‘দাদা’ পাগড়ি পড়েছেন, গেরুয়া রঙও দিয়েছেন! এখন শুধু পতাকা নেওয়ার অপেক্ষা?

‘দাদা’ পাগড়ি পড়েছেন, গেরুয়া রঙও দিয়েছেন! এখন শুধু পতাকা নেওয়ার অপেক্ষা?

তপন মল্লিক চৌধুরী : নন্দীগ্রাম আন্দোলনের মুখ শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব বেড়েছে বহুদিন। তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে চর্চাও হচ্ছে বেশ কিছুকাল।নানা সময়ে শুভেন্দুর আচরণ এবং মন্তব্য ঘিরে গুঞ্জন উঠেছে শুভেন্দু অধিকারী ঘাস ফুল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে যাচ্ছেন।

তবে কয়েকদিন তাঁকে ঘিরে জল্পনা একটু থিতিয়ে ছিল। তবে আলোচনা থামে নি তৃণমূল অন্দরে। কার বাইরের গুঞ্জন তৃণমূল শিবিরেবহুদিন ধরেই কোন্দলে পরিণত হয়েছিল। এখন তা কার্যত প্রকাশ্যে জায়গা পাচ্ছে। তার জেরেই ফের বঙ্গ রাজনীতিতে শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে জল্পনা মাথা চারা দিয়ে উঠেছে, শুভেন্দুবিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন।

ঘটনার প্রেক্ষাপট অবশ্য তৈরি করেছেন দাদা ও তার অনুগামীরা।গত কয়েকদিন ধরেই দাদা একাধিক সভা করেছেন‘আমরা দাদার অনুগামী’ব্যানার সমেত। সেই সভাগুলির আশপাশে কোথাও তৃণমূল দলের কোনও পতাকা বা প্রতীক চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায় নি, দাদা ভুল করেও একবার তৃণমূল নেত্রীর নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করেন নি। করোনার ভয়ংকর সময়েও এ ধরনের সভা পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়হয়েছিল।

সম্প্রতি ওই জল্পনায় আরও ঘি ঢেলেছে রাজস্থানি পাগড়ি মাথায় শুভেন্দু অধিকারীর ছবি দেওয়া বিজয়া সম্মিলনীর আমন্ত্রণপত্র। দুর্গোৎসবেরপর বিজয়া সম্মিলনীর মধ্যে দিয়ে জনসংযোগ বাড়াতে ময়দানে নেমেছেন রাজনৈতিক নেতারা। নিজেকে পিছিয়ে রাখেন নি শুভেন্দু। আগামী ৭ নভেম্বর পুরুলিয়ায় শুভেন্দু অনুগামীদের ছড়িয়ে দেওয়া সেই আমন্ত্রণপত্রে গেরুয়া রংযেমন চোখে পড়ছে তেমনইরাজস্থানি পাগড়ি মাথায় শুভেন্দু অধিকারীর ছবি।

তবে শুধুমাত্র পুরুলিয়া নয়, মেদিনীপুরেও শুভেন্দুর অনুগামীরা তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় আড়ালে রেখে বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করেছিল।যেখানে ত্রিণমূল বা কোনও দলেরই উল্লেখ থাকছে না। যদিও পুরুলিয়ার অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা, জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক গৌতম রায় বলেছেন, দাদার ফ্যান ক্লাবের সদস্যেরা এই আয়োজন করেছেন। এই ব্যানার বিভিন্ন ব্লকেও লাগানো হচ্ছে।

লক্ষ্যনীয় শুভেন্দু বা তাঁর অনুগামীদের কার্যকলাপ নিয়ে এখনও কোনও টু-শব্দ করেননি তৃণমূল নেত্রী। তবে অধিকারী গড়ে এসে শুভেন্দুকে কটাক্ষ করতে ছাড়লেন তৃণমূলের ক্ষমতাশালী মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। দীঘাতে ফিরহাদ সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ‘পথ ভাবে আমি দেব, রথ ভাবে আমি, মূর্তি ভাবে আমি দেব হাসে অন্তর্যামী- রবীন্দ্র-কবিতার এই পংতিগুলি বলে স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছেন যে,তৃণমূলে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই শেষ কথা, তাঁর ওপরে আর কেউ নন।ফিরহাদের মন্তব্যের পালটা জবাবে শুভেন্দু কারও নাম না উচ্চারণ করেই বলেন,‘প্যারাস্যুটে নামিনি। লিফটে উঠিনি। সিঁড়ি ভেঙে উঠেছি। ছোটলোকদের নিয়ে কথা বললে আমি তার উত্তর দিই না। আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি, কেউ কেউ অতীত ভুলে যায়’।নন্দীগ্রামের জনসভা থেকে শুভেন্দুর এই মন্তব্য কার্যত হুংকার। এরপর তৃণমূল শিবিরে কার্যত আবার জোর সংঘাত তৈরি হয় শুভেন্দুকে নিয়ে।

রাজনীতিকরা বলছেন, নন্দীগ্রাম গণ আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যতে ক্ষমতায় এসেছিল। সেই আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। পূর্ব মেদিনীপুরের জমিতে দাড়িয়ে শুভেন্দু অধিকারীকে খাটো করা বা তাকে কটাক্ষ করাতৃণমূল দলের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতির।লক্ষ্যনীয় শুভেন্দু নিজের দলের নেতা ও মন্ত্রীকে ‘ছোটলোক’ বলছেন। এ কথা ঠিক যে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়তৃণমূল শিবিরে বড় ফাটল ধরেছে। আর এ কথাও স্পষ্ট যে সেই জেলায়শুভেন্দু অধিকারীর গ্রহণযোগ্যতা বা জনসমর্থন নিয়ে কারও কোনও প্রশ্ন নেই। কেবল তাই নয় বাংলার রাজনীতিতে বিশেষত তৃনমূলে অধিকারী পরিবারের ভূমিকা আছে।

এ ধরনেরঘোরালো পরিস্থিতিতে জল্পনা বাড়িয়ে দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি ফিরহাদ হাকিমের নাম না করেইবলেন, ওরাই ওকে বিজেপিতে পাঠিয়ে দেবেন।কেবল দিলীপ ঘোষ নন শুভেন্দুকে সরাসরি বিজেপিতে আহ্বান জানিয়েছেনপ্রাক্তন সতীর্থ সৌমিত্র খা। পরপর এই সব ঘটনা থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে ফের শুভেন্দুর সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক নিয়ে চর্চা তুঙ্গে উঠেছে। তাছাড় তৃণমূলে গুরুত্ব না পেয়ে শুভেন্দু অনেকদিন ধরেই বিভিন্ন জেলায় সমান্তরাল জনসংযোগ চালাচ্ছেন। শুধু পূর্ব মেদিনীপুর নয়, নিজের জেলা ছাড়িয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রামেও শুভেন্দু অনুগামীরা সক্রিয়। দাদার সমর্থনে অনুগামীরা কাজ করছেন মুর্শিদাবাদ ও দক্ষিণ দিনাজপুরেও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 − 10 =