পুলিশের অনুমতি না পেয়ে আদালতের নির্দেশে পালিত হচ্ছে একের পর এক কর্মসূচি!

পুলিশের অনুমতি না পেয়ে আদালতের নির্দেশে পালিত হচ্ছে একের পর এক কর্মসূচি!

নিজস্ব প্রতিনিধি: বিগত কয়েক মাস ধরে একই ঘটনা বারবার দেখা যাচ্ছে। বহু কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি নিতে হচ্ছে। কারণ সেখানে পুলিশ প্রশাসন অনুমতি দিচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। যেমন ডিএ আন্দোলনকারীরা  মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাড়া এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির সামনে দিয়ে মিছিল করার জন্য পুলিশের কাছে অনুমতি চাইলে তা নাকচ হয়ে যায়। পরে আদালতের নির্দেশে সেই কর্মসূচি পালন করতে পেরেছিলেন তাঁরা। পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সভা করার জন্য পুলিশের কাছে অনুমতি চাইলে তা খারিজ করে দেয় জেলা প্রশাসন।

এরপর সেই সভা হয় আদালতের নির্দেশে। গ্রুপ ডি-র চাকরিপ্রার্থীরা কালীঘাটে হ্যারিকেন মিছিল করার জন্য পুলিশের কাছে অনুমতি চাইলে সেটাও খারিজ হয়ে যায়। এরপর আদালতের দ্বারস্থ হয়ে সেই অনুমতি পেয়েছেন তাঁরা। এগুলি কয়েকটা নমুনা মাত্র। কারণ এরকম অজস্র উদাহরণ রয়েছে। বিগত বেশ কয়েক মাস ধরে এমন ঘটনা বারবার দেখা যাচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক দল, চাকরিপ্রার্থী বা সরকারি কর্মচারীরা কোনও কর্মসূচির জন্য পুলিশের অনুমতি চাইতে গেলে তা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে। আর প্রতিটি ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন। এরপরই পাওয়া যাচ্ছে অনুমতি। স্বাভাবিকভাবেই রাজ্য সরকারের এই মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পুলিশ অনুমতি দিচ্ছে না। আসলে তৃণমূলের নির্দেশেই পুলিশ এমনটা করছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ।

স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে শান্তিপূর্ণ গণ আন্দোলন করার অধিকার সবার আছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার দাবি করেন আন্দোলনের মাধ্যমেই তিনি উঠে এসেছেন এবং মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। আর মুখ্যমন্ত্রী যে কথা বলে থাকেন সেটা পুরোপুরি ঠিক। তিন দশকের বেশি সময় ধরে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে কীভাবে লাগাতার আন্দোলন করে গিয়েছিলেন মমতা, সে কথা পশ্চিমবঙ্গ তথা গোটা দেশ জানে। মমতার সেই লড়াইকে বারবার কুর্নিশ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর গণ আন্দোলন রাজ্য সরকার জোর করে পুলিশ দিয়ে থামিয়ে দিতে চাইছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। অভিযোগ গণতান্ত্রিক ক্ষেত্রে বিরোধীদের যে রাজনৈতিক পরিসর পাওয়ার কথা তৃণমূল তা হতে দিচ্ছে না। আর সেই কারণে বারবার রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠছে। বিগত বেশ কয়েক মাসের প্রেক্ষাপট বলছে আদালত না থাকলে বহু কর্মসূচি পালিত হতে পারত না।

রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করছে সম্ভবত ভয় থেকেই এমন আচরণ করছে তৃণমূল। বিধানসভায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও বিগত দিনে যে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে, তাতেই রীতিমতো প্রমাদ গুণছে রাজ্য সরকার। তবে সত্যিই কি ভয় থেকে বিরোধীদের কর্মসূচি পালন করতে বাধা দিচ্ছে তৃণমূল? একই ভাবে রাজ্য সরকারি কর্মীদের আন্দোলনেও বাধা দেওয়া হচ্ছে? এই চর্চা চলছে রাজ্য জুড়ে। তাই বিভিন্ন ইস্যুতে পুলিশের অনুমতি না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এই প্রবণতা আরও কতদিন চলে এখন সেটাই দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *