তৃণমূলের ২১-এর সমাবেশ এবার ভার্চুয়াল, চিন্তায় শাসক শিবির

তৃণমূলের ২১-এর সমাবেশ এবার ভার্চুয়াল, চিন্তায় শাসক শিবির

কলকাতা: করোনার কোপ পড়েছে ২০২০-র একুশে জুলাইয়ের তৃণমূলের শহিদ স্মরণে। প্রতিবছর এক সপ্তাহ ধরে চলে সমাবেশের প্রস্তুতি। গত একদশক ধরে ধর্মতলার মঞ্চে ভিক্টোরিয়া হাউজের ব্যাকগ্রাউন্ড তৃণমূলের শহিদ স্মরণ মঞ্চের চেনা ছবি। প্রায় প্রতিদিন সমাবেশের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে সভাস্থলে একবার অন্তত পরিদর্শনে যান দলের নেতৃত্ব। সমাবেশের আগের দিন রাতে সভাস্থলে যান খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এছাড়াও চলে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের থাকা খাওয়ার বন্দোবস্তের তদ্বির তদারকি। শহরের বহু জায়গায় চলে এলাহী আয়োজন। তবে এবার করোনা সেই সমাবেশে  কোপ ফেলেছে৷ জমায়েত নিষিদ্ধ হওয়ায় সেসব কিছুই এবার হবে না৷ তবে সমাবেশ একেবারেই হবে না তেমন কিন্তু নয়। আইনের ভিতরে থেকেই শহিদ দিবস পালনের কর্মসূচি ঠিক করেছেন মমতা। তৈরি করে ফেলেছেন ভার্চুয়াল ২১ জুলাইয়ের কর্মসূচি।

ফেসবুকে পোস্ট করে ফেলেছেন সেই সূচি। দুপুর ১টাতেই শুরু হবে শহিদ স্মরণ জানিয়েছেন তিনি। দুপুর ১টা থেকে ১ ঘণ্টা হবে ভার্চুয়াল শহিদ স্মরণ। দুপুর ২টোয় কালীঘাট থেকে দলীয় নেতা কর্মীদের ভিডিও বার্তা দেবেন দলনেত্রী। ধর্মতলায় দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পৌরোহিত্যে শহিদ তর্পণ হবে করোনা দূরত্ব বিধি মেনে। তৃণমূল ভবনে শহিদ তর্পণ করবেন দোলা সেন। জেলায় জেলায় যাঁরা ২১ জুলাই উদযাপন করবেন তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট করোনা বিধি তৈরি করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাত ধুয়ে স্যানিটাইজড হয়ে অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হবে। পাড়ায় পাড়ায় বসানো হয়েছে জায়ান্ট স্ক্রিন। সেখানে দলনেত্রী ভিডিও বার্তা দেখানো হবে। দলের কর্মীদের একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া পেজ তৈরি করতে বলা হয়েছে তার মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে ভিডিও বার্তা। শহিদ পরিবারের সদস্যদের নিকটবর্তী বুথে সম্মান জানাবেন স্থানীয় নেতৃত্ব। তবে গোলযোগ সেখানে নয় আসল গোলযোগ হল রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনে। প্রতিবার এই সমাবেশের মাধ্যমে মানুষের মনের খবর পড়তেন পোড় খাওয়া নেত্রী। দলের নেতাদের নরমে গরমে রেখে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত নিজের বার্তা পৌঁছে দিতেন তিনি।

২১শের নির্বাচনের আগে সেই হাওয়া বোঝার ব্যবস্থা পণ্ড হয়ে যেমন সমস্যা তৈরি হল তেমনই বিরোধীদের পাল্টা চাপে রাখার বড়সড় হাতিয়ার হারাল শাসকদল। পাশাপাশি নেত্রীর ভোকাল টনিক কর্মী সমর্থকদের বাড়তি মনোবল জোগাতো। জেলার নেতৃত্বও বুঝে নিতে পারতো কী চাইছেন দলনেত্রী। কিন্তু একবারে গোটা রাজ্যে দলের কর্মী সমর্থকদের কাছাকাছি পৌঁছনোর এই সুযোগ প্রায় মাঠে মারা গেল এবার। ফলে কপালে চিন্তার ভাঁজ তপসিয়ার তৃণমূল ভবনের নেতাদের।

ভার্চুয়াল শহিদ স্মরণ ঘিরে নেতৃত্বের মনেই চোরা আশঙ্কা দানা বেঁধেছে। তাঁদের মতে দলের সবচেয়ে বড় কর্মসূচি ২১ জুলাইয়ের শহিদ স্মরণ। বিরোধীদের ঠেকাতে এর থেকে বড় তীর আর নেই। কিন্তু তা না হওয়ায় সমস্য়া বাড়বে। একদিকে বিজেপি অন্যদিকে বাম কংগ্রেস জোট এই জোড়া ফলার সামনে দাঁড়িয়ে আগামী বিধানসভার আগে এতবড় শো হাতছাড়া হওয়ায় স্বভাবতই খানিকটা ব্যাকফুটে ঘাসফুল শিবির। তবে দলনেচত্রাীর নির্দেশে আপাতত ভার্চুয়াল ব়্যালিতেই মনোনিবেশ করেছেন দলের নেতা কর্মীরা। পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারেও জোর দিয়েছেন নেত্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twenty − six =