বামপন্থীদের সঙ্গে কেমন ছিল প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সম্পর্ক? পড়ুন বিস্তারিত

বামপন্থীদের সঙ্গে কেমন ছিল প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সম্পর্ক? পড়ুন বিস্তারিত

দেবময় ঘোষ:  প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বামপন্থীদের অম্লমধুর সম্পর্ক ছিল। তবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা কখনও কম হয়নি। প্রবাদপ্রতিম সিপিআইএম নেতা জ্যোতি বসু'কে শ্রদ্ধা করতেন প্রণববাবুর। ইউপিএ সরকার গঠনে প্রণববাবুকে সাহায্যও করেন। পরবর্তীকালে, বামপন্থীরা যখন ইউপিএ সরকার থেকে বেরিয়ে আসতে চলেছেন, সেই সময় প্রণববাবু তা আটকানোর জন্য কলকাতার সল্টলেকে জ্যোতিবাবুর বাসভবন, ইন্দিরা ভবনে এসেছিলেন। যদিও শেষরক্ষা হয়নি। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গেও তার সুসম্পর্কের কথা শোনা যায়। হরকিশন সিং সুরজিৎ, ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত থেকে এ বি বর্ধনের মত বাম নেতৃত্বের সঙ্গে সারাজীবন সুসম্পর্ক রেখেছিলেন প্রণববাবু।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাতের সঙ্গে দেখা করতে যান প্রণববাবু। কথা দেননি কারাত। তিনি বলেছিলেন, পলিটব্যুরো সিদ্ধান্ত নেবে। তারপর, বামপন্থী দলগুলি সিদ্ধান্ত নেবে। সেই সময় দেশজুড়ে ৫১ হাজার বৈধ ভোটছিল বামপন্থীদের। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য 'ইলেক্টরাল কলেজ' বৈধ ১০.৯৮ লাখ ভোট। মনে রাখা প্রয়োজন, সেই সময়, ২০১২ সালে ইউপিএ এর অংশ ছিল না বামেরা। কিন্তু, বামেদের সমর্থন আদায় করে নিয়েছিলেন প্রণববাবু। কিন্তু রাস্তা এত সহজ ছিল না।

বামফ্রন্টের মধ্যে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন দেওয়াকে কেন্দ্র করে ঝামেলা লেগে যায়। সিপিএমের উঠতি নেতা প্রসেনজিৎ বোস দলের এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেছিলেন, চরম ভুল, পার্টিকে ভুগতে হবে। বাম ঐক্য নষ্ট হবে। প্রসেনজিৎ পার্টি থেকে বরখাস্ত হন। এদিকে বামপন্থী দলগুলি – সিপিআই, আর এস পি, সিপিআই এম এল (লিবারেশন) রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দানে বিরত থাকে। সিপিএম প্রণব বাবুর পক্ষে ভোট দেয়। পার্টির মুখপত্র, 'পিপলস ডেমোক্রেসি'তে কারাত লেখেন, ভোটদানে বিরত থাকার অর্থ, তৃণমূলের জন্য সুবিধা করে দেওয়া এবং জাতীয়ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়া।

তবে, প্রণববাবুর সঙ্গে সিপিএমের সম্পর্ক খারাপ দিনও দেখেছে। কেন্দ্রীয় সরকার অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারে এমন কোনও বিল তাঁকে সই করতে বারণ করে সিপিএম। ইউপিএ সরকারের সঙ্গে সেই সময় সিপিএমের একদম ভাল সম্পর্ক ছিল না। কংগ্রেস-সিপিএম আসন সমঝোতার কথা তো ভাবাই যেত না। অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য ভেঙে তেলেঙ্গানা তৈরি হওয়ার আইন তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সিপিএমের সন্দেহ ছিল, সরকার ওই আইনের কাটাছেঁড়া করতে পারে এবং তা সংসদকে না জানিয়েই। অর্ডিন্যান্স জারি করে। সিপিএম প্রণব বাবুকে এমন বিলে সই না করতে চাপ দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty + four =