নীতীশের প্রশান্ত কি এবার তৃণমূলে? কোন পথে পিকে’র রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ?

নীতীশের প্রশান্ত কি এবার তৃণমূলে? কোন পথে পিকে’র রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ?

নয়াদিল্লি: ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার৷ এবার শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে প্রশান্ত কিশোরকে দল থেকে বহিস্কার করলেন নীতীশ৷ একই সঙ্গে সংযুক্ত জনতা দল থেকে বহিষ্কৃত হলেন সাধারণ সম্পাদক পবন ভার্মা৷ নীতীশের জেডিইউ জানিয়েছে, প্রশান্ত ও পবনের সাম্প্রতিক বয়ান দলবিরোধী৷ দলের নীতি ও শৃঙ্খলা না মানার দায়ে বহিস্কার করা হয়েছে৷ কিন্তু, প্রশ্ন উঠছে নীতীশের দল থেকে বহিস্কার হওয়ার পর এবার কোন পথে বইবে প্রশান্তের রাজনৈতিক কেরিয়ার? তাহলে কি নীতীশ সঙ্ঘ ছেড়ে তৃণমূলী হবেন প্রশান্ত? 

লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর নবান্নে গিয়ে তৃণমূলের দায়িত্ব দেন ভোটগুরু প্রশান্ত কিশোর৷ দলের দায়িত্ব দিয়ে নেতা-কর্মীদের জনসংযোগ বাড়াতে দিদিকে বলো কর্মসূচি চালু করে চমকে দিয়েছেন প্রশান্ত৷ বাংলা বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূলকে জয়ের হ্যাটট্রিক গড়ে নিজের জাত চিনিয়েছেন৷ দলের অন্দরে বেড়েছে প্রশান্ত গুরুত্ব৷ পুরসভা ভোটের লক্ষ্যে টিম প্রশান্ত এখন যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মাঠে নেমেছে৷ ২০২১ নির্বাচনের আগে ফের বড় পরীক্ষা প্রশান্তের৷ 

বাংলার নির্বাচনী ময়দানে প্রথম পরীক্ষায় প্রশান্তের সাফল্য এলেও কমেনি বিতর্ক৷ কারণ, বিজেপির জোটসঙ্গী নীতীশের দলের সদস্য হয়েও তৃণমূলের হাত ধরা প্রশান্ত নিয়ে দলের অন্দরে ছিল নানান প্রশ্ন৷ এবার বিজেপির জোটসঙ্গী জেডিইউ থেকে অপসারণের পর সেই বিতর্ক থেকে খানিক হলেও স্বস্তি মিলেছে প্রাশান্ত ও ঘাসফুল শিবিরে৷ ফলে, এবার সেই বিতর্ক একেবারে ধুয়ে মুছে দিতে ঘাসফুল শিবিরে প্রশান্তের নাম লেখানো এখন সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল৷

কেননা, এর আগে নাগরিকত্বব সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় মোদি-অমিত শাহের সমালোচনায় একাধিকবার সোচ্চার হয়েছেন বিজেপির শরিক জেডিইউ-র সহ সভাপতি তথা নির্বাচনী কৌশলী প্রশান্ত কিশোর৷ কিন্তু এই ইস্যুতে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে শেষে কিনা বিরোধী শিবিরের সরাসরি সমর্থন? ধৈর্যের বাঁধ ভাঙাল বিহারের জেডিইউ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের৷ মতবিরোধ থাকলেও কার্যত গেরুয়া শিবিরের সঙ্গেই জোটবদ্ধ৷

তাই বিরোধী দল কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে নাগরিকত্ব আইন ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বিরোধী প্রস্তাব পাশ হওয়ার পর টুইটে  প্রশান্ত কিশোরের তরফে রাহুল গান্ধী ও প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর প্রতি বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন মেনে নিতে পারলেন না৷ ফলতঃ দলের সহ সভাপতি প্রশান্ত কিশোরকে সরাসরি দল ছাড়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে বসলেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার৷ মঙ্গলবার প্রশান্ত কিশোরের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, 'উনি যদি দলে থাকেন, ঠিক আছে৷ আর যদি দলে না থাকেন, তাহলেও ঠিক আছে৷' গত ১১ জানুয়ারি শনিবার কংগ্রেসের এনআরসি-এনপিআর বিরোধিতায় সমর্থন জানিয়ে প্রশান্ত কিশোর টুইট করেন, ‘‘এনআরসি ও সিএএ প্রত্যাখ্যান করার জন্য কংগ্রেসকে ধন্যবাদ৷ এর জন্য রাহুল গান্ধী ও প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর বিশেষ ধন্যবাদ প্রাপ্য৷’’

