নিজের ক্যারিশমাকে সামনে আনতেই পরীক্ষা ইস্যুতে সোনিয়ার ভার্চুয়াল বৈঠক

নিজের ক্যারিশমাকে সামনে আনতেই পরীক্ষা ইস্যুতে সোনিয়ার ভার্চুয়াল বৈঠক

93de9a30c4dad5ba97401afd2e0492dd

তপন মল্লিক চৌধুরী: মুর্শিদাবাদের লালগোলায় ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে কংগ্রেস প্রার্থীর সমর্থনে যৌথ প্রচারসভায়  প্রথম এক মঞ্চে উপস্থিত হয়েছিলেন সোনিয়া গান্ধী আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  তখন পশ্চিমবঙ্গে বাম জমানা। রাজ্যে স্বৈরতন্ত্র চলছে, অত্যাচারিত হচ্ছেন কৃষকরা, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গ তুলে একমঞ্চ থেকে সিপিএমের বিরোধিতা করেছিলেন এআইসিসি সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী এবং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেস এবং তৃণমূলের নির্বাচনী জোট ঘোষণার পর সেই প্রথম এক প্রচার মঞ্চে দেখা যায় সোনিয়া এবং মমতাকে৷

তারপর বিজেপি বিরোধিতা নিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। চলতি বছরের একেবারে গোঁড়ায় সিএএ নিয়ে মোদী-শাহের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জন্য সোনিয়া গান্ধীর ডাকা বৈঠকে হাজির থাকার কথা জানিয়েও নিজে তো যোগ দেবেনই না, দলের কোনও নেতাকেও পাঠাবেন না বলে জানিয়েছিলেন মমতা। কংগ্রেস ও সিপিএমের আচরণে ক্রুদ্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী বৈঠক বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেন।

এরপর আজ ফের করোনা আবহে নিট ও জেইই পরীক্ষা স্থগিতের দাবিতে অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকের আহ্বান জানালেন সোনিয়া গান্ধী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা পরিস্থিতিতে দুটি সর্বভারতীয় পরীক্ষা হলে ছাত্র-ছাত্রীদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে যাবে। তাই পরীক্ষাগুলি স্থগিত করা হোক, ইতিমধ্যেই এই দাবিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দুটি চিঠি দিয়েছেন মমতা। এই দাবি আরও জোরাল করতে বুধবার দুপুরে অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন সোনিয়া ও মমতা।

কেবলমাত্র নিট ও জেইই পরীক্ষা স্থগিতই ইস্যু নয় বৈঠকের। দেশের যুক্তরাষ্ট্র কাঠামোকে অক্ষুণ্ণ রাখাকেও অ্যাজেন্ডা রাখা হয়েছে বৈঠকে। সংসদে বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরুর আগে বিরোধীদের এই বৈঠক অত্যন্ত তাত্পের্যপূর্ণ। কারণ, সাম্প্রতিককালে বিরোধী ঐক্য ভীষণ ভাবে ধাক্কা খেয়েছে সংসদে কয়েকটি বিল পাশের সময়। বিরোধীদের মধ্যে অনৈক্যে সেই বিলগুলি নির্বিঘ্নে পাশ করাতে পেরেছে কেন্দ্র৷

অতএব আজকের বৈঠক বিরোধীদের একজোট করে এগনোর ব্যাপারে সোনিয়া গান্ধির ক্যারিশমাকে সামনে আনা। পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী হলেও কেন্দ্রে কংগ্রেস ও তৃণমূলকে কাছাকাছি এনে কেন্দ্রে বিজেপি-র বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াইয়ের বার্তা দিতেই আজকের বৈঠক। আর সে কারণেই সব অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷

দলের ২৩ জন নেতা তাঁকে চিঠি লিখেছেন। কংগ্রেসের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ওয়ার্কিং কমিটির একটানা সাত ঘন্টার মিটিং শেষে ফের গোলাম নবী আজাদের বাড়িতে আলাদা করে গোপন বৈঠক বসেছে- বোঝাই যাচ্ছে কংগ্রেসের অন্দরমহলে বিদ্রোহের ছাই চাপা আঁচ রয়েছে। এই অবস্থায় সোনিয়া গান্ধীকে কেন্দ্রের সামনে বিরোধী ঐক্য প্রকট করতে তৎপর হতেই হবে। এদিকে, ২৭ অগাস্ট জিএসটি পরিষদের বৈঠক। তার আগে নীতি নির্ধারণে তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধি। বাংলা, ঝাড়খণ্ড ও মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীকে সেই বৈঠকের আগে ক্ষতিপূরণ আদায়ে গঠনমূলক  ভূমিকা নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।  বুধবার এই তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকও করবেন সোনিয়া গান্ধী। পাশাপাশি অ-বিজেপি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে একটা যৌথ মঞ্চ তৈরি করে কেন্দ্রের ওপর চাপ বাড়াতেই এই কৌশল নিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী।

সোনিয়া গান্ধী চাইছিলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই বৈঠক হোক। এমন বৈঠকের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে মমতা প্রস্তাব দেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ছাত্র-ছাত্রীদের উপরে নিট এবং জেইই চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদকে আলোচ্য করা হোক। সেই প্রস্তাবই মেনে নিয়েছেন সোনিয়া। যদিও ইতিমধ্যে পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট যে অভিমত দিয়েছে, তা পুনর্বিবেচনার জন্য সর্বোচ্চ আদালতে কেন্দ্রের তরফে আবেদনের আর্জি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও ফের চিঠি দিয়েছেন মমতা।

সোনিয়া গান্ধীর প্রস্তাব ছিল, দেশের অর্থনীতির সঙ্কট এবং রাজ্যগুলির আর্থিক দাবি-দাওয়ার বিষয়ে বৈঠক হোক। কেন্দ্রের কাছে বাংলার পাওনার বিষয়ে ইতিমধ্যে একাধিক বার সরব হয়েছেন মমতাও। কিন্তু সোনিয়া গান্ধীর প্রস্তাব পেয়ে মমতা বলেন, আর্থিক দাবি-দাওয়া নিয়ে বৈঠক করতে হলে কিছু সময় লাগে। হিসেব-নিকেশের খতিয়ান তৈরি করতে হয়। কিন্তু সোনিয়া দেরি করতে চাইছিলেন না।  সব দিক বিবেচনা করে মমতা প্রস্তাব দেন, তার চেয়ে তাঁদের বৈঠক হোক নিট-জেইই নিয়ে। এটাই এখন জ্বলন্ত সমস্যা। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে ওই পরীক্ষা ধার্য হওয়ায় লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী বিপন্ন, তাঁদের পরিবারও অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগে ভুগছে। সোনিয়া গান্ধীর এই মুহুর্তে রাজি না হয়ে কোনও উপায় ছিল না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *