দুই কেন্দ্রে অদৃশ্য প্রার্থী শুভেন্দুই, ফেল করলে শেষ রাজনৈতিক কেরিয়ার!

নিজস্ব প্রতিনিধি:  ষষ্ঠ দফায় শনিবার বাংলায় যে আটটি কেন্দ্রে নির্বাচন হবে তার মধ্যে রাজনৈতিক মহলের বিশেষ নজর থাকবে কাঁথি ও তমলুক লোকসভার দিকে। পূর্ব মেদিনীপুরের…

Shubhendu Adhikari শুভেন্দু

নিজস্ব প্রতিনিধি:  ষষ্ঠ দফায় শনিবার বাংলায় যে আটটি কেন্দ্রে নির্বাচন হবে তার মধ্যে রাজনৈতিক মহলের বিশেষ নজর থাকবে কাঁথি ও তমলুক লোকসভার দিকে। পূর্ব মেদিনীপুরের এই দুটি আসনে বিজেপিকে জেতাতে জান লড়িয়ে দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

নিজের জেলায় এই দুটি আসনে হার মানে সেটা শুভেন্দুর পরাজয় ছাড়া আর কিছুই নয়। সেটা ভাল করেই বোঝেন তিনি। এই দুটি কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী শুভেন্দুর ভাই সৌমেন্দু অধিকারী এবং প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। কিন্তু দুটি কেন্দ্রেই যে অদৃশ্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন শুভেন্দুই, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই হোমগ্রাউন্ডের এই ম্যাচে ‘মন্ত্রের সাধন নয়ত শরীর পাতন’ ভঙ্গিতেই নিজেকে নিংড়ে দিয়েছেন তিনি।

শুভেন্দু ভাল করেই জানেন তমলুক এবং কাঁথিতে জিততে না পারলে তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারে বড় ধাক্কা লাগবে। এমনকী রাজনৈতিক কেরিয়ার শেষ হয়ে যেতেও পারে। এই দুটি কেন্দ্র ছাড়াও ঘাটাল কেন্দ্রটিও শুভেন্দুর কাছে প্রেস্টিজ ফাইট হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে। সেখানে বিজেপি প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায় হলেও লড়াইয়ের মুখ কিন্তু শুভেন্দুই।

ঘটনা হল এবার বিজেপি প্রার্থীদের বড় অংশকে শুভেন্দুর আবেদনের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত করেছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, বিজেপি সূত্রে এ তথ্য জানা গিয়েছে। রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি তথা দলের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ দিলীপ ঘোষের কেন্দ্র বদলের ক্ষেত্রেও নাকি শুভেন্দুর হাত রয়েছে বলে বিজেপির অন্দরে কান পাতলেই শোনা যায়। যে বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যেই কারও নাম না করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন দিলীপ।

বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে রেখা পাত্রের মতো এক গ্রামবাসীকে প্রার্থী করার পিছনেও শুভেন্দুর তৎপরতা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এর পাশাপাশি তমলুকে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, মেদিনীপুর কেন্দ্রে অগ্নিমিত্রা পাল, ব্যারাকপুরে অর্জুন সিং, কলকাতা উত্তরে তাপস রায়, ঘাটালে অভিনেতা হিরণ চট্টোপাধ্যায়-সহ অনেকেই লোকসভায় প্রার্থী হয়েছেন শুভেন্দুর সুপারিশে, এমনটাই খবর। তাই এটা স্পষ্ট শুভেন্দু নিজের ইচ্ছাতেই এই প্রবল চাপ নিয়ে ফেলেছেন।

স্বাভাবিকভাবেই তাঁর সুপারিশে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাঁদের জিতিয়ে আনার মূল দায়িত্ব তো তাঁকেই নিতে হবে। সেটা না হলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে মুখ পুড়বে বিরোধী দলনেতার। অর্থাৎ ফলাফল খারাপ হলে এক দিকে রাজ্য বিজেপির বিরোধী গোষ্ঠীর কাছে ‘ফেসলস’ হবে, অন্যদিকে শুভেন্দুর এমন ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেওয়ার জন্য তৈরি থাকবেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বলাবাহুল্য এটা একটা পাহাড় প্রমাণ চাপ। সেই চাপ নিতে হয়েছে শুভেন্দুকে।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে তবে কী শুভেন্দু নিজের দায়িত্ব ও ফলাফল নিয়ে এতটাই নিশ্চিত যে এত বড় চাপ নিয়ে ফেলেছেন? তিনি ভাল করেই জানেন ফলাফল খারাপ হলে তার সিংহভাগ দায় তাঁকেই নিতে হবে। এরপরেও সেই চাপ নিয়েছেন তিনি। সেই সূত্রে এটাও স্পষ্ট যে বাংলায় বিজেপির ফল গতবারের থেকে ভাল হলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে আরও কাছের মানুষ হয়ে উঠবেন শুভেন্দু। তবে শুভেন্দুর সবচেয়ে বড় পরীক্ষা তমলুক এবং কাঁথিতে। এখানে শুভেন্দু বাজিমাত করতে পারলে তৃণমূল কিন্তু মুখ লুকনোর জায়গা পাবে না।

কারণ নন্দীগ্রামের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের দুটি আসনেই তৃণমূল হারলে অনেক প্রশ্ন কিন্তু উঠে যাবে। সদ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচারে গিয়ে বলেছেন গত বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে হারের বদলা এবার ভোটবাক্সে নিতে হবে। উল্লেখ্য তমলুক লোকসভার মধ্যেই পড়ছে নন্দীগ্রাম কেন্দ্র।

তাই তমলুকে জিততে পারলে তৃণমূল কিন্তু অনেক কিছুই বলার সুযোগ পেয়ে যাবে। সবমিলিয়ে শনিবার কার্যত অগ্নিপরীক্ষায় নামছেন শুভেন্দু। নিশ্চিত ভাবে তৃণমূলের চেয়ে অনেক বেশি চাপ রয়েছে তাঁর উপর। পূর্ব মেদিনীপুরের এই দুটি আসনেই গতবার জিতেছিল তৃণমূল। তাই এবার সেখানে নিঃশব্দ বিপ্লব হয় কিনা সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *