কলকাতা: যথেষ্ট প্রমাণের অভাব! আর তার জেরেই খারিজ ছত্রধর মাহাতোর যাবজ্জীবন সাজা৷ আজ কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ছত্রধর মাহাতোর যাবজ্জীবন সাজা কমিয়ে ১০ বছর করা হল৷ আদালত সূত্রের খবর, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী সেপ্টেম্বরে মুক্তি পেতে পারেন ছত্রধর মাহাতো-সহ চার৷ আর এই মুক্তির খবরে সিঁদুরে মেঘের আশঙ্কা তৃণমূল শিবিরে!
গত ২০১৫ সালে ইউএপিএ মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন জনগণের কমিটির নেতা ছত্রধর মাহাতো৷ মেদিনীপুর আদালতের তরফে ছত্রধর, সুখশান্তি বাস্কে, শম্ভু সরেন ও সাগেন মুর্মুকে দোষী সাব্যস্ত করার পর প্রিজন ভ্যানে দাঁড়িয়েই বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন ছত্রধর৷
কেননা, পরিবর্তনের আমলে জঙ্গলমহলের আন্দোলন পর্বে ছত্রধরের পাশে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ একই মঞ্চে দু’জন করেছিলেন একাধিক সভা৷ মমতা তখন বিরোধী নেত্রী৷ সে কথা মনে করিয়ে আদালত চত্বরে ছত্রধর জানিয়েছিলেন, তৃণমূল এখন ক্ষমতায়৷ আমাদের আন্দোলনকে স্বীকৃতিও দিয়েছিল তৃণমূল৷ অথচ, সেই আন্দোলনের জন্যই আমাদের দোষী সাব্যস্ত করা করা হয়েছে৷ ২০০৯ সালে সেপ্টেম্বরে লালগড়ের বীরকাঁড়ে গ্রেপ্তার হন ছত্রধর৷ তাঁর বিরুদ্ধে ৩৯টি মামলা দায়ের হয়৷ ৩৭টিতে জামিন পাওয়ার পর এবার ২০০৯ সালে কাটাপাহাড়ি বিস্ফোরণ মামলায় মুক্তির পথে ছত্রধর৷
পর্যবেক্ষক মহলের আশঙ্কা, এক সময়ে তৃণমূলের সঙ্গে যৌথ আন্দোলনে নামার পর প্রায় ৯ বছর জেলে থেকে মুক্তি পেয়ে তৃণমূল নেত্রীর বিরুদ্ধে ফের একবার ক্ষোভ উগরে দিতে পারেন জনগণের কমিটির নেতা ছত্রধর মাহাতো৷ কেননা, তৃণমূলকে নিয়ে আন্দোলন করার পর সেই ‘বন্ধু’ ছত্রধরের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহী মামলা দেওয়া ও পরে গ্রেপ্তারির ঘটনায় বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ তুল পারেন জনগণের কমিটির নেতা৷ মমতার সঙ্গে ছত্রধরের ঘনিষ্ঠাতা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য রাজনীতিতে রেয়ছে নানান বিতর্ক৷ এবার জেল থেকে মুক্তির পর রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে ছত্রধর মুখ খোলেন কি না, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা৷ সেক্ষেত্রে ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের কাছে ছত্রধর ইস্যু জঙ্গলমহলে প্রধান কাঁটা হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা পর্যবেক্ষক মহলের৷
২০০৯ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর জেলের ভিতর থেকেই নির্বাচন লড়েন ছত্রধর৷ বন্দিমুক্তি কমিটি গঠন হওয়ার পরও মুক্তি পাননি ছত্রধর৷ তবে ক্ষমতায় আসার আগে ছত্রধরের সঙ্গে তৎকালীন বিরোধী নেত্রী তথা রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছত্রধরের ঘণিষ্ঠতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিল শাসক দল সিপিএম৷ একই মঞ্চে দেখাও গিয়েছিল মমতা ও ছত্রধরকে৷ তবে কী কাজ ফুরোতেই ছত্রধরকে এভাবে সরালেন মমতা? প্রশ্ন তুলেছেন একাধিক ছত্রধর অনুগামীরা৷ ছত্রধর অনুগামীদের অভিযোগ, পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে যাঁরা সাধারণ মানুষের জন্য লড়াই করেছিল তাঁদেরই দেশদ্রোহী প্রমাণ করতে ব্যর্থ হল পুলিশ৷
কলকাতা হাইকোর্ট সূত্রে খবর, ছত্রধর মাহাতোর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড খারিজ করার পাশাপাশি আরও চার জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড খারিজ করেছে আদালত৷ চার জনের বিরুদ্ধে ১০ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ প্রসূন চট্টোপাধ্যায় ও রাজা সরখেলকে বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয়েছে৷ ২০০৯ সালে কাটাপাহাড়ি বিস্ফোরণ মামলায় এই রায় ঘোষণা কলকাতা হাইকোর্টের৷
২০০৯ সালে কাটাপাহাড়ি বিস্ফোরণ মামলায় ছত্রধর থেকে শুরু করে সুখশান্তি বাস্কে, শম্ভু সরেনস, সগুন মুর্মু, রাজা সরখেল, প্রসূন চট্টোপাধ্যায়দের মুক্তির আর্জিতে সওয়াল করেন বর্ষীয়ান আইনজীবী শেখর বসু৷ বিরোধিতা করেন সরকারপক্ষে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত ও পিপি শাশ্বতগোপাল মুখোপাধ্যায়৷ কিন্তু, বিস্ফরণের ঘটনায় যথেষ্ট প্রমাণের অভাব থাকায় রাজা সরখেল, প্রসূন চট্টোপাধ্যায়দের মুক্তি দিয়ে ছত্রধর থেকে শুরু করে সুখশান্তি বাস্কে, শম্ভু সরেনস, সগুন মুর্মুর যাবজ্জীবন সাজা কমিয়ে ১০ বছর করা হয়৷ ইতিমধ্যেই ন’বছরের জেলে বন্দি রয়েছেন ছত্রধর চার জন৷ ফলে, মনে করা হচ্ছে, আর কিছুদিন জেল থাকর পর মিলতে পারে মুক্তি৷
২০০৯ বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০১৫ মে মাসে মেদিনীপুরের দায়রা আদালত ছত্রধরদের দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়৷ এর পরই হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বন্দিদের আইনজীবীরা৷ দীর্ঘ সওয়াল-জবাবের আজ রায় ঘোষণা আদালতের৷ ইতিমধ্যে রঞ্জিত মুর্মুর জেলে মৃত্যু হয়েছে৷ যদিও এই রায়ে অখুশি মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর৷ সংগঠনের তরফে সাফ জানানো হয়েছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ তাঁদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণও দেখাতে পারেনি রাজ্য৷ ফলে, এপিডিআর চাইছে অবিলম্বে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হোক৷