রাজ্য-রাজনীতিতে শুভেন্দুকে নিয়ে জল্পনা, তবুও কেন মুখ খুলছেন না তিনি?

রাজ্য-রাজনীতিতে শুভেন্দুকে নিয়ে জল্পনা, তবুও কেন মুখ খুলছেন না তিনি?

a567c99321b8cc986b01dfeca0c308e5

তপন মল্লিক চৌধুরী : শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল আজ থেকে তিব বছর আগে। তখন পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর প্রশংসা করে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন জল্পনা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে তৃণমূল কংগ্রেসে সব থেকে যোগ্য নেতা শুভেন্দু। তৃণমূল দলে ওঁর থেকে ভাল কোনও নেতা নেই। নন্দীগ্রাম আন্দোলনে শুভেন্দু অধিকারীর ভূমিকা অস্বীকার করা যাবে না।

এ কথা ঠিক যে, তৃণমূলের কারও যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ছাড়া নিজের জোরে নির্বাচনে জিতে আসার ক্ষমতা থাকে, তাহলে তিনি শুভেন্দু অধিকারী। কেবল তাই নয়, সে চ্যালেঞ্জ শুভেন্দু বিজেপিতে গিয়েও নিতে পারেন। সারদা কাণ্ডে যখন সিবিআই খুব তৎপর হয়েছিল, তখনও শুভেন্দু দল ছাড়ছেন বলে গুঞ্জন উঠেছিল। তারপর রাজ্য রাজনীতি এ মোড় ও মোড় ঘুরে অনেক রাস্তা পেরিয়ে এসেছে। অবশ্য শুভেন্দুকে যে কোনও সময়ে দলে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত বিজেপি। শুভেন্দুর জনভিত্তি রয়েছে। লড়াকু নেতা বলেই পরিচিত। এমন নেতাকে দলে নিলে মমতাকে বড় ধাক্কা দিতে পারবে বিজেপি।

পূর্ব মেদিনীপুরে কাঁথির অধিকারী পরিবারের একচ্ছত্র আধিপত্য থাকলেও মমতা সুকৌশলে একটি শুভেন্দু-বিরোধী শিবিরকেও তৈরি রেখেছেন। ফলে শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দিলেই যে শুভেন্দুর দৌলতে, পূর্ব মেদিনীপুরের পুরো অংশই বিজেপির শক্ত ঘাঁটি হয়ে যাবে, এমনটা নাও ঘটতে পারে। যদিও কাঁথিতে বিরোধী ভোট বিজেপির ঝুলিতে আসায় সেখানে গেরুয়া শিবিরের ভোট বেড়েছে।

তাছাড়া শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দিলে কি তাঁর এলাকার বাইরের নেতা-কর্মীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছেড়ে তাঁর সঙ্গে আসবেন, তা কিন্তু নয়। তবে শুভেন্দুকে দলের যুব সংগঠনের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে সেখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্ব বাড়ানো ও পরে যুব সংগঠনের সভাপতি করার পর থেকে একটি ক্ষত ছিল শুভেন্দুর মনে। যদিও নেত্রী মমতা সেই ক্ষতে প্রলেপ দিয়েছেন নিজের মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবহণ দফতরের দায়িত্ব দিয়ে। তা স্বত্বেও পরিস্থিতি ঘোলাটে।

বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি যোগ দিচ্ছেন না দলীয় কোনও কর্মসূচিতে। পাশাপাশি তাঁর অনুগামীরা জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এইসব নানা কারণে তাঁর বিজেপি-যোগ নিয়ে জল্পনা থামছে না। অন্যদিকে শুভেন্দুও একেবারে চুপ। তবে তিনি প্রতিদিনই নিজের মতো করে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। সামাজিক কাজ করছেন, হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন সাহায্যের। মন্ত্রী হিসেবে দফতরের কাজও সামলাচ্ছেন। আর তাতেই জল্পনা বাড়ছে।

দলের কাজে তাঁর এই এড়িয়ে যাওয়া চলছে রাজ্য কমিটি গঠনের সময় থেকেই। এই কমিটিতে তাঁকে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে তাঁর অনুগামীদের অভিযোগ। তারপর তিনি সমন্বয় কমিটির বৈঠকেও গরহাজির থেকেছেন। তিনটি ক্যাবিনেট বৈঠকেও তিনি হাজির হননি। বৈঠক এড়ালেই বিজেপি-যোগের জল্পনা যদিও ক্যাবিনেট বৈঠকে না যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের তরফে। ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর পরিবারের অনেক সদস্য করোনা আক্রান্ত। সেই কারণেই তিনি ক্যাবিনেট বৈঠকে যাননি। কিন্তু তারপরও জল্পনা ঠেকিয়ে রাখা যাচ্ছে না।

শুভেন্দু কোনও কারণে তৃণমূল বা রাজ্যের বৈঠক এড়ালেই বিজেপি-যোগের জল্পনা শুরু হয়ে যাচ্ছে। তবু থামেনি শুভেন্দুকে নিয়ে জল্পনার ঘনঘটা এক্ষেত্রে অতি সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, তাঁর নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমাদের দলে একজনই নেত্রী, বাকি সবাই সৈনিক। তা আবার তৃণমূল মুখপাত্র দেবাংশুর ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়। তারপরও থামেনি জল্পনার ঘনঘটা।

রাজনৈতিক মহলের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, কেন শুভেন্দু মুখ খুলছেন না? কেন কোনও উত্তর দিচ্ছে না সর্বসমক্ষে। তাঁর নীরবতা জল্পনাকে আরও দ্বিগুণ করে দিচ্ছে। সম্প্রতি জল্পনার পারদ এমন জায়গায় চলে গিয়েছিল যে, শুভেন্দুকে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে কিছু মিডিয়া বিজেপিতে যোগদান করিয়ে দিয়েছিল। তারপরই শুভেন্দু আইনটি নোটিস ধরান একাংশ সংবাদমাধ্যমকে। তারপর ফের বাড়ছে রটনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *