কলকাতা: চলতি বছর তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চেও বরাবরের মতো একাধিক শীর্ষ নেতারা বক্তব্য রেখেছিলেন। প্রধান বক্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণের আগে স্বাভাবিকভাবে যা হয়ে থাকে। কিন্তু এবারের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ অন্যবারের থেকে কিছু আলাদা। কারণ বহু শীর্ষ নেতা ছাড়া এমন একজন এই মঞ্চ থেকে বক্তব্য রেখেছিলেন যাকে এর আগে কখনও দেখা যায়নি বক্তব্য রাখতে। অন্তত এত বড় মঞ্চে তো নয়েই। কিন্তু তিনি খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই বক্তব্য রাখতে ওঠেন ওই মঞ্চ থেকে। ইনি হলেন রাজন্যা হালদার। বর্তমানে যাকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ইউনিটের সভাপতি ঘোষণা করেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি।
অনেক বাঘা বাঘা নেতা-মন্ত্রী ২১-এর মঞ্চে বক্তব্য রাখার সুযোগ পান না। কারা বক্তব্য রাখবেন, তা ঠিক করে দেন খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মঞ্চ থেকেই এবার বক্তব্য রাখা রাজন্যাকে নিয়ে চর্চা তো হচ্ছেই। আসলে এতদিন তাঁকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি, বরং বলা যায় কেউই এই যুবনেত্রীকে চিনত না। কিন্তু ২০২৩ সালের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চই তাঁকে লাইমলাইটে এনে দিয়েছে। আর এখন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিটের দায়িত্ব পাওয়ার পর তাঁকে ঘিরে আলোচনা তো চলছেই। দলীয় সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রাতে এই সংক্রান্ত একটি বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে খানিকটা ‘দুর্বল’ টিএমসিপি ইউনিট। তাই সেখানে নিজেদের মাটি আরও শক্ত করার পদক্ষেপ নিয়েছে দল। আগামী ছাত্র ভোটে যাতে সংসদের দখল নিতে পারে শাসক দলের ছাত্র সংগঠন, সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে।
রাজন্যা হালদার আসলে প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী। তাঁর বাড়ি সোনারপুর। স্নাতক হওয়ার পর পিএইচডি করে ২০১৭ সাল থেকে সক্রিয় রাজনীতি শুরু করেন তিনি। যাদবপুরের দায়িত্বে আসার পাশাপাশি তিনি টিএমসিপি-র দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সহ-সভাপতি এবং প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের পর্যবেক্ষকও বটে। তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেও তাঁর পরিবারের যোগ কিছু কংগ্রেসের সঙ্গে ছিল। জানা যায়, তাঁর বাবা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে কংগ্রেসে যোগ দেন। রাজন্যার দাদুও কংগ্রেস করতেন। প্রেসিডেন্সিতে দু’বার নির্দল প্রার্থী হিসেবে জয়ী রাজন্যার আরও একটি পরিচয় আছে। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরি ‘জয়ী’ ব্যান্ডের অন্যতম সদস্যা, গায়িকা।
এই মুহূর্তে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মৃত্যু নিয়ে উত্তাল রাজ্যের পরিস্থিতি। এই ইস্যু নিয়ে রাজনৈতিক তরজাও তুঙ্গে উঠেছে। ডান, বাম, সব রাজনৈতিক দলই ঘটনা নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। এই আবহেই যাদবপুর ইউনিট নিয়ে ঘোষণা করে রাজন্যাকে বড় দায়িত্ব দেওয়া তৃণমূলের জন্য মাস্টারস্ট্রোক হবে কিনা, তা সময় বলবে। প্রসঙ্গত, বুধবার ছাত্র মৃত্যুর প্রতিবাদে যাদবপুর এইট বি বাসস্ট্যান্ডের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করে টিএমসিপি।