কলকাতা: কথা ছিল, এনআরএস জট কটাতে আজ বিকেল তিনটেয় নবান্নে হতে পারে বৈঠক৷ সেই মতো শুরু হয়েছিল প্রস্তুতি৷ স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে শুরু করে প্রশাসনের কর্তাদেরও ডাক পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পড়ুয়াদের দাবি মেনে সমস্ত মেডিক্যাল কলেজের প্রতিনিধিদেও ডাকা হয়েছিল জট কাটাতে৷ সবকিছু ঠিকঠিকই চলছিল৷ কিন্তু, নানান শর্ত চাপিয়ে নবান্নে ডাকা মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা বৈঠক ভেস্তে দিলেন আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা৷ লাগাতার সরকারি ভাবে উদ্যোগ নেওয়ার পরও সমাধানের পথ তৈরি না হওয়ায় এবার কি পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন মুখ্যমন্ত্রী৷
আজ, সকালে নবান্নের বৈঠক ঘিরে সরাসরি প্রশ্ন তোলেন আন্দোলনকারীরা৷ সরকারি ভাবে আমন্ত্রণ না পেলে তাঁরা বৈঠকে যাবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন৷ পরে, তাঁদের দাবি মেনে দেওয়া হয় আমন্ত্রণ পত্র৷ আমন্ত্রণ পাওয়ার পর নয়া শর্ত চাপান আন্দোলনকারীদের একাংশ৷ আজ দুপুরে পড়ুয়াদের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, বৈঠক সরাসরি সম্প্রচার করতে হবে৷ ক্যামেরার সামনে বৈঠক না হলে তাঁরা বৈঠক বয়কট করতে পারেন৷ তবে, আগেই রাজ্যের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, সরকারি বৈঠকে কোনও ভাবেই সংবাদমাধ্যমকে অনুমতি দেওয়া হবে না৷ বৈঠক শেষে সাংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়া যাবে৷ রাজ্যের তরফে এই সিদ্ধান্ত জানানো পর বৈঠকে বসেন পড়ুয়ারা৷ জানিয়ে দেওয়া হয়, ক্যামেরার সামনেই করতে হবে বৈঠক৷ পড়ুয়াদের দাবি মেনে সেই লাইভ সম্প্রচারের জন্য যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে প্রস্তুতি৷ কিন্তু, এর পরও কি বৈঠক বয়কট করলেন পড়ুয়ারা? তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন৷
এর আগে সোমবার সকালে বৈঠক করে পড়ুয়াদের তরফে জানানো হয়, সংবাদমাধ্যমে দেখানো হচ্ছে, আজ বিকেলে বৈঠক৷ কিন্তু, এখনও পর্যন্ত তাঁরা এই বৈঠক প্রসঙ্গে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছুই জানেন না৷ দেওয়া হয়নি কোনও চিঠি৷ এদিন পড়ুয়াদের তরফে ফের, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় মিডিয়ার উস্থিতি দাবি করা হয়৷ পরে, স্বাস্থ্য-শিক্ষক আধিকারিক পড়ুয়াদের বৈঠকে অংশ নেওয়ার আর্জি জানিয়ে আমন্ত্র পাঠান৷ ২৮ জন প্রতিনিধিনির তালিকা চাওয়া হয়৷ পড়ুয়াদের নিয়ে যেতে বাসের ব্যবস্থা করা হয়৷ কিন্তু, তার পরই বেঁকে বসেন পড়ুয়ারা৷ বৈঠক সরাসরি সম্প্রচারের দাবি জানিয়ে নবান্নের বৈঠক বয়কটেরও পথে হাঁটার ইঙ্গিত দেন তাঁরা৷
রবিবার জেনারেল বডির বৈঠকের পর আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা মুখ্যমন্ত্রীর বলে দেওয়া ঠিকানায় আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নেন৷ জেনারেল বডির বৈঠকের পর সাংবাদিক বৈঠক করে এনআরএসের অন্দোলনরত পড়ুয়ারা জানান, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান৷ তবে বৈঠক করতে হবে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনেই৷ বৈঠকে প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজের প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে বলেও জানানো হয়৷ মুখ্যমন্ত্রীর ঠিক করা স্থানেই বৈঠক করা হবে বলেও জানান তাঁরা৷ যদিও, এর আগে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন, তাঁরা আলোচনা চান, কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রীকে এনএরএসে আসতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী মেডিক্যাল পড়ুয়াদের নবান্নে দু’বার ডেকে পাঠানোর পরও আন্দোলনকারীরা নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন৷ আর তার জেরেই ৫ দিন লাটে ওঠে বাংলার চিকিৎসা পরিষেবা৷ পরে, নিজের অবস্থান থেকে সরে এসে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা জানান, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর ঠিক করে দেওয়া স্থানেই বৈঠক করবেন৷
এরপরই নবান্নের তরফে তৎপরতা শুরু হয়৷ সোমবার বিকেল ৩টেয় নবান্নে বৈঠকের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়৷ আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মেনে প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজের প্রতিনিধিরা ওই বৈঠকে উপস্থিতর থাকবে বলে নবান্নের তরফে জানানো হয়৷ তবে, বৈঠক মিডিয়ার সামনে হবে না বলেও নবান্নের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়৷ সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে মিডিয়ার উপস্থিতিতে বৈঠকের উপর সওয়াল করে জানানো হয়, তাঁরা সরকারি ভাবে বৈঠকে অংশ নেওয়ার জন্য কোনও চিঠিই পাননি৷
শনিবার সন্ধ্যায় নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘‘এসএসকেএমে হাসপাতালে আন্দোলনকারীরা অশ্রাব্য আচরণ করেছে৷ আমাকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু, আন্দোলনকারীরা অশ্রাব্য আচরণ করলেও আমরা পুলিশকে দিয়ে কোনও পদক্ষেপ নিইনি৷’’ চিকিৎসক বিদ্রোহ ঠেকাতে এর আগে কোন কোন রাজ্যে কী কী কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তার পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন৷ গুজরাটে চিকিৎসকদের গ্রেপ্তারির প্রসঙ্গ তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যবস্থা রাজ্য সরকারের হাতে৷ কিন্তু, আমরা কোনও কড়া ব্যবস্থা করিনি৷ আমরা আলোচনা করতে চেয়েছি৷ ওদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছি৷ কিন্তু, ওরা সহযোগিতা করেনি৷’’ জানান, রাজ্য সরকার এসমা (জরুরি পরিষেবা জারি রাখতে চিকিত্সকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে সরকার) জারি করতে চায় না৷ শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে করতে চাই রাজ্য সরকার৷ রাজ্যের হাতে আইন থাকলেও কারও কেরিয়ার নষ্ট করতেও চাইনি রাজ্য সরকার৷ বলেন, ‘‘আমরা এসমা জারি করতে চাই না৷ গুজরাটে নরেন্দ্র মোদির সরকার ১৫০ জন ডাক্তারকে গ্রেপ্তার করেছিল৷ আমি চাই, শান্তিপূর্ণ সমাধান হোক৷’’ বলেন, ‘‘ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যবস্থা রাজ্য সরকারের হাতে৷ কিন্তু, আমরা কোনও কড়া ব্যবস্থা করিনি৷ আমরা আলোচনা করতে চেয়েছি৷ ওদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছি৷ কিন্তু, ওরা সহযোগিতা করেনি৷ আমি ওদের জন্য পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষা করে ছিলাম৷ সিনিয়র চিকিৎসকরাও অপেক্ষা করেছিলেন৷ ওরা বলেছিল, আসবে৷ এলোই না৷’’