সৌমিত্র খাঁর নাটকীয় প্রত্যাবর্তন! বিজেপির অন্দরে বাড়ছে ডামাডোল

সৌমিত্র খাঁর নাটকীয় প্রত্যাবর্তন! বিজেপির অন্দরে বাড়ছে ডামাডোল

তপন মল্লিক চৌধুরী :  গত লোকসভা ভোটে এ রাজ্যে ১৮টি আসনে জয়ী হওয়ার পর থেকেই তাদের লক্ষ্য বাংলা জয়। যে কোনও মূল্যে এ রাজ্যের ক্ষমতা দখল করতে চায় বিজেপি। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করেই তারা এগতে চায়। কিন্তু নির্বাচনের কয়েক মাস আগে থেকেই বিজেপি দলে শুরু হয়ে গিয়েছে ডামাডোল। বিজেপি ছেড়ে বেশ কিছু কর্মী তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় এ রাজ্যে প্রথম ধাক্কা খায় তাঁরা। তার রেশ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই রাজ্য বিজেপি শিবিরে মুকুল রায়-দিলীপ ঘোষ-রাহুল সিনহার গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব মাথা চারা দিয়ে ওঠে। ইতিমধ্যে মুকুল রায় বিজেপিতে গুরুত্ব পাচ্ছেন না বলে তাঁর পুরনো দল তৃণমূলে ফিরছেন- বেশ কিছুদিন এই জল্পনায় বিজেপি বেশ খানিকটা চাপে ছিল। পরবর্তীতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মুকুলকেই দলের সহ-সভাপতির পদাধিকার দেয়। অন্যদিকে রাহুল সিনহা যিনি দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদকের পদে ছিলেন তিনি পদ হারানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার নিজের দল বিজেপির বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।

বিহার বিধানসভা নির্বাচনের পরই এ রাজ্যের নির্বাচনের দিনক্ষণঘোষণা করা হবে বলেই ধরে নেওয়া হয়েছে। সেই নির্বাচনের ফলাফলের মধ্যে দিয়ে যারা বাংলার ক্ষমতা দখল করতে মরিয়া, সেই দলের রাজ্য নেতৃত্ব আসন্ন নির্বাচনের ঠিক আগে জড়িয়ে পড়েছেন আভ্যন্তরীণ দলাদলিতে। বিষয়টা কেবলমাত্র এখানেই থেমে নেই। শেষ ঘটনা বিজেপির যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ ওই পদ থেকে ইস্তফা ঘোষণা করেন। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টা পরেই তিনি সেই ইস্তফা প্রত্যাহার করে নেন। ইস্তফা দেওয়া এবং কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার এই নাটকে বিজেপির অস্বস্তিকর পরিস্থিতি যে যথেষ্ট বাড়ল তা বলাই বাহুল্য। বিশেষ করে রাজ্যের বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই যারা রাজ্য দখল প্রায় করেই বসে আছেন। তারপরও রাজ্য নেতৃত্ব একের পর এক ঘটনায় দলকে বিড়ম্বনায় ফেলেই চলেছেন।

ঘটনার শুরু অবশ্য অন্য জায়গায়। বিজেপি রাজ্য দিলীপ ঘোষ শুক্রবার দুপুরে বিজেপির যুব মোর্চার জেলা কমিটিগুলি ভেঙে দিয়েছেন।বরখাস্ত করেছেন জেলা সভাপতিদের। ওই সব জেলা কমিটি এবং সভাপতি তৈরি করেছিলেনযুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। যদিও দলের নিয়মানুসারেজেলা সভাপতিদের মনোনীত করার অধিকার যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতির।কিন্তু দলের একাংশের দাবিযুব সংগঠনের জেলা সভাপতিদের মনোনীত করার আগে ওই জেলার বিজেপি সভাপতিদের সঙ্গে সৌমিত্র খাঁ কোনও আলোচনা করেন নি। কিছুদিন ধরে বিভিন্ন জেলা থেকেতাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি রাজ্য সভাপতির কাছে অভিযোগ জমছিল। এরপরই দিলীপ ঘোষ এই পদক্ষেপ করেন। আর তাতেই ক্ষুদ্ধ হয়ে সৌমিত্র খাঁ যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন।

শনিবার সকালেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ- বিজেওআইএম ওয়েস্টবেঙ্গল অফিসিয়াল-এ সৌমিত্র খাঁ লেখেন, ‘সবাই ভালো থাকবেন৷ আপনাদের অনেক সহযোগিতা পেয়েছি৷ আমার অনেক ভুল হয়ে থাকতে পারে৷ যাতে দলের অনেক ক্ষতি হচ্ছিল৷ তাই আমি ইস্তফা দিচ্ছি৷’ ওইদিন দুপুরেই ওই গ্রুপে বিষ্ণুপুর সাংসদ লিখেছিলেন, ‘ কোথাও কোনও কমিটির অদল বদল ঘটছে না৷ আমারও তোমাদেরকে ছেড়ে থাকা সম্ভব নয়৷ তাই আবার ফিরে এলাম৷ তৃণমূলকে হারানোর জন্য সব কিছু ত্যাগ করতে রাজি আছি৷’

সৌমিত্র খাঁ বিজেপিতে কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবেপরিচিতি।কিন্তুরাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ঘটনায় কৈলাস-মুকুল কেউই সৌমিত্রর হয়ে কথা বলার চেষ্টা করেন নি। আবার এটাও ঘটনা যে দিলীপ ঘোষ বিরোধী গোষ্ঠীর অনেকেও সৌমিত্ররযুব মোর্চার জেলা কমিটি গঠনের সমালোচনা করেছেন। পাশাপাশি সৌমিত্র খাঁ ইস্তফা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় দিলীপ ঘোষ জেলা কমিটি ভেঙে যে কঠিন পদক্ষেপ করেছিলেন তার বিপক্ষেও তেমন কিছু বলার থাকল না। তবে এই কাজিয়া এখানেই শেষ হয়ে যায় নি। সৌমিত্র খাঁরমনোনীত কমিটি ভেঙে দেওয়ায় তিনি যথেষ্ট ক্ষোভ উগড়েছেন। কারণ তাঁর ইচ্ছেকে অমান্য করা হল। ইস্তফা ফিরিয়ে নিয়েছেন মানেই যে তিনি এখানেই থেমে গেলেন তা কিন্তু নয়। তবে রাজ্য বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপির অন্দরে যেভাবে ডামাডোল লেগেছে তাতে রাজ্য দখলের স্বপ্নপুরণ হওয়া মুশকিল৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *