তপন মল্লিক চৌধুরী : মঙ্গলবারের রাত গভীর হওয়ার আগেই বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের ছবিটা স্পষ্ট ফুটে উঠেছিল। যদিও গভীর রাত পর্যন্ত ভোট গণনা চলে ২০টির বেশি আসন নিয়ে। আর সে কারণেই সম্পূর্ণ ফলাফল জানতে বুধবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়৷
এবারের বিহার বিধানসভার ভোটের ফলাফল প্রসঙ্গে প্রথমে বলার কথ হল, আরও একবার বুথফেরত সমীক্ষার রিপোর্টকে ভুল প্রমাণ করে ক্ষমতায় ফিরে এল এনডিএ। দ্বিতীয় কথা; এই প্রথম বিহারে বিজেপি আসনলাভের ক্ষেত্রে নীতিশ কুমারের জেডি(ইউ)-কে পিছনে রেখেছে। আরজেডিএকক দল হিসেবে ৭৫ আসন আর ৭৪টি আসন পেয়েছে বিজেপি।২৪৩টি আসনের মধ্যে এনডিএ জিতেছে ১২৫টি আসনে।আর তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বাধীন মহাজোট পেয়েছে ১১০ আসন। গত দশ বছরে নীতীশর জেডিইউএই প্রথম বিহারে বিজেপির থেকে কম আসন পেল। গতবার পেয়েছিল ৭১টি আসন এবার তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৩-এ। অন্যদিকে বিজেপি ৫৩ থেকে বেড়েহয়েছে৭৪।নীতীশের জেডিইউ-র ২৮টি আসন যেমন কমেছে পাশাপাশি বিজেপির আসন বেড়েছে ২১টি।
বিহার বিধানসভা নির্বাচনে এবার উল্লেখযোগ্যভাবে ভালো ফল করেছে বাম দলগুলি। প্রসঙ্গত,বিহারের রাজনীতিতে বিগত দশটি বছর বাদ দিলে বামেদের ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ। যে কারণে তাদের রাজনৈতিক ভূমিকাকে স্বীকার করতেই হয়। যদিও বিহারের গত দুটি ভোটে বামদেরে ভোট ক্রমান্বয়ে কমেছে।পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যাতে বাম দলগুলির অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠেছিল। উল্লেখ্য, ২০১০ সালে বিহার বিধানসভা ভোটে সিপিআই পেয়েছিল মাত্র একটি আসন। এরপর ২০১৫ সালের বিধানসভা ভোটে সিপিআই(এম-এল)পেয়েছিল ৩টি আসন। অন্য দু’টি বাম দল সিপিএম ও সিপিআই কোনও আসন পায় নি। এবার বাম শিবিরে ছিল তিন বাম দল সিপিআই(এম-এল), সিপিআই ও সিপিআইএম। মহাজোটের পক্ষ থেকে ২৯ টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল বামেরা। তাঁর মধ্যে জয় এসেছে ১৬ টিতে। অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি আসনেই জয়ী হয়েছে বাম শিবির।
কিন্তু কংগ্রেসের ভূমিকা কি? দেশের প্রাচীনতম এবং ঐতিহ্যশালী দলটি ধারাবাহিকভাবে নিজেদের যে ফ্লপ মাষ্টার হিসেবে উপস্থাপন করে চলেছে তার যে কোনও বিরতি নেই। বিহারের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কংগ্রেসের এভাবে ধরাশায়ী হয়ে পড়ার জন্যই মহাজোটের স্বপ্ন চুড়মার হয়ে গেল। এবার বিহার বিধানসভায়৭০ টি আসনে লড়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু অতগুলি আসন থেকে মাত্র ১৯ টিতে তাঁরা জয় পেয়েছে। এটা মহাজোটকে বেশ বড়সড় ধাক্কা দিয়েছে। এবারের লড়াইতে কংগ্রেসের আরও১০ টি আসন বেশি জেতা উচিত ছিল। তাহলে তো নিঃসন্দেহে আরও বেশি আসনে পৌঁছতে পারত মহাজোট।তেজস্বী যাদব খুব যে বেশিদিন রাজনীতি করছেন তা তো নয়। সেদিক থেকে তাঁর রাজনৈতিক অভিঙ্গতা অনেক কম। কিন্তু তিনি তার দলের পক্ষ থেকে যেভাবে লড়াই করেছেন তাকে বাহবা দিতেই হবে। কিন্তু কংগ্রেসকে অতগুলি আসন ছেড়ে দিয়ে তিনি ঠিক করেন নি। কারণ প্রাচীন দলটির শক্তি ক্রমশই যে ভাঙছে তা তাঁর অজানা নয়। সারা ভারতে কংগ্রেসের সমর্থন ও গ্রহণযোগ্যতা যে ভীষণভাবেই কম সেটাও তেজস্বী যাদবের অজানা নয়। বিহারের এই নির্বাচনের জয় যে তার হাত ছাড়া হল তাতে কংগ্রেস অনেকাংশেই দায়ী।
ভোটের ফলাফলমহাজোটের নিরিখে বিচার করলে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে কংগ্রেস শিবির। আর তার দাম মেটাতে হল মহাজোটকে। ভোটের আগেরাহুল গান্ধী বিহার সফর করেছেন, কংগ্রেসের র্যাতলিও হয়েছে। কিন্তু সেগুলি বিহারবাসীর মনে কোনওভাবে যে দাগ কাটতে পারেনি তা ভোটের ফলাফল থেকেই স্পষ্ট। অথচ লালু প্রসাদ যাদব অনুপস্থিত থাকলেও তেজস্বী যাদবের পাশে ছিল বিহারের যুব সমাজ। তিনি একাই বিহারের বেকারত্ব, নিত্যপ্রয়ীজনীয় জিনিসের লাগাম ছাড়া দামের কথা সামনে এনেছেন, জনসমর্থনও পেয়ছেন। কিন্তু কংগ্রেস তাঁর লড়াইতে শরিক হিসেবে কোনও সহযোগিতা করতে পারেনি। কংগ্রেস আরও কিছু আসন জয় করতে পারলে মহাজোটের জয় আটকানো কঠিন কাজ হয়ে যেত।
গতবারের চেয়ে আরজেডি এবার ৫টি আসন কম পেয়েছে। কিন্তু কংগ্রেসের ফল আরও খারাপ। গতবার তারা পেয়েছিল ২৭ আসন। এবার পেয়েছে আরও ৮টি কম আসন। এটা জোটেরপক্ষে বড় ধাক্কা। জোটসঙ্গী কংগ্রেসের এই খারাপ পারফরম্যান্স অনেকটাই পিছনে ঠেলে দিয়েছে তেজস্বীকে।