কলকাতা: ভোটের বাজারে আরএসএসের সঙ্গে কংগ্রেসের যোগাযোগ আছে প্রমাণ করুন মমতা, প্রমাণ দিতে পারবে কলকাতা উত্তর কেন্দ্র থেকে আমি আমার মনোনয়ন তুলে নেব৷ বৃহস্পতিবার সংবাদিক বৈঠক করে ঠিক এই ভাষাতেই মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ জানালেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা রাহুল সিনহা৷ আরএসএসের সঙ্গে কংগ্রেস ও তৃণমূলের যোগাযোগের অভিযোগ তুলে এদিন সিপিএমকেও আক্রমণ করেন বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি৷
বলেন, ‘‘আসলে এই বিষয়টি রটাচ্ছে সিপিএম৷ যাতে সিপিএমের ভোট বিজেপিতে না আসে৷ রাজনৈতিক সুবিধা নিতে একটি সামাজিক সংগঠনকে (পড়ুন আরএসএস) কালী লাগানোর চেষ্টা করছে৷’’ এদিন সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আক্রমণ সানিয়ে রাহুল সিনহার চ্যালেঞ্জ, ‘‘আরএসএসের সঙ্গে কংগ্রেসের যোগাযোগ আছে, এটা প্রমাণ করতে পারবেন মমতা৷ পারবেন না৷’’ আরএসএসের সঙ্গে কংগ্রেসের যোগাযোগ প্রমাণ দিতে পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন তিনি৷ একই সঙ্গে প্রথম দফার নির্বাচনে তৃণমূলের সন্ত্রাস তুলে ধরে অন্তত ১০-১৫ জন পুলিশ আধিকারিককে চাকরি থেকে বহিস্কার করার পরামর্শ দেন বিজেপি নেতা৷ তাঁর দাবি, ১০-১৫ জন পুলিশ আধিকারিককে বহিস্কার করলেই পরবর্তী নির্বাচনগুলিতে পুলিশ আর তৃণমূলের হয়ে কাজ করবে না৷’’
জঙ্গিপুরের কংগ্রেস প্রার্থী এবার আরএসএস-এর মদতে ভোটে লড়ছেন। বুধবার চোপরার সভা থেকে এভাবেই প্রণব পুত্র অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঠোকেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ২৩ এপ্রিল জঙ্গিপুরের ১৭টি বিধানসভায় লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে ১৭ জায়গাতেই সভা করবেন জেলার তৃণমূল পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এখানে দুটি সভা করবেন। তবে সবকিছুর আগে তাঁর বুধবার বক্তব্য জঙ্গিপুরের রাজনৈতিক সমীকরণকে বদলে দিতে চলেছে বলেই মনে করে ওয়াকিবহাল মহল।
বলা বাহুল্য, গত বছরই আমন্ত্রণ পেয়ে আরএসএস-এর সমাবর্তনে যান প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। এরপর থেকেই মমতার সঙ্গে প্রণববাবুর দূরত্ব শুরু। এমনিতেই অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্যের দাবিদাওয়া আদায়ে প্রণব মুখার্জির সঙ্গে তৃণমূলনেত্রীর খোটাখুটি কম বাঁধেনি। কিন্তু মিঠেকড়া সম্পর্ক তঁদের মধ্যে ছিলই। তিনি রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাইসিনা হিলে গেলেই একমুঠো এক্লেয়ার্স নিয়ে যেতেন। কিন্তু সেই প্রণব মুখার্জির নাম যখন রাষ্ট্রপতি হওয়ার দৌড়ে গেল তখন মমতার সমর্থনে নায়ের ভাগটাই বেশি ছিল। তবুও দিল্লির বাঙালিবাবুর সঙ্গে দিদির সম্পর্ক ভালোয়মন্দয় মিশিয়ে বেশ খাসাই। তবে আরএসএস-এর সভায় তাঁর উপস্থিতি নিয়ে কংগ্রেস, তৃণমূল একযোগে আক্রমণ করেছিল। কিন্তু বাবার এই সমাবর্তনে যাওয়া নিয়ে প্রথম থেকেই দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন কন্যা শর্মিষ্ঠা ও অভিজিৎ। তবে শেষরক্ষা হল না, লোকসভা ভোটে জঙ্গিপুরের কংগ্রেস প্রার্থী হয়ে অভিজিৎ আর বিজেপি ও তৃণমূল প্রার্থী দুজনেই মুসলিম। চোপরার সভা থেকে তাই শেল বিঁধতে ছাড়লেন না মমতা। কোনওভাবে অভিজিতবাবুকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ তৃণমূল তা তাঁর কথাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।