তৃণমূল বিধায়কের ফেসবুক পোস্ট ঘিরে জল্পনা, ফের বিস্ফোরক মিঠুন, বঙ্গ রাজনীতিতে নতুন চমক?

তৃণমূল বিধায়কের ফেসবুক পোস্ট ঘিরে জল্পনা, ফের বিস্ফোরক মিঠুন, বঙ্গ রাজনীতিতে নতুন চমক?

নিজস্ব প্রতিনিধি: বিজেপির সংগঠনকে চাঙ্গা করতে রাজ্যে বিশেষ দায়িত্ব পেয়েছেন সুপারস্টার ‘মহাগুরু’ মিঠুন চক্রবর্তী। কয়েক মাস আগের কথা। মিঠুন কলকাতায় সেই সময় সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছিলেন বিজেপির সঙ্গে নাকি ৩৮ জন তৃণমূল বিধায়ক যোগাযোগ রাখছেন। এমনকী এটাও বলেছিলেন তাঁদের মধ্যে ২১ জন সরাসরি তাঁর সঙ্গে নাকি যোগাযোগ রেখেছেন। যদিও মিঠুনের সেই দাবি তখন উড়িয়ে দেয় তৃণমূল। কিন্তু শনিবার কলকাতায় এসে ফের একই দাবি করলেন মিঠুন। ‘ডিস্কো ড্যান্সার’ জোরের সঙ্গে বললেন কোনও ভিত্তিহীন কথা তিনি বলেন না। তৃণমূলের বহু বিধায়ক যোগাযোগ রাখছেন বিজেপির সঙ্গে। আর একই সময় হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের তিনবারের তৃণমূল বিধায়ক সমীর পাঁজা যে ফেসবুক পোস্ট করেছেন তা নিয়ে নতুন জল্পনা শুরু হয়েছে। সেই পোস্টে তাঁর যথেষ্ট অভিমান ঝরে পড়ছে। উল্লেখ্য দীর্ঘদিন ধরেই ‘ডাকাবুকো’ নেতা হিসেবে পরিচিত এই তৃণমূল বিধায়ক। তিনি ফেসবুক পোস্টে যা লিখেছেন তাতে তিনি দল ছাড়তে পারেন বলে জল্পনা তুঙ্গে। 

শনিবার ফেসবুকে তিনি লিখেছেন,” মহান নেত্রী আছেন বলেই আমি আজও তৃণমূল দল ছেড়ে যাইনি। কারণ কত ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে, নানান ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ৩৮টা বছর এই মহান নেত্রীর সঙ্গে একজন সৈনিক হিসেবে কাজ করতে করতে এখন বড়ই বেমানান লাগছে নিজেকে। আমার মতো অবিভক্ত যুব কংগ্রেসের আমল থেকে যারা আছে, তারা আদৌ কোনও গুরুত্ব পাচ্ছে কি বর্তমানে? তাই আর কি, আমার যাওয়ার সময় হল, দাও বিদায়!” সেই সঙ্গে পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন,”আজ অবধি মিথ্যা নাটক করে দলীয় নেতৃত্বের কাছে ভাল সেজে একটা মেকি লিডার হতে চাই না আমি। না হলে কবে টাটা বাই বাই করে দল ছেড়ে চলে যেতাম আমি”।স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূল বিধায়কের এই ফেসবুক পোস্ট দলকে যথেষ্ট অস্বস্তিতে ফেলেছে। আর এই ফেসবুক পোস্ট দেখার পরেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন হাওড়া গ্রামীণ জেলা তৃণমূলের সভাপতি ও বাগনানের বিধায়ক অরুণাভ সেন। তবে সমীর পাঁজার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি তিনি।

উদয়নারায়ণপুরের তৃণমূল বিধায়ক সমীর পাঁজাকে সকলে লড়াকু নেতা হিসেবেই জানেন। তাই এদিন সমীরের এই ফেসবুক পোস্ট নজরে পড়তেই রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী তথা হাওড়ার জেলায় দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা অরূপ রায় থেকে শুরু করে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম সকলেই অবাক। বিষয়টি নিয়ে ফিরহাদ বলেন,”সমীর আমাদের পুরনো ছেলে। দীর্ঘদিন লড়াই করে সংগঠন করছে। কিছু পাওয়া না পাওয়া থাকতেই পারে। সেই থেকেই হয়ত এমনটা লিখে ফেলেছে। আশা করছি শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা জানার চেষ্টা করা হবে। তার সমাধানও করা হবে বলে আমি বিশ্বাস করছি”। একই ভাবে রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায় বিষয়টি নিয়ে বলেন,” সিপিএম আমলে উদয়নারায়ণপুরে বহু তৃণমূল কর্মী যখন খুন হয়েছেন তখন সাহসের সঙ্গে তিনি দল করেছেন। কোনও কারণে তাঁর সঙ্গে দলের দূরত্ব তৈরি  হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সঙ্গে কথা বলব৷”

আসলে প্রত্যেকটি জেলায় দলীয় সংগঠন ঢেলে সাজানো হয়েছে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে। সেখানে কারও গুরুত্ব বেড়েছে, আবার কারও কমেছে। তবে কি এই বিষয়গুলির প্রতি ইঙ্গিত করেই সমীর পাঁজা এই ধরনের অভিমানী পোস্ট করেছেন? এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।  এই পরিস্থিতিতে মিঠুন যে দাবি করেছেন তাতে দুইয়ে দুইয়ে চার হয় কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট কৌতূহল তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। তবে কি মিঠুনের দাবি মতো তৃণমূল ধীরে ধীরে ভাঙতে শুরু করবে? যদিও সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। কিন্তু মিঠুন যেভাবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে একই কথা নতুন করে বলেছেন তাতে বিষয়টি একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না বলেই ওয়াকিবহাল মহলের মত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

twelve − twelve =