পর্ব ১
দেবময় ঘোষ: ২০০৭ সাল ১৪ মার্চ। শোনা যায় নন্দীগ্রামে গুলি চালিয়েছিলেন এই অফিসার। শনিবার তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং ফিরহাদ (ববি) হাকিম। সঙ্গে রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় এবং তৃণমূল নেতা অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র। সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় নামে ওই প্রাক্তন পুলিশকর্তা তৃণমূল কংগ্রেসে আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগদান করেছেন। এই ঘটনাটি নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। বিরোধীরা অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, নন্দীগ্রাম আন্দোলন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলার ক্ষমতায় বসিয়েছে। কিন্তু অধিকারীপাড়ায় যেসব পুলিশ অফিসার গুলি ছিলেন বলে অভিযোগ, তাদের একজন কীভাবে তৃণমূলের সদস্য হলেন?
একটু খোঁজ নিলে জানা যাবে, নন্দীগ্রামে বামফ্রন্ট সরকারের নির্দেশে যেসব অফিসার (পুলিশ এবং অন্যান্য সরকারি আমলা) গুলি চালনার ঘটনায় যুক্ত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনও প্রকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেননি মমতা। তৃণমূল কংগ্রেস ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পরেও দফতরে তাদের সম্মান অক্ষুন্ন ছিল। তাদের কারও পদোন্নতি আটকায়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। সত্যজিৎবাবুও ব্যতিক্রম নন। তার এক উজ্জ্বল কর্মজীবন রয়েছে। ৩০ বছরেরও বেশি সময় পুলিশকর্তা হিসাবে পশ্চিমবঙ্গে কাজ করেছেন। কসোভোয় রাস্ত্রসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীতে এবং পরে ওএনজিসি’তে সিনিয়র সিকিউরিটি অফিসার হিসাবে কাজ করেছেন। অবসর গ্রহণের পরেও সত্যজিৎবাবু রাজ্য সরকারের আইজিপি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৮ সালে প্রশংসা পদক এবং ২০০২ সালে ইউএন পিস মেডেলে সম্মানীত হয়েছেন তিনি।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, অধিকারীপাড়ায় গুলি চালনার ঘটনায় যে দুজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে তাদের একজন হলেন সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই সময় তিনি ছিলেন হাওড়া জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ)। পরবর্তীকালে বামফ্রন্ট সরকার না থাকলেও সত্যাজিৎবাবু একাধিক প্রমোশন পেয়েছেন। তিনি কলকাতা পুলিশের ডিসি (ই এস ডি) এবং পরে ডি আই জি পদে বসেন। পোস্টিং পান বারাকপুরে। তারপর যান মালদা রেঞ্জে। নন্দীগ্রামে গুলি চালনায় যুক্ত থাকার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি পদোন্নতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে পেয়েছেন। সেক্ষেত্রে অবসর জীবনে তার তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদানের খবরে অনেকেই তেমন অবাক নন।
অবাক না হওয়ার অন্য একটি কারণও রয়েছে। ২০১৪ সালের ২০ ডিসেম্বর সিবিআই হলদিয়ার অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় বিচারক (এসিজেএম) – এর আদালতে নন্দীগ্রামের ভাঙাবেড়া ও অধিকারীপাড়ায় গুলিচালনার তদন্ত রিপোর্ট-সহ যে চার্জশিট জমা দিয়েছিল তাতে ১৬৬ জন আন্দোলনকারীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।নন্দীগ্রামে গুলি চালনার ঘটনায় ছ’জন পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে অপরাধের সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকার কথা রিপোর্টে বলা হলেও সিবিআই আদালতে জানিয়ে দেয়, রাজ্য সরকার অনুমতি না-দেওয়ায় ওই পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা যায়নি। সেই অনুমতি পেলে অতিরিক্ত চার্জশিট পেশ করে এই সংক্রান্ত তদন্তের রিপোর্ট জানিয়ে দেওয়া হবে।
যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার নন্দীগ্রামে গুলি চালনার ঘটনায় যুক্ত অফিসারদের পদোন্নতি আটকান নি, তাদের সি বি আই-এর চার্জশিটের হাত থেকে রক্ষা করেছে, অবসর জীবনে তাদের কেউ তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেবেন সেটাই তো স্বাভাবিক।