প্রশান্ত কিশোর কীভাবে দলে যোগ দিয়েছিলেন৷ এপ্রসঙ্গে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন 'অমিত শাহ আমাকে ওনার (প্রশান্ত কিশোর) বিষয়ে বলেন৷ সেসব উনি ভুলে গিয়েছেন৷ হয়ত দল ছাড়তে চাইছেন!' শাসক নেতৃত্বের কাছে দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার প্রচেষ্টায় এবার কি  তাহলে নীতীশ-প্রশান্ত কিশোরের সম্পর্ক শেষের পর্যায়ে? এনিয়ে রাজনৈতিক মহলে যখন জোর চর্চা তখন কয়েক ঘণ্টা যেতে না যেতেই এই চর্চায় ঘৃতাহুতি দিলেন পিকে৷ 

টুইটে নীতীশের হুঁশিয়ারির বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় জানিয়েছেন ‘‘আমাকে আপনি কেন ও কী ভাবে জেডিইউ-তে এনেছিলেন, তা নিয়ে মিথ্যা বলতে গিয়ে কতটা নীচে নামলেন৷ আমাকে আপনার মতো করে দেখানোর এ এক দুর্বল প্রচেষ্টা!’’ রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বললেন ‘‘আপনার কথা সত্যি হলেও কেউ কি আদৌ বিশ্বাস করবে যে, অমিত শাহের সুপারিশ করা কারও কথা না-শোনার সাহস আপনার এখনও আছে?’’ 

তবে দলের ভাবমূর্তি প্রসঙ্গে বলতে গেলে আজ যে ইস্যুকে কেন্দ্র করে এই বিবাদ, সেই সিএএ আইনের বিরোধিতায় শুরু থেকেই সুর চড়িয়েছেন নীতীশ কুমার৷ যদিও সংসদে ভোটাভুটি চলাকালীন সিএএ-র সমর্থনে তাঁর দল ভোট দিলেও এবিষয়ে একটিও শব্দ ব্যয় করেননি৷ তবে পরে অন্যান্য বিরোধী রাজ্যগুলোর মতই নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়ে বলেছেন ‘‘সিএএ নিয়ে আরও আলোচনা হওয়া প্রয়োজন৷ প্রত্যেকে রাজি থাকলে, বিধানসভা কক্ষেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে৷ আর বলে রাখি, এ রাজ্যে এনআরসি করার প্রশ্নই ওঠে না৷ এর কোনও যৌক্তিকতা নেই৷’’ এই কথাগুলো এখন হয়তো নিজেই ভুলে গেছেন তিনি, নাকি অন্য কোনো সম্প্রতি কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে মোদী-শাহ জুটি যখন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে, তখন বিধানসভার নিরিখে গত দু’বছরে ক্রমশ নিস্তেজ হয়েছে গেরুয়া ঝড়৷ তীব্র অস্তিত্ব সংকটে ভুগছ এখন দল৷ 

দলের তাবড় রাজনৈতিক নেতাদের রণকৌশল স্থির করেন যিনি তাঁর বিবেচনার ওপর আস্থা রাখবেন সাধারন মানুষ এমনটাই স্বাভাবিক৷ আর তিনি যদি হন প্রশান্ত কিশোর তাহলে বিষয়টা আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে৷ কারণ ২০১৪ সালে দেশের বর্তমান শাসককে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী আসনে বসিয়েছিল তাঁরই রণকৌশল৷ এখন তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমোর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং একই সঙ্গে আদমি পার্টির প্রধান তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জন্য রণকৌশল স্থির করেছেন৷ 

তাঁর থেকেও বড় কথা, যে এই বাংলাই আগামী বিধানসভা নির্বাচনে শাসকদলের পাখির চোখ৷ তবে তার আগে বড় পরীক্ষা দিল্লিতে৷ এরই মধ্যেই একের পর এক সিদ্ধান্তের ফলে আমজনতার কাঠগড়ায় দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ভাবমূর্তি৷ প্রশান্ত কিশোরের মত কৌশুলীকে হেনস্থা করে গেরুয়া শিবিরের জোটবদ্ধতা কতটা ফলপ্রসূ হবে তার প্রমাণ দেবে ভবিষ্যৎ৷    

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen + 7 =