তপন মল্লিক চৌধুরী : সমীক্ষার রিপোর্ট বাদ দিলেও বিহারের হাওয়া বলছে ফের বিহারে ক্ষমতার আসনে বসতে চলেছে এনডিএ জোট। রাজনৈতিক বিশেষঙ্গরা বলছেন হাথরস কাণ্ড, লকডাউন, পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা- এর কোনওটাই বিহার বিধানসভা নির্বাচনে কোনও প্রভাব ফেলবে না। এমনকি ভূমিপুত্র সুশান্ত সিঙের মৃত্যু শুরুতে যতটা আলোড়ন তুলেছিল তা দ্রুত মিলিয়ে গিয়েছে। নীতিশ কুমার বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্শিতে বসলেও, তাঁর দল বিহারে বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসাবে উঠে আসতে পারবে না। এবার সেই স্থান দখল করবে বিজেপি, দ্বিতীয় স্থান পাবে সংযুক্ত জনতা দল আর তৃতীয় স্থান পাবে লালুপ্রসাদ যাদব আর তেজস্বী যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল।
লক্ষ্যনীয়; বিহার বিধানসভা নির্বাচন প্রথম দফার ভোটের আগে থেকেই রাজনৈতিক সমীকরণ খুব দ্রুত পালটাতে শুরু করে। এবার নির্বাচনে নীতিশ কুমার মুখ হয়ে উঠতে যেমন পারেন নি, অন্যদিকে আরজেডি নেতা তথা লালু পুত্র তেজস্বী যাদবের জনপ্রিতার থেকে অনেকটাই পিছিয়ে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। বিহার বিধানসভা ভোটের প্রচার পুরোদমে শুরু হওয়ার আগে থেকেই সামাজিক মাধ্যমে প্রচার শুরু হয়। সেখানেও দেখা যায়তেজস্বী যাদবনীতিশ কুমারকে অনেকটাই পেছনে রেখেছেন৷
কেবল তাই নয়, নির্বাচনের আগে সোশ্যাল মিডিয়ার পোষ্টগুলির হিসাব-নিকাষ করে দেখা গিয়েছে, তেজস্বী যাদবনীতিশ কুমারের থেকে ন’গুন বেশি লাইক পেয়েছেন। লক্ষ্যনীয় তেজস্বী যাদবের জনপ্রিতার এই ভিত্তি হল বিহারের তরুন সমাজ। সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে এক মাস সময় পর্যন্ত ফেসবুক পোষ্টের হিসাব নিয়ে দেখা গিয়েছে,মোট ৬৭ টি পোষ্টে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী পেয়েছেন ৩.৭ লক্ষ লাইক আর ৯৪ টি পোষ্টে তেজস্বী যাদব পেয়েছেন ৪৭ লক্ষ লাইক৷
রাজনৈতিক বিশেষঙ্গদের মত, বিহারের তরুন প্রজন্মের ভোটব্যাংক এবার তেজস্বীর দিকেই ঝুঁকে। তাছাড়া বিহারের বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনী প্রচারেও একটা বিষয় নজরে এসেছে যে, তেজস্বী যাদব তার বাবার পুরোন ভোট ব্যাংকের মন জয় করতে অনেকটাই সফল হয়েছেন৷
সম্প্রতি মুঙ্গেরে বিসর্জন কাণ্ডেও নীতিশ কুমার যথেষ্ট চাপে পড়েন। মুঙ্গেরেভাসানের দিন আগে বড় দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন হয়, এটাই দীর্ঘকালের রীতি। এবারপুলিশ মাঝরাতেই যাতে ২৫টি প্রতিমা বিসর্জন হয় তার জন্য পুজো কমিটিগুলোকে চাপ দিয়েছিল। তাতে সাধারণ মানুষপুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ে। সাধারণ মানুষের ছোড়া ইটে প্রায় ২০ জন পুলিশ আহত হন। পুলিশপরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে, শূন্যে গুলি ছোড়ে।প্রাণ হারায় অনুরাগ পোদ্দার। এই ঘটনায়বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়ে নীতিশ কুমারের পুলিশ প্রশাসন। বিসর্জন–কাণ্ডে কোণঠাসা হতে হয়েছে নীতীশনীতিশ কুমারকে৷
করোনা আবহের মধ্যে প্রথম দফায় যত ভোট পড়েছে, তা কিছুটা হলেও চিন্তায় রেখেছে নীতীশ কুমারকে।লালুপুত্র তেজস্বীর প্রচার সভাগুলিতে তরুণ সমাজের অংগ্রহণও নীতীশ কুমারের ঘুম কেড়েছে।তেজসবী বিরোধী মহাজোটের তরফে মুখ্যমন্ত্রী পদ প্রার্থী। তরুণ প্রজন্মের ভোটের ওপর তিনি বাজি ধরেই নীতীশকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। বিগত কয়েক দিন বিহারের বিভিন্ন তেজসবীর জনসভায় কেবলমাত্র তারুণ্যের প্লাবন নয় সব ধরণের মানুষের যে পরিমান ভিড় তা দেখেই বলা যায় যে নীতীশ তেজস্বীর কড়া চ্যালেঞ্জে পড়েছেন৷
নীতিশ যে চাপে পরছেন তা তার প্রচার সভার বক্তৃতা এবং আচরণেই টের পাওয়া যাচ্ছে। কয়েকদিন আগেই লালুর পরিবার নিয়েকুরুচিপূর্ণ কথাবার্তা বলেছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার। তার আগেও তিনি লালুর পরিবারে অপর ব্যক্তিগত আক্রমণ শানিয়েছেন। তবে পাল্টা জবাবে তেজস্বী যাদব যা বলেছেন, তার মধ্যে বাস্তবতা রয়েছে। তেজস্বী টুইটারে লেখেন, ‘শ্রদ্ধেয় নীতিশ কুমারজি ক্লান্ত। তাই ওঁর বস্তাপচা, একঘেয়ে, কথা শুনে শুনে মানুষ হতাশ হচ্ছেন৷’
ঠান্ডা মাথার মানুষ ক্ষোভে রাগে যে কুকথার আশ্রয় নিচ্ছেন তার থেকেই বোঝা যাচ্ছে তিনি আর আগের মতো সহনশীল নেই, তাই ধৈর্য হারাচ্ছেণ। যে কারণে তেজসবী বলেন, ‘নীতিশ কুমার এখন নিরুদ্যম, রক্ষণশীল এবং সঙ্কীর্ণমনা হয়ে গিয়েছেন৷’ নীতিশকেএত বছর ধরে ঠান্ডা মাথার এবং শালীন কথাবার্তার জন্য রাজনীতিতে অন্য চোখে দেখে বিহারের সাধারণ মানুষ ও রাজনীতিকরা। কিন্তু সেই নীতিশ নিজেই এবার প্রবল চাপে। বিরোধীদের চড়া সুর তো আছেই, এর ওপর তেজসবী জয় করে নিয়েছেন তরুণদের মন।তাতেই আরও চাপের মুখে পড়েছেনবর্ষীয়ান নেতা৷