ডিএ আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করে ফের কি মুখ পুড়ল পুলিশের? কেসে কী তবে তেমন মেরিট নেই?

ডিএ আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করে ফের কি মুখ পুড়ল পুলিশের? কেসে কী তবে তেমন মেরিট নেই?

নিজস্ব প্রতিনিধি: চাকরির দাবিতে রাস্তায় নামার পর এক আন্দোলনকারীকে কামড়ে দিয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের এক মহিলা কর্মী। উল্টে গ্রেফতার করা হয়েছিল ওই চাকরিপ্রার্থীকেই। কিন্তু আদালতে জামিন পেয়ে যান তিনি। তার কয়েক দিনের মধ্যেই একই ভাবে বকেয়া মহার্ঘ ভাতার দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মী ও অবসরপ্রাপ্তদের পুলিশের হাতে মার খেতে হয়েছে বলে অভিযোগ। কিন্তু সবাইকে অবাক করে ঘটনায় ৪৭ জন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু এবারও আদালতে সবাই জামিন পেয়ে গেলেন। স্বাভাবিকভাবে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

সেই সঙ্গে আইনজ্ঞরা মনে করছেন পুলিশ মহার্ঘ ভাতার দাবিতে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে যেভাবে যে ধারায় কেস দিয়েছিল, তাতে যথেষ্ট ফাঁক থেকে গিয়েছে বলেই তাঁরা অনায়াসে আদালতে জামিন পেয়ে গিয়েছেন। এতে সাধারণ মানুষের কাছে কলকাতা পুলিশ রীতিমতো অপদস্ত হল বলেই তাঁরা মনে করছেন। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা আন্দোলনের পর যেভাবে সরকারি কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাতে ফের মুখ পুড়েছে পুলিশ তথা রাজ্য সরকারের। সবচেয়ে বড় কথা পুলিশের একাংশ পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ। কারণ তাঁরাও সরকারি কর্মী। বকেয়া মহার্ঘ ভাতা না পাওয়ায় তাঁরাও অসুবিধার মধ্যে রয়েছেন। তাই বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কশাল কোর্ট চত্বরে বহু পুলিশকর্মীকে আড়ালে আবডালে এই ঘটনার সমালোচনা করতে শোনা গিয়েছে। ঘনিষ্ঠ মহলে বহু পুলিশকর্মী জানিয়েছেন চাকরি বাঁচানোর তাগিদেই উপরতলার নির্দেশে তাঁরা আন্দোলনকারীদের ওভাবে বল প্রয়োগ করে আটকাতে বাধ্য হয়েছেন। সেদিন অভিযোগ ওঠে যে পুলিশকর্মীদের  আঘাতে আন্দোলনকারীদের অনেকের মুখ ফেটে গিয়েছে। এক আন্দোলনকারীর বুকে, পেটে জনৈক্য পুলিশকর্মী ঘুষি মারছেন এই দৃশ্য দেখা গিয়েছে বৈদ্যুতিন মাধ্যমে। সেখানে রাস্তায় প্রচুর পেন, চশমা পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে।

আন্দোলনকারীদের বক্তব্য একটাই, আমরা তো কেউ জঙ্গি নই। আমাদের সঙ্গে লাঠি, বোমা, বন্দুক নেই। শুধু পকেটে পেন, আর চোখে রয়েছে চশমা। শুধুমাত্র বকেয়া মহার্ঘ্য ভাতার দাবিতে পথে নেমেছি। তাহলে আমাদের সঙ্গে এমন অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে কেন? সবচেয়ে বড় কথা সেদিনের আন্দোলনে বহু অবসরপ্রাপ্ত রাজ্য সরকারি কর্মীও যোগ দিয়েছিলেন। তাঁদের উপরেও পুলিশ বলপ্রয়োগ করেছে বলে অভিযোগ। যে ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছে সব মহল। অথচ ৪৭ জন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। এর আগেও একই ঘটনা দেখা গিয়েছে। চাকরির দাবিতে পথে নামার পর অরুণিমা পাল নামে জনৈক আন্দোলনকারীকে এক মহিলা পুলিশকর্মী কামড়ে দেওয়ার পর সেই চাকরিপ্রার্থীকেই গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর আদালতে ওই আক্রান্ত চাকরিপ্রার্থী জামিন পেয়ে যান। ঘটনার পর চতুর্দিক থেকে চাপ আসতে থাকায় পুলিশ বাধ্য হয়েছে মহিলা পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ ঘটেছে তা নিয়ে তদন্ত শুরু করতে।

বিরোধীদের অভিযোগ রাজ্য সরকার কোনও আন্দোলন হতে দেবে না। তাই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন থামাতেও দমন পীড়ন নীতি নিচ্ছে পুলিশ। তবে কি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসা তৃণমূল সরকার এই ধরনের অরাজনৈতিক আন্দোলনগুলিকে ভয় পাচ্ছেন? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে। তাই আগামী দিনে এই ধরনের আন্দোলন থামাতে পুলিশের ভূমিকা কি হয় সেদিকেই নজর থাকবে সবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × two =