দু’বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ এসেছিল প্রণবের, কিন্তু কেন অধরা কুর্শী?

দু’বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ এসেছিল প্রণবের, কিন্তু কেন অধরা কুর্শী?

 

তপন মল্লিক চৌধুরী :  যথেষ্ট যোগ্যতা থাকা স্বত্বেও ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাসে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসা হয়নি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। অন্তত দু’বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ এসেছিল প্রণবের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই পদ তাঁর জীবনে অধরাই রয়ে যায়। সেই আক্ষেপ  প্রণব চেপে রাখেন নি। নিজের লেখা বইতে স্পষ্ট ভাষাতেই লিখেছেন।

তিনি লেখেন- সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রী পদ প্রত্যাখ্যান করার পর তাঁরই প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসার কথা ছিল। কেননা তাঁর দীর্ঘদিন সরকারে থাকার অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু কোনও এক বিশেষ কারণে তাঁর প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মনমোহন সিং।

সেই মনমোহন সিংই সবথেকে বেশী গুরুত্ব দিতেন প্রণববাবুকে। কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর ইচ্ছা ও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জায়গায় ড.‌ মনমোহন সিংকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়। জানা যায়, রাষ্ট্রপতির কাছে সরকার গড়ার ব্যাপারে আলোচনার আগে সোনিয়া গান্ধী প্রণবের কোনও পরামর্শও গ্রহণ করেননি। কারণ, প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য তিনি ড.‌ মনমোহন সিং–কেই তিনি মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলেন। 

যদিও প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য ‌ মনমোহন সিং-এর থেকে অনেক বেশি যোগ্য ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। এ মনমোহন সিং নিজেও স্বীকার করেছেন। কিন্তু রাজনীতির ঘোরপ্যাচে প্রণববাবু তাঁর বহু আকাঙ্খিত পদ থেকে বঞ্চিত হন।

প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁর আত্মজীবনীমূলক বই  'দ্য কোয়ালিশন ইয়ার্স ১৯৯৬–২০১২'–তে লিখেছেন, জওহরলাল নেহরুর সম-সাময়িক কংগ্রেসের নীতিনির্ধারক নেতা কুমারস্বামী কামরাজ বলেছিলেন, 'নো হিন্দি, নো পিএম'। অর্থাৎ হিন্দি জানে না এমন কাউকে প্রধানমন্ত্রী করা যাবে না, দলের হাইকমান্ড এমন অযুহাতই সেদিন খাড়া করেছিলেন। প্রণববাবু ভাল হিন্দি জানতেন না। সে কারণে তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্ব পাওয়া হয় নি। 

কিন্তু এটাই কি ঘটনা? বাস্তব বলছে একটু অন্য কথা। প্রণব মুখোপাধ্যায় আজীবন ছিলেন কংগ্রেসের বিশ্বস্ত সেবক। কিন্তু তা স্বত্বেও ই ইন্দিরা গান্ধীর পর  রাজীব গান্ধী এবং রাজীব-সোনিয়া গান্ধীর ছেলে রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী বানানোর চেষ্টাই চলেছে সর্বক্ষণ। তাই প্রধানমন্ত্রীত্বের প্রতিযোগিতা থেকে সুকৌশলে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সরিয়ে রাখা হয়েছিল। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি  নামক শান্তনা পুরস্কারটি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দিয়েছিল কংগ্রেস।

দু’বার প্রায় প্রধানমন্ত্রী হয়ে যাচ্ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। কিন্তু ভাগ্যদেবী প্রণবের প্রতি সদয় হননি। রাজীব হত্যার পরে নরসিমা রাও প্রধানমন্ত্রী হন এবং প্রণব বসেন ভারতীয় পরিকল্পনা কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান পদে। তারপর ১৯৯৫ সালে তিনি বিদেশমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ক্রাইসিস ম্যানেজার হিসেবে গুরুদায়িত্ব পালক প্রণবের সামনে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ এসেছিল ১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পরে এবং ২০০৪ সালে সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রী পদ প্রত্যাখ্যান করার পরে। কিন্তু তা হয়নি।

ইন্দিরা গান্ধীর প্রিয়পাত্র ঠাঁই পাননি রাজীবের গুডবুকে। তা স্বত্বেও ১৯৮৪-তে ইন্দিরার মৃত্যুর পর রাজীব তাঁকে মন্ত্রিপরিষদে স্থান দেননি। অভিমানে সরে গিয়েছিলেন কংগ্রেস থেকে। সোনিয়া গান্ধী প্রণবের সঙ্গে দূরত্ব ঘুচিয়ে তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ আসনে বসিয়েছিলেন। সোনিয়ার প্রধান পরামর্শদাতা ছিলেন প্রণবই। কিন্তু রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী হন নরসিমা রাও। সেই মন্ত্রিসভাতেও প্রণব গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক সামলেছেন।

প্রণব সোনিয়া গান্ধীর কাছেও প্রণব ভরসাযোগ্য ছিলেন। সোনিয়ার প্রধান পরামর্শদাতা ছিলেন প্রণবই। কংগ্রেসের বিপদের বন্ধু হয়ে উঠেছেন বারবার। তা সত্ত্বেও তাঁকে ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠা হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ten + 16 =