বিচিত্র অভিশাপ! চাইলেও মরতে পারেন না আত্মঘাতী কৃষকের স্ত্রী

আজ বিকেল: কৃষিনির্ভর দেশ ভারতে কৃষক মৃত্যু অনেকটা অভিশাপের মতো। আর সেই অভিশাপের বোঝা বেড়েই চলেছে প্রতি বছর গোটা দেশে অন্তত হাজার কৃষক ঋণ শোধ করতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নেন। তারপর কী হয় তাঁর স্ত্রী, সন্তানদের হাল, কেউ খবর রাখে না। গোটা পৃথিবী তখন আত্মহননের দায় কীভাবে ঝেরে ফেলে নির্ভার হবে তারই পথ

বিচিত্র অভিশাপ! চাইলেও মরতে পারেন না আত্মঘাতী কৃষকের স্ত্রী

আজ বিকেল: কৃষিনির্ভর দেশ ভারতে কৃষক মৃত্যু অনেকটা অভিশাপের মতো। আর সেই অভিশাপের বোঝা বেড়েই চলেছে প্রতি বছর গোটা দেশে অন্তত হাজার কৃষক ঋণ শোধ করতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নেন। তারপর কী হয় তাঁর স্ত্রী, সন্তানদের হাল, কেউ খবর রাখে না। গোটা পৃথিবী তখন আত্মহননের দায় কীভাবে ঝেরে ফেলে নির্ভার হবে তারই পথ খুঁজে চলে। দুঃখজনক হলেও এটাই সত্যি যে মৃত্যুশোক কাটিয়ে ফের বাঁচতে শেখে আত্মঘাতী কৃষকের বিধবা স্ত্রী ও তাঁর দুর্ভাগা সন্তানরা। সন্তানদের মুখের দিকে চেযেই স্বামীর ফেলে য়াওযা অর্ধেক ফলিডলটা আর গলায় ঢালতে পারেন না, শোকসন্তপ্ত গৃহবধূ।

বিচিত্র অভিশাপ! চাইলেও মরতে পারেন না আত্মঘাতী কৃষকের স্ত্রীকী করে চলে দিন, কেউ কী কখনও ভেবে দেখেছেন? ভাবেননি, চলে যাই তেলাঙ্গানায় খরাপ্রবণ এই রাজ্যে চাষবাস অনেকটা স্বপ্নের মতো। এখানে কৃষককে স্বপ্ন দেখায় দুর্নীতিপরায়ণ বীজ বিক্রেতা, একটাই লক্ষ্য বীজ বিক্রি করা, সেই বীজ থেকে কৃষক আদৌ কোনওরকম ফসল ফলিয়ে লাভবান হবে কিনা তা ভাবার সময় নেই ওই ব্যবসায়ীর। বৃষ্টি এখানে কালেভদ্রে হয়, সাধারণমানুষ একফোটা বৃষ্টির জন্য চাতকের মতো তাকিয়ে থাকে। এদিকে বীজ বিক্রেতারা চায়া তেলেঙ্গানার চাষিরা অনেক অনেক তুঁতে কিনে রোপণ করুক, তারা তুলো চাষ করুক। তা থেকে পোশাক তৈরি হবে, তেলেঙ্গানার হ্যান্ডলুম যার লাভজনক বাজারের চাহিদা প্রবল।

