বাংলায় ভোট যুদ্ধে জিততে বিজেপির জন্য ‘রাম’ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

বাংলায় ভোট যুদ্ধে জিততে বিজেপির জন্য ‘রাম’ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

দেবময় ঘোষ:  ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যজুড়ে ভগবান শ্রী রামের ‘রাজনৈতিক’ গুরুত্ব বাড়াতে ইতিমধ্যেই কাজকর্ম শুরু করেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। সপরিবারে মা দুর্গাকে মণ্ডপে মণ্ডপে দেখেই অভ্যস্ত বাঙালি। কিন্তু, আশ্বিনের দুর্গাপূজা আদতে রামচন্দ্রের ‘অকাল বোধন’। লঙ্কাপতি রাবণকে যুদ্ধে আহ্বান করার আগের ক্ষণ। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাঙালিকে তা আরেকবার মনে করিয়ে দিতে চায় গেরুয়া শিবির। মাধ্যম বিশ্ব হিন্দু পরিষদ।

বিজেপি নেতাদের কণ্ঠে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি শুনে অভস্ত বাংলার মানুষ। কিন্তু, ৩৪ বছর বাম শাসনে থাকা পশ্চিমবঙ্গ জনতার অনেকেই এখনও প্রশ্ন করেন, রাজনৈতিক দলের মুখে ধর্মীয় বাণী কেন? তবে, যারা প্রশ্ন করেন তারা ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে জবাব খুঁজে পেয়েছে। তৃণমূল নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিছু কার্যকলাপ ভোটে বিজেপিকে অযাচিত সুবিধা করে দিয়েছে। তাঁকে ঘিরে কিছু অত্যুৎসাহি জনতার ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি তিনি সহ্য করতে পারেননি। অভিযুক্তদের গ্রেফতার হতে হয়। কিন্তু, সেখানেই ঘটে যায় তৃণমূলের সর্বনাশ। আম জনতা ভাবতে শুরু করে, মমতা জোট না বিজেপি বিরোধী, তার থেকেও বেশি রাম বিরোধী। ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি যেন তার কানে ‘বিষাদের বাঁশি’র মত বেজে উঠেছে। ভোট যন্ত্রে সেই ফলও তিনি হাতেনাতে পেয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচন ছিল ধর্মীয় মেরুকরণে ভোট ভাগাভাগির প্রকৃষ্ঠ উদাহরণ। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও তা-ই চায় বিজেপি।

এটা ঠিক যে রাজ্যে সফলভাবে রামনবমী পালনের কাজ করতে পেরেছে বিজেপি। সেক্ষেত্রে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসও পিছিয়ে নেই। কিন্তু, রামায়ণের পাতা থেকে ভগবান শ্রী রামচন্দ্র কী ভাবে বাংলার রাজনীতিতে পাকাপাকি জায়গা পাবে তা স্থির করতে পারেনি বিজেপি। সেক্ষেত্রে, এখনই তা করে ফেলার সেরা সময়।

২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের মোক্ষম অস্ত্র প্রদর্শন করে জানেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নাড্ডা। দিল্লি থেকে ‘ভার্চুয়াল সভায়’ তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘Anti-Hindu Mindset’ বা ‘হিন্দু বিরোধী মনভাবের’ সমালোচনায় নেমেছিলেন তিনি। আগামী কয়েক মাসে যা গেরুয়া শিবিরের একমাত্র অস্ত্র হতে চলেছে। দিল্লি থেকে নাড্ডা সম্প্রতি বলেছিলেন, ‘‘ভোট ব্যাংকে রাজনীতি, তুষ্টিকরণের রাজনীতি এবং হিন্দু বিরোধী মনভাব হল মমতা দিদির রাজনীতি।’’ শীর্ষস্থানীয় বিজেপি নেতারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিভিন্ন সময় ‘বাক্যবাণে’ বিদ্ধ করেছেন। তবে, ২১-এর আগে মমতাকে হিন্দু বিরোধী প্রমান করাই যে বিজেপির মূল লক্ষ্য তা আজ নিজের বক্তব্যের মাধ্যমে পরিষ্কার করেছেন নাড্ডা। পশ্চিমবঙ্গ জিততে মেরুকরণের রাজনীতিই যে গেরুয়া শিবিরের হাতিয়ার তা বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − thirteen =