা ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পের মাধ্যমে সহযেই পান সেই লক্ষ্যেই সময় বাড়ানো হয়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিয়াল মহল। একটা সময় এই কর্মসূচি ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত হওয়ার কথা ছিল। পরে সেটি বাড়িয়ে ৫ ডিসেম্বর করা হয়। এবার সময়সীমা আরও বাড়ল। নবান্ন সূত্রে খবর, এতদিন ‘দুয়ারে সরকার’-এর চতুর্থ দফা পর্যন্ত ২৫ রকম পরিষেবা পেতেন রাজ্যবাসী। তবে পঞ্চম দফায় আরও কয়েকটি পরিষেবা তাতে যুক্ত করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিল মেটানোর পাশাপাশি জমির পাট্টার জন্য আবেদন করা যাবে দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে। এর পাশাপাশি দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পগুলি থেকে বিভিন্ন প্রকল্পে আবেদন করার জন্য ফর্ম পাওয়া যাবে বিনামূল্যে। এছাড়া ১০৭০  টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করে সাধারণ মানুষ প্রকল্পগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। সেই সঙ্গে কারও যদি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না থাকে তাহলে ক্যাম্পগুলি থেকে সে ব্যবস্থাও করে দেওয়া হবে। সদ্য হিঙ্গলগঞ্জের সামশেরনগরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সরকারি পরিষেবা প্রদান সম্পর্কে গ্রামের বাসিন্দাদের কাছ থেকে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা জানতে চেয়েছিলেন। জানতে চেয়েছিলেন দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প ঠিকমতো হচ্ছে কিনা। তাঁদের জবাবে মুখ্যমন্ত্রীর মনে হয়েছে এই ক্যাম্পের সময়সীমা বাড়ানো উচিত। এরপরই সেই সময়সীমা বাড়ানো হল। সেই সঙ্গে নবান্ন সূত্রে খবর, ‘দুয়ারে সরকার’ ক্যাম্পে গিয়ে সাধারণ মানুষ যাতে সমস্যায় না পড়েন, কোনও ভাবেই যাতে তাঁদের হয়রানির শিকার না হতে হয়, সেই নির্দেশ জেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে রাজ্য প্রশাসনের তরফে।

যদিও বিরোধীদের প্রশ্ন, এতদিন কেন এই সমস্ত খুঁটিনাটি দিকে নজর দেয়নি রাজ্য? তবে কী ভোট বড় বালাই হওয়ার কারণেই রাজ্য সরকার এখন নড়েচড়ে বসছে? সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারকে আরও একটি বিষয় ভাবাচ্ছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটারদের একটা বড় অংশ ভোট দিতে পারেননি বলে অভিযোগ ওঠে। তার ফল ভুগতে হয়েছিল লোকসভা নির্বাচনে। এক ধাক্কায় তৃণমূলের আসন ২২-এ নেমে গিয়েছিল। সেই জায়গা থেকে মানুষ যাতে পরিষেবা-সহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে তৃণমূলের উপর ক্ষুব্ধ না হয়ে ওঠেন সেই লক্ষ্যে দুয়ারে সরকারের সময়সীমা বাড়ানো হল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এর ফল ভোটবাক্সে মিলবে বলে আশা করছে শাসক দল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *