আম্বানির ছেলের হাই-ফাই বিয়ে, অন্যদিকে এক দম্পতি চাইছেন ছেলের ইচ্ছা মৃত্যু!

মুকেশ আম্বানির ছেলের বিয়ে (Euthanasia in India) মহাসমারোহে ধুমধাম করে হল শিল্পপতি মুকেশ আম্বানির ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান। বিয়েতে আমন্ত্রিতদের তালিকা ও অনুষ্ঠানের জৌলুস দেখলেই চোখ…

euthanasia in India . Delhi High Court euthanasia plea

মুকেশ আম্বানির ছেলের বিয়ে (Euthanasia in India)

মহাসমারোহে ধুমধাম করে হল শিল্পপতি মুকেশ আম্বানির ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান। বিয়েতে আমন্ত্রিতদের তালিকা ও অনুষ্ঠানের জৌলুস দেখলেই চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। একাধিক সূত্রের খবর অনুযায়ী বিভিন্ন পর্যায়ে হওয়া বিয়ে সংক্রান্ত অনুষ্ঠান ও শুক্রবারের মূল অনুষ্ঠান ধরে খরচ হয়েছে মোট পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এত খরচ করে করে বিয়ের অনুষ্ঠান বিশ্বের ইতিহাসে এই প্রথম বলে অনেকের দাবি। কিন্তু একদিকে যখন এই হাই-ফাই বিয়ের অনুষ্ঠান হল, ঠিক সেই সময়ে নিঃশব্দে একটি খবর সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে।

সেই খবর নিয়ে কত সংখ্যক মানুষ চর্চা করেছেন বা চোখের জল ফেলেছেন তা জানা সম্ভব নয়। কেউ হয়ত সেই খবর পড়ার পর সারাদিন শুধু সেটার কথাই ভেবেছেন, আবার কেউ হয়ত খবরটি পড়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্য খবরে ডুবে গিয়েছেন।

ছেলের ইচ্ছামৃত্যুর আবেদন (Delhi High Court euthanasia plea)

কী খবর ছিল সেটা? চণ্ডীগড়ের বাসিন্দা ৬২ বছরের অশোক রানা ও তাঁর স্ত্রী নির্মলা দেবী দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন তাঁদের ছেলের ইচ্ছামৃত্যু বা নিষ্কৃতি মৃত্যু নিয়ে। তাঁরা চাইছেন তাঁদের ছেলের যেন ইচ্ছামৃত্যু হয়। কী কারণে বা কোন অবস্থায় এলে বাবা-মা নিজের ছেলের মৃত্যু কামনা করতে পারেন তা জানতে পারলে চোখ দিয়ে জল ঝরতে বাধ্য। যদিও দিল্লি হাইকোর্ট সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। কারণ ভারতবর্ষে ইচ্ছামৃত্যু আইনসম্মত নয়।

 চিকিৎসার বিপুল খরচ (healthcare access)

দম্পতির পুত্র হরিশ দশ বছর আগে চণ্ডীগড়ের মোহালির একটি কলেজের চারতলা বিল্ডিং থেকে নীচে পড়ে গিয়ে মাথায় ও শরীরে এমন আঘাত পান সেই থেকে বিছানায় শুয়ে রয়েছেন। ওই কলেজের ছাত্র ছিলেন হরিশ। সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার জেরে হরিশের গোটা শরীরে একশো শতাংশ পক্ষাঘাত হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে হরিশ বিছানায় মিশে রয়েছেন। এই অবস্থা আর চোখে দেখতে পারছেন না তাঁর বাবা-মা। শুধু তাই নয়, হরিশের চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে খরচ অন্তত ২৮ হাজার টাকা। তাঁর জন্য রাখতে হয়েছে একজন নার্স ও একজন ফিজিওথেরাপিস্ট। হরিশকে নলের সাহায্যে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে খাওয়ানো হচ্ছে।

অসহায় দম্পতি চাইছেন ছেলেকে ইচ্ছামৃত্যু (euthanasia debate)

এই মুহূর্তে অশোক রানা মাসে পেনশন পান মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকা। তাঁর ছোট ছেলে সামান্য বেতনের চাকরি করেন। হরিশের চিকিৎসার খরচ তুলতে স্ত্রী নির্মলা দেবী স্যান্ডউইচ তৈরি করেন, আর সেগুলি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বিক্রি করেন বৃদ্ধ অশোক রানা। ছোট ছেলের বেতন ধরে সব মিলিয়ে তাঁদের মাসে সর্বোচ্চ রোজগার হয় ২৭ হাজার টাকা। এখানেই শেষ নয়, ছেলের চিকিৎসার জন্য নিজেদের তিনতলা বাড়ি তিন বছর আগেই বিক্রি করে দিয়েছেন তাঁরা। দিল্লি, চণ্ডীগড়ের সমস্ত শ্রেষ্ঠ হাসপাতালে ছেলের চিকিৎসা করিয়েও লাভ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ওই অসহায় দম্পতি চাইছেন তাঁদের ছেলেকে ইচ্ছামৃত্যু দেওয়া হোক। সেই দাবি তাঁরা করেছিলেন দিল্লি হাইকোর্টে।

অসহায় দম্পতি পাশে দাঁড়াবে কে? (palliative care)

অন্যদিকে তাঁদের ছেলে কিছু শুনতে পান না, দেখতে পান না, বুঝতে পারেন না, স্থবির হয়ে বিছানায় শুয়ে রয়েছেন দশ বছরের বেশি সময় ধরে। এখন আর ছেলের চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে পারছেন না অসহায় দম্পতি। ঠিক এই সময়েই মুম্বইয়ে ধুমধাম করে হয়ে গেল মুকেশ আম্বানির ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান। কী বৈপরীত্য! একটা প্রশ্নই মনে আসে, এও সম্ভব? এ কোথায় বাস করছি আমরা? এরপরেও শাসক-বিরোধী মিলিয়ে নেতানেত্রী বা প্রশাসন কী ওই অসহায় দম্পতির পাশে দাঁড়াবে না? এ দেশে কী শুধু ভোটকেন্দ্রিক রাজনীতি চলতে থাকবে? অন্যদিকে আলোচনা চলবে মুকেশ আম্বানির ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে? একদিকে তীব্র আলোর ছ’টায় যেন চোখ ধাঁধিয়ে যায়, অন্যদিকে এতটাই গভীর আঁধার! দেশ স্বাধীন হওয়ার ৭৭ বছর পরেও এই দৃশ্য আমাদের দেখতে হচ্ছে? এই বৈপরীত্য কী আমাদের সমাজ থেকে কোনও দিন বিদায় নেবে না? এর উত্তর লুকিয়ে রয়েছে সময়ের গর্ভেই।

 

 

 

আরও পড়ুন-

মশলা থেকে চায়ের গুঁড়ো, রাসায়নিক মেশানো অব্যাহত! 

এবার ধর্মচর্চায় ঢালাও ‘অনুমতি’ দেবে সিপিএম?

অধীরের সরে যাওয়া নিশ্চিত, নতুন প্রদেশ সভাপতির দৌড়ে কারা?

বাজেটে কল্পতরু হবেন নির্মলা?

 

Politics: Parents seek court’s permission for son’s euthanasia due to prolonged suffering, highlighting the ethical and legal dilemmas surrounding end-of-life care in India.

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *