পঞ্চায়েত ভোটের আগে 'রাস্তাশ্রী' প্রকল্প! রাজ্যের এই পদক্ষেপে কতটা ড্যামেজ কন্ট্রোল হবে?

নিজস্ব প্রতিনিধি: সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। মালদা থেকে নদিয়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা থেকে আলিপুরদুয়ার, সর্বত্র রাস্তা সংস্কারের দাবিতে সরব হয়েছেন গ্রামবাসীরা। কোথাও রাস্তা অবরোধ, কোথাও তৃণমূলের প্রতিনিধিদের ঘিরে বিক্ষোভ, বেশ কিছুদিন ধরে এমন পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে গ্রাম বাংলা জুড়ে। সকলের দাবি একটাই, অবিলম্বে বেহাল রাস্তার সংস্কার করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে বুধবার রাজ্য বাজেটে 'রাস্তাশ্রী' নামে নয়া প্রকল্পের কথা জানিয়েছে সরকার। যাতে তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তৈরি হবে ১১ হাজার কিলোমিটার রাস্তা। সেই সঙ্গে সারানো হবে পুরনো রাস্তা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এই প্রকল্পে এত টাকা বরাদ্দ করাটা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে এর মাধ্যমে কি ড্যামেজ কন্ট্রোল করা যাবে? নির্বাচন মিটে গেলে আবার আগের অবস্থা ফিরে আসবে না তো? বিগত কয়েক মাস ধরেই রাজ্যের নানা প্রান্তে বেহাল রাস্তা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ চলছে। তার কয়েকটি খণ্ডচিত্রের দিকে একটু তাকানো যাক।
উত্তর চব্বিশ পরগনার বেড়গুম-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে রাস্তা সংস্কারের দাবিতে এক পঞ্চায়েত সদস্য অভিনব প্রতিবাদ করেছেন। রাস্তা দ্রুত সারাই করতে হবে, এই দাবিকে সামনে রেখে রোদ-বৃষ্টির মধ্যেও তিনি খালি পায়ে হাঁটছেন। পরিষ্কার জামা কাপড় পরলেও পায়ে জুতো গলাচ্ছেন না। ওই পঞ্চায়েত সদস্যের নাম শঙ্কর বিশ্বাস। পঞ্চায়েত প্রধানের উপর এভাবেই চাপ বাড়িয়েছেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষ এই পদক্ষেপকে সমর্থন করছেন। এবার দ্বিতীয় ঘটনা। ঘাটাল থানার অন্তর্গত কিসমত গ্রামে ভাঙাচোরা রাস্তা পারাপার করার সময় নয়ানজুলিতে পড়ে মৃত্যু হয় এক প্রৌঢ়ের। গ্রামবাসীদের অভিযোগ আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে ওই রাস্তাটি এতটাই খারাপ সেখান দিয়ে হাঁটাচলা করা যায় না। বর্ষায় অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। আর ওই ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনার পর প্রতিবাদে সরব হয়েছেন গ্রামবাসীরা। একই অবস্থা দেখা গিয়েছে বাঁকুড়াতেও। জেলার ইন্দপুর ব্লকের রামচন্দ্রপুরের রাস্তা এতটাই খারাপ পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট বয়কটের কথা ঘোষণা করেছেন গ্রামবাসীরা। এগুলি নমুনা মাত্র। পঞ্চায়েত নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ততই রাস্তা সারানোর দাবিতে রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলন আরও বাড়ছে। তাই রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন গ্রাম বাংলায় বহুদিন ধরেই রাস্তার সমস্যা রয়েছে। তাহলে এতদিন কেন রাজ্য সরকার 'রাস্তাশ্রী' প্রকল্প রূপায়ণের প্রয়োজনীয়তার কথা ভাবেনি?
তবে কি শুধুমাত্র দোরগোড়ায় পঞ্চায়েত নির্বাচন বলেই গ্রামবাসীদের মন ভোলাতে এমন উদ্যোগ নিয়েছে নবান্ন? এই সমস্ত প্রশ্ন অবধারিত ভাবে উঠছে। মজার কথা হচ্ছে সাধারণ মানুষ কিন্তু সবটাই জানেন বা বোঝেন। তাই নির্বাচন কেন্দ্রিক প্রকল্প ঘোষণা করার পর সেটি গ্রামবাসীরা কতটা সাদরে গ্রহণ করবেন তা নিয়ে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। কারণ গ্রাম বাংলার মানুষের অতীতের অভিজ্ঞতা কিন্তু খুব একটা সুখকর নয়। যে কোনও নির্বাচনেই বিজলি-পানি-সড়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও যে তার ব্যতিক্রম হবে না সেটা স্পষ্ট। আর গ্রামবাসীরা যেভাবে রাজ্যের বিরুদ্ধে এই ইস্যুতে ক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন তাতে নিশ্চিত ভাবে বিপদের গন্ধ পেয়েছে নবান্ন। তৃণমূল বুঝতে পেরেছে এর ফল ভোটবাক্সে ভালই পড়তে পারে। তাই আর দেরি করা ঠিক হবে না বুঝেই বাজেটে 'রাস্তাশ্রী' প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রাম বাংলাকে বিশেষ বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে নবান্ন, এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এতে কতটা ড্যামেজ কন্ট্রোল হবে তা পঞ্চায়েতের ফলাফলই বলে দেবে।