তপন মল্লিক চৌধুরী : জল্পনাটা চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। এমনকী মুকুল রায় নিজেও চাইছিলেন যাতে জাতীয়স্তরের রাজনীতিতে নিজের জায়গা ফিরে পাওয়া যায়। চেষ্টায় তাঁর খামতি ছিল না। তিন বছর আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে এসেছিলেন। বিজেপিতে যোগ দিলেও বিজেপির সঙ্গে মুকুলের ক্রমশই দূরত্ব বাড়ছিল। তিনি নিজেও বুঝছিলেন বিজেপি দলে তিনি তেমন গুরুত্ব পাচ্ছেন না। তৃণমূল থেকে তিনি অনেককেই বিজেপিতে এনেছিলেন, দু’এক জন ছাড়া বাকি সবাই আবার তৃণমূলে ফিরে গিয়েছেন। তাছাড়া দল ভাঙিয়ে এনে বিজেপির সংখ্যা বাড়ানোর রাজনীতি যে বেশিদিন চলে না, সেকথাও বলার অপেক্ষা রাখে না। অবশেষে বিজেপিতে বড়সড় পদ পেয়েছেন মুকুল রায়। সর্বভারতীয় বিজেপির সহ সভাপতি করা হয়ছে মুকুল রায়কে।
মুকুল রায় নিজে মুখে একথা স্বীকার না করলেও রাজনৈতিক মহলে কান পাতলে একথা প্রায়ই শোনা যায়; দুঁধে এই রাজনীতিবিদ বরাবরই মোদী-শাহদের আস্থাভাজন। কাজের রদবদলে মুকুল রায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান পেয়েছেন। তিনি এখন এমন একজন পদাধিকারী যাকে আর বাংলায় রাজনীতি করতে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কাছে জবাবদিহি করতে হবে না। এবার তিনি কাজের পরিসরও পাবেন এবং সম্মানও পাবেন।ধৈর্য ধরে তিনি এতদিন অনেক অসম্মান মাথা পেতে নিয়েছিলেন।তার ফল তিনি হাতে গরম পেলেন।
মুকুল রায় ছাড়াও বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি পদে নিযুক্ত হলেন ছত্তীসগড়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিং, রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া, ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা রঘুবর দাস-সহ মোট ১২ জন। বীজপুরে বাড়িতে বসেই তিনি এই সুখবর পান। প্রথম প্রতিক্রিয়ায় বলেন, দল তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ আসনে বসানোয়, তাঁর দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। বাড়িতে বসেই মুকুল রায় তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী এবং তিনি কীভাবে কাজ করতে চান সে বিষয়ে বলেন, তাঁর লক্ষ্য হবে বিজেপির জন্য জয় ছিনিয়ে আনা। তবে দল যে দায়িত্ব তাঁকে দেবে, তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবেন। একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবেন। সে বিহার ভোট হোক বা বাংলার ভোট, লক্ষ্য হবে বিজেপির জন্য জয় ছিনিয়ে আনা।
কিন্তু বাবা গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতেই আচমকা যেন হুংকার ছাড়তে শুরু করেছেন ছেলে শুভ্রাংশু। তাঁর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়াতেই শুভ্রাংশু গর্জে ওঠেন। তার প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই ‘বদলা’র বার্তা। কারণ; মুকুল রায় বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি মনোনীত হওয়ার পরই গর্জে ওঠেন পুত্র শুভ্রাংশু। বাবা বিজেপিতে পদ পেতেই শুভ্রাংশুর হুঙ্কার দিয়েই বলে ওঠেন, বদলের আগেই বদলা হবে। কেন আগেই বদলা? তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন মুকুল-পুত্র।
তবে শুভ্রাংশুর- বদলের আগেই বদলা হবে, এই মন্তব্যের পরই রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনীতির একাংশ তার মন্তব্যকে উস্কানিমূলক বলে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু মুকুল পুত্র কাদের বিরুদ্ধে কাদের লাগ লাগ লাগিয়ে দেবার চেষ্টা করছেন, তা নিয়েও বিতর্ক দাঁনা বেঁধেছে। তাঁর বাবার প্রথম প্রতিক্রিয়া যতটা শান্ত ছিল, ততটাই রণংদেহি ছেলের প্রতিক্রিয়া। বদলের আগেই বাংলায় বদলা শুরু হবে- শুভ্রাংশু কেবল যে একথাই বলেন তা নয়। তার কারণও তিনি ব্যাখ্যা করেন। তিনি জানান, বদলের আগেই বাংলায় বদলা হবে। কেননা বদল হয়ে গেলে আর বদলা নেওয়া যাবে না। তখন রাজধর্ম পালনের কর্তব্য এসে যাবে। তাই সেই বদলা নেওয়ার কাজটা বদলের আগেই সেরে ফেলতে হবে।এ ধরণের মন্তব্য উস্কানিমূলক, রাজনীতিতে হিংসার ইন্ধন যোগায়, একের বিরুদ্ধে অন্যজনকে আক্রমণাত্মক করে তোলে। যার ফলে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে হিংসা ঢুকে পড়ে, আবহাওয়া উত্তপ্ত হয়, পরিনতি হয় খুন-জখম-রক্তারক্তির ঘটনা।
অথচ এই শুভ্রাংশু বাবা মুকুল রায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার পরও তৃণমূলেই ছিলেন দীর্ঘদিন। তখন তিনি নিজের দুটি সত্ত্বাকে তুলে ধরেছিলেন। আদর্শ মেনেছিলেন পিসিকে। তাঁর রাজনৈতিক সত্ত্বা যে মমতা বনদ্যোপাধ্যায়কে আদর্শ মেনেছে সে কথা প্রমানের চেষ্টা করেছেন যাথাসাধ্য। এরপর অবশ্য শুভ্রাংশু পাল্টি খেয়ে বিজেপিতে যোগ দেন। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর তাঁর মুখে কখনো তীব্র তৃণমূল বিরোধি কোনও মন্তব্য শোনা যায় নি। কিন্তু তাঁর বাবা গতকাল আরও অনেকের সঙ্গে বিজেপির সহ সভাপতি পদ পাওয়ায় আচমকা গর্জে উঠলেন এবং প্রকাশ্যে বদলার বার্তা ছুড়ে দিলেন।