তপন মল্লিক চৌধুরী: সে বছর মানে ২০১৯ সাল। দেশের সাধারণতন্ত্র দিবসের ঠিক আগে প্রায় সবাইকে চমকে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার প্রণব মুখোপাধ্যায়কে ভারতরত্ন দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। প্রণববাবু তাঁর প্রতিক্রিয়ায় সেদিন জানিয়েছিলেন, ‘২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছ’টায় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ফোন করেন। জানতে চাইছিলেন, আমি ভারতরত্ন গ্রহণ করব কি না। সাধারণতন্ত্র দিবসের আগে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট ভারতে এসেছিলেন। তাঁকে নিয়ে নরেন্দ্র মোদি ব্যস্ত ছিলেন। তাই নিজে আমার কাছে আসতে পারেননি। ফোনেই তিমি আমার সম্মতি চেয়ে নেন। তিনি চাইছিলেন, সেই সন্ধ্যাতেই ভারতরত্ন প্রাপকের নাম ঘোষিত হোক। সম্মতি না পেলে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করতে পারছিলেন না। আমি সম্মতি দিই’।
প্রণববাবু এও বলেছেন, এ খবর শুনে নাকি তাঁর মেয়ে শর্মিষ্ঠা তাঁর ওপরে খুব রেগে গিয়েছিলেন। শর্মিষ্ঠা নাকি তাঁর বাবাকে বলেছিলেন, ‘ তুমি ভারতরত্ন পাচ্ছ, অথচ তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে, কিছুই হয়নি। তুমি আমাকে পর্যন্ত এই সম্মান পাওয়ার কথা বলনি’। প্রণববাবু তখন তাঁর মেয়ে শর্মিষ্ঠাকে বলেছিলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা অবধি অপেক্ষা করছিলাম’। শর্মিষ্ঠা বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক ঘোষণার কী আছে? প্রধানমন্ত্রী নিজে যখন তোমাকে ফোন করে বলেছেন, তখন নিশ্চয় ঠিক খবর’।
বাবা আর মেয়ের মান-অভিমানের প্রসঙ্গে চলে আসে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়ের বিজেপি প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাবে সম্মতি জানানোর খবরের বিভ্রান্তি। তখন প্রণব-কন্যা রানিখেতের পাহাড়ে ছুটি কাটাচ্ছেন। বিরোধিতা করে প্রথম টুইটটি আসে শর্মিষ্ঠার অ্যাকাউন্ট থেকে। তিনি লেখেন, ‘পাহাড়ে সুন্দর একটা সূর্যাস্ত উপভোগ করারও উপায় নেই। আচমকা খবর এল যে, আমি নাকি বিজেপিতে যোগ দিচ্ছি! আমি রাজনীতিতে যোগ দিয়েছি, কারণ, কংগ্রেসের আদর্শে আমি বিশ্বাসী৷ কংগ্রেস ছেড়ে যাওয়ার থেকে বরং রাজনীতিই ছেড়ে দেবো’।
এখানেই শেষ নয়, নাগপুরে আরএসএসের অনুষ্ঠানের অতিথি হয়ে বক্তৃতা দিতে যাবেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাতে নতুন মাত্রা এনে বাবা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই মুখ খুলেছিলেন তাঁর মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়। শর্মিষ্ঠার বিস্ফোরক মন্তব্যকে ঘিরে দেশের রাজনীতিতে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল।
শর্মিষ্ঠা প্রকাশ্যে নিজের বাবা, দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিকে সতর্ক করতে চেয়েছিলেন। পরপর দু'টি টুইটে তিনি তাঁর বাবার টুইট অ্যাকাউন্ট ‘সিটিজেন মুখার্জি’-কে ট্যাগ করে লিখেছেন- ‘আজকের ঘটনা থেকে বুঝতে পারলাম, বিজেপির নোংরা অপপ্রচার ঠিক কীভাবে কাজ করে৷ আরএসএস নিজেরাও বিশ্বাস করে না যে, আপনি ওদের আদর্শকে সমর্থন জানাবেন নিজের ভাষণে। কিন্তু ভাষণটা সবাই ভুলে গেলেও ছবিটা থেকে যাবে। মিথ্যে বক্তব্যের সঙ্গে সেই ছবি ছড়ানো হবে’।
শুধু তাই নয়, শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায় তাঁর বাবাকে আরএসএস-এর সভায় যোগদান করতে নিষেধ করেছিলেন। টুইট করে তিনি তাঁর নিজের মতামতও প্ৰকাশ করেছিলেন। তাঁর বাবাকে তিনি নাকি সতর্ক করা সত্ত্বেও তিনি তাঁর কোনো কথা শোনেন নি। রুচি শর্মার একটি টুইটে দুটি ছবি দেখা যায়, যার মধ্যে একটিতে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সঙ্ঘের কালো টুপি মাথায় দেখা যায়। শর্মিষ্ঠা রিটুইট করে অভিযোগ করেন, যে তাঁর ভয় ছিল, এটা বিজেপি / আরএসএস এর 'একটা ঘৃণ্য চাল', আর সেটাই সত্যি বলে প্রমাণিত হল। তিনি লেখেন যে সোশ্যাল মিডিয়ার কারসাজির জন্য একটা ছবি দেখে এটাই মনে হচ্ছে, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আরএসএস-এর নেতা এবং কর্মীদের মত অভিবাদন করছেন।