কলকাতা: সরকারিভাবে কোনওপক্ষই এখনও স্পষ্ট করে কিছু জানাননি৷ কিন্তু জল্পনা সত্যি করে প্রশান্ত কিশোর কংগ্রেসে যোগ দিলে সেক্ষেত্রে তাঁর সংস্থা ‘আই প্যাকে’র সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে তৃণমূল৷ ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে৷
দলের বর্ষীয়ান নেতা তথা সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘উনি (পি কে) কোনও রাজনৈতিক দলে যোগ দেবেন কি না সেটা ওঁনার ব্যক্তিগত বিষয়৷ তবে সেক্ষেত্রে আমরাও ওঁর সংস্থা আই প্যাকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখব কি না, সেটা ভেবে দেখতে হবে৷’’ প্রসঙ্গত, একুশের বঙ্গ বিজয়ের পরই প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা ‘আই প্যাকে’র সঙ্গে ২০২৬ পর্যন্ত নতুন করে গাঁটছড়া বাঁধে তৃণমূল৷ স্বাভাবিকভাবেই প্রশান্ত কিশোরের কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার সম্ভবনার খবর সামনে আসতে তৃণমূল শিবিরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে৷
তৃণমূলের প্রথমসারির এক নেতার কথায়, ‘‘দিদিমনি ওঁনাকে ( পি কে) তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কথা বলেছিলেন৷ উনি সেটা করেননি৷ তাতে অবশ্য কিছু বলার নেই৷ তা বলে উনি এখন যদি কংগ্রেসে যোগ দেন তাহলে আর যাই হোক, ওঁনার সংস্থা আই-প্যাকের সঙ্গে আমাদের আর কাজ করা সম্ভব নয়৷ কারণ, বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের বন্ধুত্ব রয়েছে৷ ফলে কর্মীদের কাছে অন্য বার্তা পৌঁছাতে পারে৷’’
প্রায় চার বছরের ব্যবধানে মঙ্গলবার রাহুল গান্ধীর সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে দেখা গিয়েছিল প্রশান্ত কিশোরকে৷ বৈঠকে হাজির ছিলেন প্রিয়ঙ্কাও৷ এমনকি ভার্চুয়ালি বৈঠকে যোগ দেন সনিয়া গান্ধীও৷ রাহুল-পিকের মুখোমুখি ওই বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক মহলের অভিমত ছিল, আগামী লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রশান্ত কিশোর অ-বিজেপি ভোট একত্রিত করার প্রচেষ্টা শুরু করেছেন৷ কিন্তু বুধবার দুপুরের পর থেকে ছবিটা বদলে যায়৷ একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের তরফে দাবি করা হয়, প্রশান্ত কিশোর কংগ্রেসে যোগ দিতে পারেন৷ এবিষয়ে স্বয়ং সনিয়া গান্ধীর কাছ থেকে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷ সংশ্লিষ্ট খবরে দাবি করা হয়, পরামর্শ দাতা হিসেবে নয়, স্বয়ং কংগ্রেসের কর্মকর্তা হিসেবেই খোলনলচে সংগঠন গড়ে তোলার কাজ করবেন পিকে৷
সামনেই উত্তরপ্রদেশ সহ একাধিক রাজ্যের নির্বাচন রয়েছে৷ প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে এই উত্তরপ্রদেশেই কংগ্রেসের হয়ে কাজ করতে গিয়ে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন পি কে৷ এমনকি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে কাজ করা যায় না বলেও প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছিলেন তিনি৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, পি কে রাজনৈতিক কেরিয়ারে কালিমালিপ্ত অধ্যায় বলতে গেলে ২০১৭ সালের উত্তরপ্রদেশের ঘটনা৷ কারণ, স্রেফ এই ক্ষেত্রেই পি কে ম্যাজিক কাজ করেনি৷ সেবারে উত্তরপ্রদেশে মুখ থুবড়ে পড়েছিল কংগ্রেস৷ ফলে পাপস্থালনের জন্যও পি কে কংগ্রেসে ফিরতে পারেন বলেই অভিমত প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ৷ সেক্ষেত্রে পিকের সংস্থার সঙ্গে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলেই আলোচনা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে৷
দলের এক নেতা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, মুকুলবিহীন দলে পি কে-র আগমন ঘটিয়েছিলেন ‘যুবরাজ’ অভিষেক৷ তাই এক্ষেত্রে অভিষেকই পুরো বিষয়টি দেখছেন৷ দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি৷ তবে প্রশান্ত কিশোর যদি সত্যি কংগ্রেসে যোগ দেন, সেক্ষেত্রে আমরা বাধ্য হব আই প্যাকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে৷’’