কলকাতা: সারদা কেলেঙ্কারির আর্থিক মূল্য প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা৷ ২০১৩’র ২৩ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন সুদীপ্ত সেন৷ মাত্র ছ’বছরের মধ্যেই চূড়ান্ত অর্থকষ্টে ভুগতে শুরু করেছেন সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন৷ সম্প্রতি, সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেন আদালতে জানিয়েছেন, তাঁর হয়ে মামলা লড়ার জন্য আইনজীবী নিয়োগের মতো টাকা নেই৷
গুয়াহাটির প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং আদালতে ভিডিও কনফারেন্সে সারদাকর্তা এই দাবি করেন৷ শুনানি পর্বে বিচারক সুদীপ্তকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি কেন কেনও আইনজীবী রাখেননি৷ তার জবাবেই সারদা কর্তা তাঁর টাকার অভাবের কথা জানান৷ এরপর আদালতের তরফে লিগ্যাল এইড সার্ভিসের মাধ্যমে আইনজীবী নিয়োগ করে দেয়৷
কিন্তু, বাজার থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা মেরে এখন কেন এই অর্থকষ্ট? দেখলে গেলে ফিরছে হবে বেশ কয়েক বছর আগে৷ তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পরপরই সারদার উত্থান হয়৷ আর রাজ্যে পালা বদলের পর সারদার আঙুল ফুলে ওঠে৷ তাঁর নানা ব্যবসায় হাজার হাজার কোটি টাকা খাটতে শুরু করে৷ বাজার থেকেও তোলা হয় টাকা৷ রাজ্য সরকারের সঙ্গে সারদা কর্তার দারুণ দহরম মহরম ছিল বলেও শোনা যায়৷ রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য প্রকল্পে তাঁর বিরাট বিনিয়োগ ছিল বলে অনেকেই বলে থাকেন৷ তাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যের অন্য অনেক মন্ত্রীর সঙ্গে দারুণ খাতির ছিল, তা একাধিক সময়ে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে৷
নবান্নের গেটে তাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী দাঁড়িয়ে সবুজ পতাকা নেড়ে জঙ্গলমহলে অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবার উদ্বোধন করছেন৷ কালিম্পঙের ডেলো বাংলোতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সারদা কর্তার বৈঠক হয় বলে এনেকেই দাবি করেন৷ চারিদিকে সুদীপ্তর বিপুল টাকা পয়সা নিয়ে নানা গল্প ও কল্প কাহিনি ছড়িয়ে পড়ছে৷ কেউ বলেন, তাঁর দক্ষিণ আফ্রিকায় অভ্রের খনি ছিল, কেউ বলেন, তাঁর দেশ বিদেশে নানা বড়বড় সব ব্যবসা৷ এই রাজ্যে তিনি একাধারে একাধিক সংবাদমাধ্যমের মালিকও তিনি৷ বাংলা, ইংরেজি পত্রিকা থেকে শুরু করে একাধিক টিভি চ্যানেল তাঁরই মালিকানায়৷ রাজ্যের অনেক মন্ত্রী তাঁর নামেই দিয়ে উঠতেন প্রশংসা৷ তারপর ২০১৩ সালে পট পরিবর্তন৷ জম্মু থেকে গ্রেপ্তার৷ সারদাকর্তার গ্রেপ্তারির পর মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘আমি তো কিছুই জানতাম না! তাঁরা টিভির ছেলে মেয়েদের কাঁদতে দেখে আমি খোঁজ খবর নিয়ে সব জানতে পারি৷’’
এরপর গঙ্গা দিয়ে গড়িয়েছে বহু জল৷ সুপ্রিম কোর্ট সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইকে দিয়েছে৷ তারা বলেছে, এর পিছনে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র আছে৷ তার খুঁজও শুরু হয়েছে৷ তারও পর নয়নয় করে পাঁচটি বছর কেটে গিয়েছে৷ রাজ্যের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, শাসক দলের প্রথম শ্রেণির নেতা ও সাংসদ গ্রেপ্তার হয়েছেন৷ কেউ কেউ ছাড়াও পেয়েছেন৷ কিন্তু সিবিআই এখনও তদন্ত শেষ করতে পারেনি বা করতে পারিনি৷ বৃহত্তর ষড়যন্ত্র খুঁজ চলছেই৷ সেই ২০১৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে জেল থেকে জেলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সারদাকার্তা সুদীপ্ত৷ সুদীপ্ত নানা রোগেও ভুগছেন৷ চেহারাও ভেঙেছে৷ এককালে বিপুল টাকার মালিক আজ ফকির বনে গিয়েছেন৷ তিনিই আজ আদালতে বলছেন, আইনজীবী নিয়োগের মতো টাকাও নেই তাঁর৷ ভাবতেও কষ্ট হয়!