তপন মল্লিক চৌধুরী : প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধীর দীর্ঘ দিনের সম্পর্কের মধ্যে ছিল নানা উত্থান ও অভিঘাত। একদিকে ছিল চূড়ান্ত বিশ্বাস অন্যদিকে প্রণব ইন্দিরার বহু সিদ্ধান্তকে মনেপ্রাণে মেনে নিয়ে পারেননি। ঠিক তখনই প্রণব তা নিয়ে মুখ না খুললেও পরবর্তীতে ইন্দিরার সেই সব সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল তেমনটাই জানিয়েছিলেন সমালোচনার সুরে। বিশেষ করে তিনি তাঁর বইতে সে সব কথা খোলাখুলি আলোচনা করেছেন।
আরও পড়ুন- ক্লার্ক, অধ্যাপক, সাংবাদিক, নেতা, সাংসদ, মন্ত্রী, চিফ হুইপ … এবং রাষ্ট্রপতি
এ কথা সবারই জানা যে, ইন্দিরা গান্ধীর মন্ত্রিসভায় প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্থান ছিল দ্বিতীয় নম্বরে। তবে ১৯৮৪-এ ইন্দিরা গান্ধীর হত্যা কাণ্ডের পর কংগ্রেসের সঙ্গে কিছু দিনের জন্য প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছিল। প্রণব মুখোপাধ্যায় আলাদা দলও তৈরি করেছিলেন। এসব ঘটনার পরে বেশ কিছুটা সময়ে অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি হলেও, পরবর্তীকালে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীরও খুব কাছের লোক হয়ে উঠেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন- বামপন্থীদের সঙ্গে কেমন ছিল প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সম্পর্ক? পড়ুন বিস্তারিত
১৯৭৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা জারি করেন। সেই ঘটনার সাক্ষী ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তখন প্রণব তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন। ইন্দিরার ওই কংগ্রেস মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্যও ছিলেন প্রণব। তবু সেই জরুরি অবস্থাকে প্রণব মন থেকে মেনে নিতে পারেন নি। সেকথা তিনি তখন কোথাও প্রকাশ করেন নি। এমনকি ইন্দিরাকেও জানান নি। তবে দু’বছর আগে জরুরি অবস্থা প্রসঙ্গে তিনি মুখ খুলেছিলেন।
আরও পড়ুন- বীরভূমের অখ্যাত গ্রাম থেকে দেশের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক প্রণব মুখোপাধ্যায়
দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরার অত্যন্ত আস্থাভাজন হওয়া সত্ত্বেও ১৯৭৫-এর জরুরি অবস্থাকে মন থেকে মেনে নিতে না পারলেও, সে কথা মুখ ফুটে বলতে পারেননি দীর্ঘদিন কংগ্রেস ও সরকারের সঙ্গে জুড়ে থাকার সৌজন্যে। তবে অবসরের পর সেই কথাই সোজাসাপ্টা ভাষায় বলেছিলেন প্রণব। ২০১৮ সালের এক সাক্ষাৎকারে প্রণব মুখোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, দেশে জরুরি অবস্থার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। স্বাধীনতা এবং সংবিধানের ওপর আঘাত হানা হয়েছিল বলে মনে করেন তিনি।
আরও পড়ুন- প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সবথেকে বড় সমালোচক ছিলেন তাঁর মেয়ে শর্মিষ্ঠা
তাঁর কথায়, ১৯৭৫-এর অস্থির সময়ে জরুরি অবস্থার অপব্যবহার করা হয়েছিল। প্রণব জানিয়েছিলেন, চাইলে এমন পরিস্থিতি আটকানো যেত। কারণ সেটা রাজনৈতিক যুদ্ধ ছাড়া কিছু নয় বলেই তার মনে হয়েছিল। প্রণব মুখোপাধ্যায় এ কথাও জানিয়েছিলেন, ১৯৭৫-এর জরুরি অবস্থা নিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ গর্ববোধ করেন। কংগ্রেসের অন্দরে তখন আলোচনা চলত যে, দেশের স্বার্থে ওই আইন বলবৎ করা দরকার। এসব কথা তখন জানতেন প্রণব। কিন্তু তিনি সরকারে থেকেও কি তিনি ১৩ মাসের জরুরি অবস্থার বিরোধিতা করেছিলেন?
আরও পড়ুন- তাঁর দল কংগ্রেস থেকেও বহিস্কার হতে হয়েছিল প্রণব মুখোপাধ্যায়কে
মুখে না বললেও তিনি মনে মনে তার বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি জানতেন যে সেই লড়াইয়ের পিছনে ছিল রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন। প্রণব জানান, এমন পরিস্থিতি তিনি তাঁর সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে দেশে কখনো দেখেননি। জরুরি অবস্থাকে তিনি দুঃসময় সময় বলে জানিয়েছিলেন। ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন ঘটনা বিরল বলে জানিয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।