কলকাতা: লোকসভা নির্বাচনের ব্যাপারে জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেশ করবে নবান্ন । সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, রিপোর্ট পেশ করা হবে । তৃণমূল সর্বোচ্চ নেতৃত্ব মনে করছেন, এর পর ২৬ তারিখেই ভোটের ঘোষণা করে দিতে পারে নির্বাচন কমিশন । কেননা গত তিনটি লোকসভা ভোটের ক্ষেত্রে মোটামুটি ভাবে মার্চ মাসের ৫ তারিখের মধ্যে ভোটের নির্ঘন্ট ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছিল । মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরার নেতৃত্বে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ সম্প্রতি রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করতে এসেছিলেন কলকাতায় । বাংলার সবকটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি দলের সঙ্গেও তখন বৈঠক করেন কমিশনের কর্তারা । ওই বৈঠকের পরেই কমিশনের নির্দেশে নিয়মমাফিক রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসনে বদলি করেছে নবান্ন । কাকে, কোথায় বদলি করা হয়েছে সে ব্যাপারেই সোমবার নির্বাচন কমিশনের কাছে রিপোর্ট পেশ করবে রাজ্য সরকার । ইভিএমে কারচুপির ব্যাপারে গত দেড় দু বছর ধরে জাতীয় রাজনীতিতে সরব বিরোধীরা । এমনকি এক সময়ে তৃণমূলও ইভিএম বাতিলের দাবি তুলেছিল । তবে কমিশন তাতে রাজি নয় । বরং ভোট প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা রাখতে ইভিএমের পাশাপাশি প্রতিটি বুথে ভিভিপ্যাট রাখা হবে বলে জানিয়েছে কমিশন । তা ছাড়া প্রতিবন্ধীদের ভোট দানের সুবিধা করে দেওয়া থেকে শুরু করে এ বারের ভোটের সময় বেশ কিছু অভিনব পদক্ষেপও করতে পারে নির্বাচন কমিশন ।
পাঁচ বছর আগে ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা ভোট হয়েছিল পাঁচ দফায় । কিন্তু এ বার এখনও পর্যন্ত নয়াদিল্লির নির্বাচন সদন সূত্রে যা ইঙ্গিত তাতে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসের কর্তারা মনে করছেন, সাত বা তারও বেশি দফায় পশ্চিমবঙ্গে ভোট করাতে পারে জাতীয় নির্বাচন কমিশন । শুধু তাই নয়, পশ্চিমবঙ্গের লোকসভা ভোটে এ বার অভূতপূর্ব কড়াকড়ি করতে পারেন কমিশনের কর্তারা । সে জন্য বাইরের রাজ্য থেকে প্রচুর আইএএস ও আইপিএস অফিসারকে বাংলায় আনা হতে পারে যথাক্রমে অবজার্ভার ও পুলিশ অবজার্ভার হিসাবে । তবে ভোটের নির্ঘণ্ট যেদিনই ঘোষণা হোক, কমিশন সূত্রে খবর, পশ্চিমবঙ্গে এ বার অবাধ ভোট করানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন । এমনিতেই লোকসভা ভোটে আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয় । এবার আগের থেকেও বেশি সিআরপিএফ মোতায়েন করা হতে পারে । কারণ, ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের মতোই পশ্চিমবঙ্গে এবার ৭ দফায়, বা তার বেশি দফায় ভোট করানো হতে পারে । ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা ভোটে হয়েছিল পাঁচ দফায় । ২০০৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে তিন দফায় ভোট হয় । প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্রে, স্পর্শকাতর বুথ এলাকায় ভোটের ৪৮ ঘন্টা আগে থেকে রীতিমতো ১৪৪ ধারা জারি করে দিতে পারে কমিশন । সবাই যাতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, এবং ভোটারকে যাতে কেউ ধমকে চমকে বুথ পর্যন্ত যাওয়া বন্ধ করতে না পারে তা সুনিশ্চিত করতে পাড়ায় পাড়ায় রুট মার্চ করবে কেন্দ্রীয় বাহিনী । তা ছাড়া প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্র পিছু একজন করে পুলিশ অবজার্ভার নিয়োগ করা হবে । জাতীয় নির্বাচন কমিশনের এক কর্তার কথায়, বাংলায় বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের অভিযোগ যে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্য পুলিশের অধীনে থাকে । ফলে বহু সময় রাজ্য পুলিশ কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঠিক মতো ব্যবহার করে না । মূলত সেই কারণেই পুলিশ অবর্জাভার নিয়োগের কথা ভাবা হয়েছে ।