কলকাতা: তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি৷ আবার সেই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়ার জল্পনা৷ মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে ভাইফোঁটা, রাজ্য সরকার আয়োজিত চলচ্চিত্র উৎসবের অতিথি তালিকায় উঠে আসা, এসএমএস ফাঁস, বিকাশ ভবনে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক, ধারাবাহিক এই ঘটনায় বিতর্ক পিছু ছাড়েনি শোভন-বৈশাখীকে৷ এবার সেই বিতর্কে আরও বাড়াল শোভন-বৈশাখীর বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ!
বেশ কিছুদিন ধরেই শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কেন্দ্রীয় নেতা তথা পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন৷ দিন তিনেক তিনি একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছেন৷ শুক্রবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিকাশ ভবনে বৈঠকের পর শনিবার বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা অরবিন্দ মেননের সঙ্গে দেখা করে করলেন শোভন-বৈশাখী৷ শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁরা হাসপাতালে পৌঁছে যান৷ সেখানে দীর্ঘক্ষন কথা বলেন৷ ঘণ্টাখানিক পর ফিরে যান শোভন-বৈশাখী৷
সংবাদমাধ্যমে মুখোমুখি হয়ে শোভনবাবু জানিয়েছেন, এটা কোনও রাজনৈতিক আলোচনার বিষয় নয়৷ সৌজন্য সাক্ষাৎ কাটছিল৷ বৈশাখী দেবীর দাবি, অরবিন্দজি একদিনের জন্য হলেও বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন৷ তাঁর সঙ্গে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে৷ ফলে সৌজন্যতার খাতিরেই হাসপাতালে এসে দেখা করে গেলাম৷
অন্যদিকে, ভাইফোঁটায় মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে হাজিরা, চলচ্চিত্র উৎসবে অতিথিদের আসনে তাঁদের উপস্থিতি বাংলার রাজনীতে নয়া বিতর্ক তৈরি করেছিল৷ পুরনো বিতর্ক ভুলে ধীরে ধীরে তৃণমূলের ঘরে ফেরার রাস্তা তৈরি হচ্ছিল শোভন-বৈশাখীর৷ কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতন৷ শোভন-বৈশাখী দলে ফেরার বাঁধা কি রত্না? শুক্রবার বিকাশ ভবনে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বৈশাখীর বৈঠক শুরু নয়া চর্চা৷ শোভন-রত্মার এসএমএস ঘিরেও তুঙ্গে জল্পনা৷
সূত্রের খবর বিকাশ ভবনে বৈশাখী দেবী শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কলেজ সংক্রান্ত বিষয়ে আলাপ আলোচনার পাশাপাশি কথায় কথায় উঠে আসে শোভন-রত্নার প্রসঙ্গ৷ সূত্রের খবর, শিক্ষামন্ত্রীকে রত্না বলেন, রত্না ইস্যু সামনে রেখে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়৷ তৃণমূলে ফেরা শোভনের পথে বাধা আসছে৷ রত্মা যে ভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, তা ঠিক নয়৷ রত্না থাকলে তৃণমূলে থাকা সম্ভব নয় শোভনের৷ সূত্রের খবর, এরপরই তৃণমূল মহাসচিব বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন৷
বৈঠক শেষে বৈশাখীদেবী সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, রাজনীতি তাঁর ধমনিতে বইছে৷ কলকাতা পুরসভাকে তিনি হাতের তালুর মতো চেনেন৷ এই অবস্থায় উনি কলকাতা কর্পোরেশনের ভোটের আগে কী করবেন, তার কী ভাবনা-চিন্তা? আগামী দিনে তাঁকে দেখা যাবে কি যাবে না, আমার মনে হয় একটু ধৈর্য ধরুন৷ দেখতে পাবেন৷’’
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘বৈশাখীদেবী চিঠি দিয়েছিলেন তাঁর কলেজের সমস্যা নিয়ে৷ শিক্ষা দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন৷ গভর্নিং বডি ঠিকমত চলছে না বলে অভিযোগ করেছেন৷ আমাদের দপ্তরের তরফে ওই অচলাবস্থা দূর করা যায়, তার দিকে আমরা লক্ষ্য রাখব৷’’ শোভন প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘দেখুন, কে কোন দলে আসবে আমিতো মন্ত্রী হিসেবে বলতে পারি না৷ আমিতো সংগঠন চালাই না৷’’
শোভন কবে তৃণমূলের ফিরবেন? তা নিয়ে জল্পনা চলছেই৷ এর মধ্যে শোভন-রত্না দ্বন্দ্ব তীব্র আকার নিয়েছে৷ গত ২৯ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রী বাড়িতে গিয়ে ভাইফোঁটা নেন শোভন-বৈশাখী৷ রত্না চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, ওই দিন সন্ধ্যায় শোভন চট্টোপাধ্যায়ের মোবাইল নম্বর থেকে রত্নাদেবীকে গালিগালাজ করে একটি এসএমএস আসে৷ তা নিয়ে গত ৮ নভেম্বর পর্ণশ্রী থানায় অভিযোগ জানান রত্নাদেবী৷ মেসেজ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করলেও প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি তিনি৷ তবে, জানিয়েছেন পারিবারিক বিষয় তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রকাশ্যে আর কিছু বললেন না৷
সূত্রের খবর, এসএমএস কাণ্ডের পর শোভনবাবু ঘনিষ্ঠ মহল দাবি করেছেন, ‘‘বিবাহবিচ্ছেদের মামলা দায়ের হওয়ার পর থেকেই রত্নার নম্বর ব্লক৷ কিন্তু দুর্গাপুজোর অষ্টমীর পর থেকেই ব্লক থাকা নম্বর ম্যানুপুলেট করে হোয়াটসঅ্যাপ করা হচ্ছে৷ আমি কোনও হোয়াটসঅ্যাপ করিনি৷ এবার আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছি৷’’ আরে এই সবের কারণেই কি তৃণমূলের ফেরার বিষয়টি ঝুলে রয়েছে? প্রশ্ন তুলছেন পর্যবেক্ষক মহলের একাংশ৷