এক পরিবার, দুই দল, তিন প্রার্থী! চিড় ধরেছে কি গনি খানের পরিবারে?

ইংরেজবাজার: পরিবার একটাই। অথচ একই বাড়িতে দুই যুযুধান রাজনৈতিক দলের লড়াই। কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা ও মালদার আটবারের সাংসদ প্রয়াত গনি খান চৌধুরীর সেই পরিবারে থেকেও তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ‘কঠিন সিদ্ধান্ত’ নিয়েছেন মৌসম বেনজির নূর! কিন্তু মৌসম নূর জানিয়েছেন, তাঁর কোনও আক্ষেপ নেই। গনি খানের পরিবারের তিনজন সদস্যের মধ্যে তিনি একমাত্র অন্য দলের টিকেটে সাধারণ নির্বাচনে

232b452042e0c4eb8c89c54ef3358e58

এক পরিবার, দুই দল, তিন প্রার্থী! চিড় ধরেছে কি গনি খানের পরিবারে?

ইংরেজবাজার: পরিবার একটাই। অথচ একই বাড়িতে দুই যুযুধান রাজনৈতিক দলের লড়াই। কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা ও মালদার আটবারের সাংসদ প্রয়াত গনি খান চৌধুরীর সেই পরিবারে থেকেও তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ‘কঠিন সিদ্ধান্ত’ নিয়েছেন মৌসম বেনজির নূর! কিন্তু মৌসম নূর জানিয়েছেন, তাঁর কোনও আক্ষেপ নেই। গনি খানের পরিবারের তিনজন সদস্যের মধ্যে তিনি একমাত্র অন্য দলের টিকেটে সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

মালদা উত্তর লোকসভা আসনের কংগ্রেসের টিকিটে মৌসমের বিরুদ্ধে লড়ছেন তাঁরই ভাই সুজাপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধাতক ইশা খান। নূরের কাকা এবং ইশা খানের বাবা আবু হাশেম চৌধুরী মালদা দক্ষিণ আসন থেকে তিনবার লোকসভার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এবং আবারও একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি। বাবা ছেলের দু’জনই গনি খানের পদচিহ্ন ধরে রাখার যথোপযুক্ত চেষ্টা করছেন। মৃত্যুর প্রায় এক দশক পরেও এলাকার ভোটারদের উপর এখনও যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে গনি খানের। কংগ্রেসের আশা, দীর্ঘ দিন ধরে মানুষের আনুগত্য মালদার দুই আসনে পিতা পুত্রকে জিতিয়ে দেবে। কংগ্রেসের টিকিটে ২০১৪ সালে মৌসম নূর মালদা উত্তর আসন জিতেছিলেন। তিনি এই বছরের জানুয়ারিতে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন।

মালদা কয়েক দশক ধরেই কংগ্রেসের ঘাঁটি। নূর তৃণমূলে যোগদান করার পর তাঁদের বাড়ির সেই চত্বরে পাঁচিল তুলে দেওয়া হয় যেখানে আগে গনি খান তাঁর সমর্থকদের সাথে দেখা করতেন। রাজনীতিতে পারিবারিক বিদ্রোহ নতুন কিছুই নয়। কিন্তু এই প্রাচীরটি কংগ্রেসের জন্য একটি যুগের সমাপ্তির প্রতীক হয়ে উঠতে পারে। চার দশক ধরে মালদার (উত্তর, দক্ষিণ) দুইটি নির্বাচনী এলাকায় ভোট হত কেবল গনি খানের নামেই। কংগ্রেস কর্মীদের ভয়, নূর সেই মুসলিম ভোটারদের বিভক্ত করতে পারেন, যারা ঐতিহ্যগতভাবে পরিবারের সঙ্গে রয়েছেন এবং পূর্ববর্তী নির্বাচনে তাঁদের ভোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মৌসম নূর পিটিআইকে বলেন, “এটি একটি কঠিন নির্বাচন ছিল। কঠিন সিদ্ধান্ত। আমি আমার সমর্থকদের, উপদেষ্টাদের এবং এমনকি আমার পরিবারের সাথে পরামর্শ করার পরই এই সিদ্ধান্তটি নিই। এমন একটা পরিস্থিতি ছিল যেখানে আমি মনে করি যে বিজেপির মোকাবিলা করার একমাত্র উপায় বিরোধী দলের জোট গঠন করা ছিল। কিন্তু তা ঘটেনি। তাঁর একমাত্র উপায় তৃণমূলে যোগ দেওয়া, যেহেতু একমাত্র দিদিই (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ধর্মীয় মেরুকরণ বন্ধ করতে সক্ষম।”

তবে পরিবার? তাঁর সিদ্ধান্ত কি গনি খানের পরিবারকেই ভেঙে দিল না? নূর জানিয়েছেন তাঁর তৃণমূলে যোগদান কাকা বা ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করেনি। ইশা খানের সঙ্গে সাক্ষাত করতে এসে জামারুল বলেন, “এই পাঁচিল আমার মন খারাপ করিয়ে দেয়।” তিনি আরও বলেন, “অনেক বছর ধরে এই বাড়িটি নিরাপত্তা এবং ধারাবাহিকতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা নষ্ট হয়ে গেল। এমন ও কীভাবে করতে পারল? এটা বিজেপিকে উপকৃত করে মুসলিম ভোটকে বিভক্ত করতে পারে।”

২৩ শে এপ্রিল এই নির্বাচনী এলাকায় কি নিজের কাকাকে ভোট দিলেন তিনি? সেসব এখনও পরিষ্কার না। ফলাফল স্পষ্টভাবে না জানা পর্যন্ত মৌসম নূরের তৃণমূলে যোগদানের সিদ্ধান্তের বিশ্লেষণ করা বেশ কঠিন। ঠিক এক মাস পরে, ২৩ মে সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *