বিহার ভোটে দলের ফল খারাপ হলে নীতীশ কি মুখ্যমন্ত্রী হবেন?

বিহার ভোটে দলের ফল খারাপ হলে নীতীশ কি মুখ্যমন্ত্রী হবেন?

তপন মল্লিক চৌধুরী : মঙ্গলবার বিহার বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফাই ছিল সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ পর্ব।  গতকালের ভোট ছিল দেড় হাজার প্রার্থীর ভাগ্য পরীক্ষা।  কোভিডের মহাসংকটের মধ্যেও প্রথম দফায় যথেষ্ট ভালো ভোট পড়েছিল।ভোটদানের হার আগের নির্বাচনকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল। সে কারনে ধরেই নেওয়া হয়েছিল দ্বিতীয় দফায় ভোটের হার আরও বাড়বে। 

মঙ্গলবার বিহারের ১৭টি জেলার ৯৪টি বিধানসভা আসনের জন্য ১৮,৮২৩টি ভোটকেন্দ্রে মোট ৪১ হাজার ৩৬২টি বুথে ভোটদানের হার ছিল ৫৪.৮৯ শতাংশ। ৯৪টি আসনের মধ্যে লালুর রাষ্ট্রীয় জনতা দল লড়েছে ৫৬টি আসনে, বিজেপি ৪৬টি আসনে এবং সংযুক্ত জনতা দল, জেডি(ইউ)লড়েছে ৪৩টি আসনে।

প্রসঙ্গত; এদিন আরজেডির অন্যতম দুই প্রার্থী লালু প্রসাদ যাদবের দুই পুত্র তেজস্বী যাদব ও তেজপ্রতাপ যাদবের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গিয়েছে। উল্লেখ্য; তেজস্বী এবার বিহার বিধানসভা ভোটে বিরোধীদের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী। তিনি লড়াই করেছেন বৈশালী জেলার রাঘোপুর থেকে। ২০১৫ সালে তিনি বিজেপির সতীশ কুমারকে এই কেন্দ্রেই পরাস্ত করেছিলেন। কিন্তু সতীশ কুমার ২০১০ সালে এই কেন্দ্রেই তেজস্বীর মা, বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাবড়ি দেবীকে হারিয়ে দিয়েছিলেন। বিজেপিরআশা এ বারও সতীশ ২০১০ সালের পুনরাবৃত্তি করতে পারবেন। অন্যদিকে তার ভাই তেজপ্রতাপ দাঁড়িয়েছেন সমস্তিপুর জেলার হাসানপুর আসন থেকে।

মঙ্গলবার বিহার বিধানসভার ২৪৩ আসনের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে ভোট হয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পটনা, ভাগলপুর, নালন্দা, সীতামারি, মধুবনী, দ্বারভাঙা, মুজফ্‌ফরপুর। এদিন ভোটার ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, রাজ্যপাল ফাগু চৌহান, উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল কুমার মোদী, আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব, এলজেপি সভাপতি চিরাগ পাসোয়ান প্রমুখ নেতা। গতকালকের দফায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আসন ছিল মহারাজগঞ্জ। এই কেন্দ্রে প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ২৭ জন।

মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ভোটার ছিলেন জেলপি প্রধান চিরাগ পাসওয়ান। তিনি ভোট দেওয়ার আগে ফের একবার বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর এবারের নির্বাচনের লড়াইয়ের ফল নিয়ে ভবিষ্যৎ বাণী করে বলেন যে, তিনি লিখে দিতে পারেন আগামী ১০ নভেম্বর অর্থাৎ বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরের মুহুর্ত থেকে নীতিশ কুমার আর বিহারের মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন না। চিরাগ এও বলেন, তাঁর নীতি হল বিহার প্রথম, বিহারী প্রথম। চার লক্ষ বিহারীর পরামর্শে ভিশন ডকুমেন্ট তৈরি করা হয়েছে। তিনি জানান, সেই মতোই কাজ তিনি করে যেতে চান। ক্ষমতার অপব্যবহার আর অহংকারের কারণে এর আগেও বিহারের জনতা অনেক বড় বড় নেতাকে ক্ষমতার সিংহাসন থেকে নামিয়ে দিয়েছে। এবারফের সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে।

ওই দিন ভোট দেওয়ার পর রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা তেজস্বী যাদবও একইভাবে নীতিশ কুমারের ভবিষ্যত জানিয়ে দেন। তেজস্বী বলেন এবার বিহার বিধানসভা নির্বাচনে পরিবর্তনের সুনামি আসছে। এই নির্বাচনে বিহারের মানুষ ভোট দেবেন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মুদ্রাস্ফীতির মতো বিষয়গুলিকে মাথায় রেখেই। মঙ্গলবারের পর বিহারে তৃতীয় দফার নির্বাচন ৭ নভেম্বর এবং নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হবে তার তিনিদিন পর ১০ নভেম্বর। সে দিনের পর নীতিশ কুমার আর বিহারের মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন না।

যদিও সমীক্ষা বলছে বিজেপি ফিরে আসবে এবং নীতিশ কুমার আবার বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্শিতে বসবে তা স্বত্বেও রাজনীতিকদের একাংশের ধারণা, নীতীশের নিজের খাসতালুকেই নীতিশের পায়ের তলার মাটি মজবুত নয়। বাঢ়ের মানুষ ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন, সরকারের সেই এলাকা এবং সেখানকার মানুষের উন্নয়নের জন্য কি করেছে। নীতীশ কুমারবিয়াহারের মানুষকে কোনও রোজগারের হদিশ দিতে পারে নি। লকডাউনের সময় নীতিশের সরকার কার্যত ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসেছিল। তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ আরও চড়েছে এই কয়েক মাসে। রাজনীতিকরা বলেন লালুর শাসনের শেষ পর্যায়ে বিহারের মানুষকে তাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ওপর এভাবেই খেপে যেত।

অবস্থাটা কিন্তু মাস পাচ-ছয় আগেও এমন ছিল না। বিহারবাসীর ভরসা ছিলেন নীতীশ কুমার। কিন্তু তারপর থেকেই নীতীশকে ছাড়াই ভোট দেওয়ার কথা ভাবতে শুরু করেন বিহারবাসী। কেবল তাই নয়। প্রশ্ন করেন, বিশেষ করে যুব সমাজনীতীশকে কেন ভোট দেব? বিজেপি যে তা স্বত্বেও নীতিশে ভরশা রেখেছে তা পুরনো কথা, তারা কিন্তু এখন দূরত্ব বজায় রেখেই চলছে। বিজেপির তরফে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রচারে রাজ্য সরকারের সাফল্য নিয়ে একটি কথা নয়, উঠে আসছে কেন্দ্রে মোদী সরকারের সাফল্যের খতিয়ান।

যদিও বিজেপি বলেছে, এনডিএ জিতলে নীতীশ হবেন জোটের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সেই ঘোষণা ছিল ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার আগে। তখনও বিজেপি নেতৃত্বের ধারণা ছিল না যে পরিস্থিতি এতটা খারাপ হবে। ভোটে জেডিইউ যদি ফলখুব খারাপ করে,তা হলে বিজেপি কি প্রতিশ্রুতি রাখবে? সেটাও এখন প্রশ্ন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *