কলকাতা: সিঙ্গুরের ‘মাস্টারমশাই’ আর দেখতে পারছেন না। তিনি তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে দিতে চান। অন্যদিকে, নন্দীগ্রামের অন্যতম প্রধান সেনাপতি আজ যেন চরম রহস্যময়। তার অবস্থান কোথায়? ঠহর করে উঠতে পারছে না তৃণমূল।
১০ নভেম্বর, মঙ্গলবার, তৃণমূলের নন্দীগ্রাম দিবস। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয় নিয়ে টুইটও করেছেন। এই দিনেই একটি ‘অরাজনৈতিক সভা’ করে জল্পনা বাড়িয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নন্দীগ্রাম আন্দোলনের প্রধান সেনাপতি শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রাম দিবসের এমন সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা তৃণমূল কংগ্রেসের নাম নেই – এ কেমন সভা।
অন্যদিকে, সিঙ্গুর আন্দোলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অগ্রণী সেনা রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য তৃণমূলকে চাপে রাখছে। তৃণমূলের জেলা কমিটি নিয়ে চারিদিকে বিক্ষোভ চলছে। হুগলির বিক্ষোভ প্রকাশ্যে। সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা কমিটি পাঠ করে উঠতে পারেননি। তার আগেই তাকে বন্ধ করতে হয়। ঝামেলা শেষ হয়নি। যেদিন আবার জেলা কমিটির অপ্রকাশিত তালিকা পাঠ শুরু হল, সেই দিনই মাস্টারমশাই তৃণমূল ত্যাগ এর হুমকি দিয়েছেন।
মহাগুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা নির্বাচনের বাকি প্রায় ৬ মাস। মমতার সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের দুই সেনা যেন নিজের অবস্থানে নেই। ২০০৮ সালের ১০ নভেম্বর নন্দীগ্রাম দখল করতে ‘অপারেশন সান সাইনের’ কথা প্রথম বলে সিপিএম। ওই দিনটিকে নন্দীগ্রাম দিবস হিসেবে পালন করে তৃনমূল। কিন্তু এই নন্দীগ্রাম দিবসে নন্দীগ্রামের সেনাপতি শুভেন্দু অধিকারী কি আদৌ তৃণমূলে থাকবেন কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে গিয়েছে। আবার সিঙ্গুরের, মাস্টারমশাই তো সাফ দল ছাড়ার কথা বলেছেন। ঘাসফুল শিবিরে উভয় সংকট।
শোভন চট্টোপাধ্যায় যা করেছেন, শুভেন্দু অধিকারী কী তা করবেন। রাজ্য রাজনীতিতে এখন এ প্রশ্নের চতুর্দিকে আনাগোনা। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতা ছিলেন শোভন। নেত্রীর সঙ্গে মনমালিন্য। তারপর, দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন। রীতিমত সাড়ম্বরে তাকে বিজেপিতে বরণ করে নেওয়া হল। কিন্তু শোভন যা চেয়েছিলেন তা হয়তো পাননি। সেক্ষেত্রে, বিজেপিতে কার্যকরী ভূমিকায় দেখাও যায়নি শোভনকে। শুভেন্দু যদি তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে দেন, তাহলে তিনি বিজেপিতে যোগ দেবেন, তার নিশ্চয়তা কোথায়? বিজেপিতে যোগ দিয়েই শীর্ষ নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন শুভেন্দু, এমন সম্ভাবনা নেই। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের অধীনেই তাকে কাজ করতে হবে। একটি ‘রেজিমেন্টেড পার্টিতে’ নিয়মের বেড়ায় আটকে যেতে পারেন তিনি। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন সূত্র থেকে যা জানা যাচ্ছে, বিজেপির দিকে আদৌ ঝুঁকে নেই তিনি। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, শুভেন্দু অধিকারী কি নিজেই রাজনৈতিক দল তৈরি করবেন?