বিচিত্র অভিশাপ! চাইলেও মরতে পারেন না আত্মঘাতী কৃষকের স্ত্রীকিন্তু তুলো, তুঁতে চাষ করতে গেলে সার, কীটনাশকের পাশাপাশি জলেরও প্রয়োজন রয়েছে। শুধু প্রয়োজন নয়, ব্যাপক হারে প্রয়োজন, নাহলে লাভের আশা দূরঅস্ত উলটে বীজতলাতেই চারা মরে যেতে পারে। দেনা করে বীজ সার ও কীটনাশক কেনা চাষির তখন মাথায় হাত দিয়ে বসা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না। কেননা তাঁর কাছে যে এক একর জমি ছিল তার পুরোটাই তো তুলোর চারায় ঢেকেছে যেগুলি জল না পেয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। নিজের হাতে বোনা স্বপ্নের এমন অকাল মৃত্য দেখতে না পেরে রয়ে যাওয়া কীটনাশকের বোতল গলায় ঢালা ছাড়া তাঁর যে আর কোনও উপায়ই নেই। তুলোচাষের জন্য ব্যাংক থেকে কৃষিঋণ নিয়েছেন, সেই টাকায় চাষের জমি প্রস্তুত ও বীজ, সার, কীটনাশক কেনা হয়েছে। ঘরে স্ত্রী বিবাহযোগ্যা কন্যা ও স্কুল পড়ুয়া ছেলে রয়েছে। তাদরে জন্য তো কিছু রাখা হয়নি।

বিচিত্র অভিশাপ! চাইলেও মরতে পারেন না আত্মঘাতী কৃষকের স্ত্রীভেবেছিলেন তুলো বাজারে বিক্রি করে দেনা শোধে পাশাপাশি পরিবারের প্রত্যেকের জন্য অন্ন সংস্থান টুকু করে নেবেন, কিন্তু তার তো কিছুই হল না। উলটে নিঃস্ব হয়েগেলেন, এসব থেকে মুক্তি পেতে মৃত্যুই তখন তাঁকে শান্তির হাতছানি দেয়, আর গোটা পরিবার পরে থাকে সহায় সম্বলহীন বিপদের মুখে। গ্রামীণ ভারতের এই চিত্র এখন আকছার ঘটে।

বিচিত্র অভিশাপ! চাইলেও মরতে পারেন না আত্মঘাতী কৃষকের স্ত্রীএরপর কী করেনওই মহিলারা? কী আবার করবেন চেয়েও স্বামীর পথ অবলম্বন করতে পারেন না, সর্বোপরি তিনি তো মা সন্তানদের আর কী করে বিপদে ফেলবেন। অল্প বয়সেই মেয়ের বিয়ে দেন, সেই নববধূর জীবনেও অভিশাপের করাল ছায়া পড়তে সময় লাগে না, একমাত্র ছেলেটি বাবা বেঁচে থাকাকালীন স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে, এখন চাইলেও সেই তার পুরনো দিনে ফিরতে পারে না। মায়ের সঙ্গে থেকে সংসারের জোয়াল টানার কাজে হাত লাগাতে হয়। বাবার মৃত্যু তাকে এই সাজা দিয়ে গিয়েছে। তাই প্রতিটা দিনই ওই নাবালকের কাছে খারাপ দিন। সরকার কী এদের কথা ভাবে?

বিচিত্র অভিশাপ! চাইলেও মরতে পারেন না আত্মঘাতী কৃষকের স্ত্রীনা সরকারের ভাবতে বয়েই গিয়েছে কৃষক মৃত্যু নি্চিত হলে ওই পরিবারকে মোটাটাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, তাই যত সম্ভব কৃষকমৃত্যু নিয়ে নির্বিকার থাকা যায় ততই ভাল। মোদ্দাকথা হল, হাজার কৃষক বছরে আত্মঘাতী হলে তাঁদের ৫০ জনের পরিবার সামান্যতম সরকারি সহায়তা পেয়ে থাকে, বাকিরা কিছুই না। এভাবেই চলে আসছে, ছবিটির বদল আনার কোনও চেষ্টাই হয়নি। আর বিড়ি বেঁধে সংসারের হা মুখ ভরাচ্ছেন কৃষকের বিধবা স্ত্রীরা। সবসময় চাইছেন ছেলেরা যেন কৃষিকে পেশা না করে, মেয়েদের যেন কৃষকের ঘরে বিয়ে না হয়। কিন্তু বিধির বিধান খণ্ডাবে কে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *