কলকাতা: নাম না করে অনশনরত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় বার্তা দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শনিবার ২১ জুলাই শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে মমতার ঘোষণা, কেন্দ্রীয় হারে বেতন চাইলে কেন্দ্রে চলে যাও। সেখানে চাকরি করো৷
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ৷ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তাঁদের সরকার নাকি শিক্ষকদের সব থেকে বেশি সম্মান করেন৷ কিন্তু, আজ শিক্ষকরা তাঁদের দাবি নিয়ে অনশন করছেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর সময় হল না তাঁদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলার৷ আজ বললেন, কেন্দ্রের হারে বেতন চাইলে কেন্দ্রে চলে যান৷ এটাই কি শিক্ষকদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর সম্মান?’’ বলেন, ‘‘কেন্দ্রের হারে বেতন পেতে আর দিল্লি যেতে হবে না৷ এখানেই দিল্লির সরকার গঠন হবে৷ তখন বেতন কেন্দ্রের হারেয় দেওয়া হবে৷’’
তৃণমূল নেত্রীর মন্তব্যে তীব্র বিরোধিতা করেন বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী৷ এদিন মমতাকে পাল্টা আক্রমণ করে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আনতাবড়ি বকছেন৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবিটা কী, তা বুঝতেই পারেননি৷ ওঁরা একবারও বলেননি, কেন্দ্রের হারে বেতন চাই৷ ওঁদের দাবি, যোগ্য অনুযায়ী বেতন কাঠামো পরিবর্তন করা৷ অন্য রাজ্যে যে হারে শিক্ষকরা বেতন পান, তা থেকে কম বেতন পান বাংলার শিক্ষকরা৷ মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য আমরা তীব্র ভাবে বিরোধিতা করছি৷’’
২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে নাম না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখন দেখছি কাজ নেই কর্ম নেই বসে আছে রাস্তায়। সবাইকে নাকি টাকা দাও। আর কেন্দ্রীয় সরকারের সমান মাইনে দাও। আমি বলি যারা কেন্দ্রীয় সরকারের সমান মাইনে চান তারা কেন্দ্রে চলে যান। দিল্লির চাকরি করুন আমার কোন আপত্তি নেই। আমি খুশি হব। রাজ্যে করলে রাজ্যের মত কেন্দ্র করলে কেন্দ্রের মত। কেন্দ্রের একটা সিস্টেম আছে রাজ্যের একটা সিস্টেম আছে।’’ এদিন দিন পে কমিশন ইস্যুতেও মুখ খোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বলেন, ‘‘পে কমিশন রিপোর্ট দিলে যথাসাধ্য চেষ্টা কবব৷ আমরাই দেশে সব থেকে বেশি পরিমাণ ডিএ দিয়ে থাকি৷’’
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য ঘিরে আন্দোলরত শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে৷ ইতিমধ্যেই আজ গোটা রাজ্যজুড়ে গণ-অনশন করছেন প্রাথমিক শিক্ষকদের বড় অংশ৷ আজ, কোচবিহার জেলার দিনহাটা শহরের ফুলদিঘির পাশে রতন বর্মা নেতৃত্বে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা৷ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেও চলছে এই কর্মসূচি৷
শনিবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় আজ এই প্রতীকী অনশন বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা৷ আন্দোলনকারী প্রাথমিক শিক্ষক রতন বর্মা বলেন, ‘‘আমাদের দাবি দুটি৷ চাই ন্যায্যবেতন কাঠামো ও ১৪ জনের পুনরায় আগের স্কুলে বদলি৷ এই দাবিতে আমরা আজ সকাল ৬ টায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রতীকী অনশন করছি৷’’
মুর্শিদাবাদের শিক্ষক নেতা তন্ময় ঘোষ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পর জেদ আরও বেড়ে গিয়েছে৷ আন্দোলন আরও চাইছি না নায্য অধিকার চাইছি৷ আপনি দেবেন না আমরা ছিনিয়ে নেব৷ সমগ্র প্রাথমিক শিক্ষককুল আমরা বহুকষ্টে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। সামগ্রিক ঐক্য আপনাকে হারিয়ে দেবেই দেবে। আপনি একগুঁয়ে জেদী অহংকারী দাম্ভিক মহিলা জানি, কিন্তু আপনি জানেন না আমরা শিক্ষক উপযুক্ত শিক্ষা দান করি। আপনার মতো নির্বোধ ক্ষমতালোভী মহিলাকে শিক্ষা দেবার সময় এসে গেছে। অাপনি যতবার মুখ খুলবেন ততবার আপনার মুখোশ খুলে আসবে৷ আজ অনশনকারী আমার সতীর্থদের কিছু হলে শিক্ষক সমাজ আপনাকে ছেড়ে কথা বলবে না। আপনাকে বাস্তবের মাটিতে টেনে নামিয়ে আনবই আনব। সেদিন আকাশ থেকে এমনভাবে পড়বেন জীবনেও উঠে দাঁড়ানোর মতো ক্ষমতা থাকবে না৷ আমাদের বঞ্চনার যন্ত্রণাটা আপনি হারানোর মধ্যে খুঁজে পাবেন, আর সেদিন আপনার আফষোশ করা ছাড়া আর কিছুই থাকবে না৷’’