কলকাতা: নারদকাণ্ডে নয়া মোড়৷ এবার মুকুল রায়কে তলব করল সিবিআই৷ মির্জা-মুকুলকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের করতে পারে সিবিআই৷ সিবিআই সূত্রে খবর, বিজেপি নেতা মুকুল রায় শুক্রবার সকাল ১১টায় নিজাম প্যালেসে ডেকে পাঠানো হয়েছে৷ যদিও, বিতর্কিত নারদ ফুটেজে মুকুল রায়ের নাম করে টাকা নিতে মির্জাকে দেখা গিয়েছে! এবার সেই ঘটনা খতিয়ে দেখতে মির্জার মুখোমুখি বসে মুকুল রায়কে জিজ্ঞাসা করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাই সিবিআইয়ের তদন্ত করে আধিকারিকরা৷ সিবিআইয়ের তলব প্রসঙ্গে এখনও পর্যন্ত মুকুল রায়ের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি৷
নারদকাণ্ডে মির্জার গ্রেপ্তারের পর সাংবাদিক বৈঠক করে মুকুল রায় দাবি করেন, এখনও পর্যন্ত তিনি কোনও টাকা নিয়েছেন তা প্রমাণিত নয়৷ নারদ ফুটেজে সেরকম কোনও টাকা নেওয়ার বিষয়ে তাঁকে দেখা যায়নি বলেও দাবি করেছেন মুকুল৷ তিনি কোনও টাকার লেনদেনে ছিলেন না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন৷ মুকুল রায়ের এই মন্তব্যের পরপর সিবিআইয়ের তরফে মুকুল রায়কে ডেকে পাঠানোর ঘটনায় শুরু হয়েছে নয়া জল্পনা৷
গ্রেপ্তারির পর ইতিমধ্যেই বিবিআই হেফাজাতে রয়েছেন আইপিএস এসএমএইচ মির্জা৷ সোমবার পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে থাকার নির্দেশ দিয়েছে নগর দায়েরা আদালত৷ এই প্রথম নারদকাণ্ডে কোনও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করল সিবিআই৷ আইপিএস অফিসার মির্জাকে আজ দুপুরে গ্রেপ্তারের তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়৷ তোলা হয় নগর দায়েরা আদালতে৷ মামলার শুনানিতে সিবিআইয়ের তরফে মির্জাকে গ্রেপ্তার করে প্রভাবশালীদের নাম জানতে জানতে চেয়ে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায় সিবিআই৷ কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার তরফে আদালতে পাঁচ দিনের আবেদন করা হয়৷ সিবিআইয়ের আর্জির পাল্টা বিরোধিতা করেন মির্জার আইনজীবীষ জানানো হয়, কেন তাঁকে সিবিআই হেফাজতে নিতে চাইছে? কারণ তিনি তো এখনও রাজ্য সরকারের অধীনে কর্মরত৷ তিনি কোথাও পালিয়ে যাবেন না৷ ফলের সিবিআইয়ের আর্জি খারিজ করে দেওয়া হোক৷ মামলার শুনানি শেষ হওয়ার পর বেশ খানিকক্ষণ মামলা রায়দান স্থগিত রাখা হয়৷ পরে আজ বিকেল পৌনে পাঁচটা নাগাদ ধৃত মির্জাকে সিবিআই হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত৷
আজ দুপুরে নারদকাণ্ডে প্রথম গ্রেপ্তারি সিবিআইয়ের৷ নারদকাণ্ডে গ্রেপ্তর হলেন আইপিএস অফিসার এসএমএইচ মির্জা৷ আজ তাঁকে জেরার জন্য ডাকা হয়৷ পরে সিবিআইয়ের আধিকারিকরা মির্জাকে গ্রেপ্তার করে৷ সিবিআই সূত্রে খবর, আজ নারদকাণ্ডে আইপিএস মির্জাকে বারবার একই প্রশ্ন করা হয়৷ নারদ ফুটেছে তাঁকে ফোনে কথা বলতে দেখা গিয়েছিল৷ কোনও একজনকে ফেনে ‘এক কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে’ বলে তিনি উল্লেখ করেছিলেন৷ সিবিআই তাঁকে জানতে চান, তিনি কোথা থেকে ওই এক কোটি টাকা পেয়েছিলেন? কাকে সেটা পাঠিয়েছেন? যদিও সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারেননি তিনি৷ এর আগেও মির্জাকে টানা ন’বার জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআইকে খুশি করতে পারেননি তিনি৷ আর সেই পরিপ্রেক্ষিতেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর৷
Central Bureau of Investigation (CBI) arrests Senior IPS officer SMH Mirza in connection with Narada sting case. pic.twitter.com/HqYC2FsgOx
— ANI (@ANI) September 26, 2019
এর আগে ‘গুরু’ মুকুল রায়কে জেরার পর আইপিএস অফিসার মির্জাকে সাসপেন্ড করে নবান্ন৷ মির্জা বর্ধমানের পুলিশ সুপার পদে থাকাকালীন নারদকাণ্ডে মুকুলের হয়ে টাকা নেন বলে অভিযোগ! মির্জা মুকুল রায়কে ‘গুরু’ বলতেও শোনা যায়৷ যদিও পরে মুকুল রায় টাকা বিষয়টি অস্বীকার করেন৷ নারদ ফুটেজে মির্জাকে টাকা নেওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য রাজনীতি বিতর্ক তৈরি হয়৷ অভিযোগ, মির্জা ব্যারাকপুর পুলিশে কমান্ড্যান্ট থাকার সময় তাঁর অত্যাচারে এক পুলিশকর্মী আত্মহত্যা করেন৷ পুলিশকর্মী পরিবার সরাসরি অভিযোগ তোলেন মির্জার বিরুদ্ধে৷ এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে মির্জাকে সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়৷ অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা ছিল মির্জার৷
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষমতায় আসার পর ১৫ আগস্ট তাঁকে বিশেষ পদক দিয়ে সম্মান জানানো হয়৷ ২০১৪ সালের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের সময় পুলিশের নিস্ক্রিয়তার অভিযোগে তাঁকে সরিয়ে দেয়া হয়৷ এরপর লোকসভা নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে৷ পরে তাঁকে পুরানো পদে ফিরিয়ে দেওয়া হয় নবান্নের তরফে৷ নারদ ফুটেজে অন্যতম ভূমিকায় ছিলেন তিনি৷ তৎকালীন তৃণমূল নেতা মুকুল রায়ের নাম করে নারদার থেকে ৫ লক্ষ টাকা নিতে দেখা যায় মির্জাকে! বিনিময় নারদকর্তা ম্যাথুকে তৎকালীন পুলিশ সুপার বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন৷ এই নিয়ে শুরু হয় তদন্ত৷ এবার সিবিআইয়ের তদন্ত শুরু হওয়ার পরপর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে খবর৷
অন্যদিকে, নারদহুলে বিদ্ধ ধৃত মির্জার গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘‘নারদকর্তা ম্যাথুকে অপরাধী বলে প্রমাণের বহু চেষ্টা করা হয়েছে৷ নরদকাণ্ডে সিবিআই সঠিক পথেই যাত্রা শুরু করে দিয়েছে৷ আমরা চাই, তদন্তের গতি এভাবেই এগতে থাকুক৷’’