বিশেষ প্রতিবেদন: রাজ্য রাজনীতির হাওয়ায় ক’দিন ধরে একটা খবর চেত্তা খাচ্ছে। শিরোনামে মুকুল রায়। রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ঘুরপাক খাচ্ছিল বিজেপি থেকে মুকুলের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন নিয়ে। একাংশের বক্তব্য, বিজেপির শীর্ষ এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মুকুলের সম্পর্ক আর তাল-মিল হচ্ছে না। মুকুল সাংবাদিক বৈঠক করলেন অথচ মমতা বা তৃণমূলের বিরুদ্ধে একটি বাক্য খরচ করলেন না। তবে কি সারদার চার্জশিটের পর বঙ্গ রাজনীতিতে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ হতে চলেছে?
বঙ্গ রাজনীতি একুশের ভোট ঘিরে এখনও তপ্ত নয় মোটেও। কিন্তু তৃণমূল ও মুকুলের পুনর্মিলনের খবরে হাওয়া একটু তেতে উঠছিল। কিন্তু মুকুল নিজেই সাংবাদিক সম্মেলন করে সে সম্ভাবনায় জল ঢেলে স্পষ্ট জানালেন তিনি বিজেপিতেই আছেন।
আরও পড়ুন- মমতার বিরুদ্ধে না গিয়ে বিজেপিতেই আছেন বললেন মুকুল
তবে তিনি মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে কোনও কথা বললেন না। কেবলমাত্র বললেন, বর্তমানে রাজ্যে লকডাউন নিয়ে যে কড়াকড়ি হয়েছে সেরকম আগে হলে এত মৃত্যু ও সংক্রমণ হত না। অন্যদিকে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ রোজই মমতার বিরুদ্ধে কথা বলেন, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরেন। মুকুল রায় সাংবাদিকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে সেই সুযোগ পেয়েও কার্যত মমতা ব্যানার্জি সম্পর্কে নিশ্চুপ থাকলেন ৷
কুইন্ট সূত্রে খবর, মার্চ মাস থেকে তৃণমূলে ফেরার জন্য মুকুল রায় ও তাঁর ছেলে দিদিকে মেসেজ করছেন। দিদি নাকি এখনো না বলেননি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখার জন্য বলেছেন। এমন সময়ে বাংলা দখলের জন্য দিল্লিতে গেরুয়া শিবিরের এক সপ্তাহের বৈঠক, ঠিক তখনই কলকাতায় ফিরে এলেন মুকুল রায়।
আরও পড়ুন- বিজেপিতে থাকছেন মুকুল রায়? নাকি ফিরবেন পুরোনো দলে? কী বলছে মুকুল পূর্বাভাস?
রাজ্য বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, দিলীপ গোষ্ঠীর সঙ্গে মুকুলের মতবিরোধ কার্যত তুঙ্গে পৌঁছেছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতারা এমনকি সংঘও মুকুলের চেয়ে দিলীপ গোষ্ঠীর ওপরেই ভরসা রাখে। মুকুলকে এখন পাত্তা দেয় না মুকুলের হাত ধরে যারা তৃণমূল থেকে বিজেপিতে গিয়েছিলেন তাঁরাও। লকেট, সৌমিত্র, নিশীথ, সব্যসাচী, অর্জুন সহ আরও অনেকেই দিলীপ ঘনিষ্ঠ।
দিলীপ গোষ্ঠীর তরফ থেকে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে নাকি আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে দল আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় ১৯০টির কাছাকাছি আসন পাবে। মুকুলের দাবি, ১৯০ তো দূর কি বাত ৫০টি আসন পাবার মতোও অবস্থা নেই রাজ্য বিজেপির। মুকুলের এই সব মতামত নাকি বিলকুল না পসন্দ দিলীপের।
আরও পড়ুন- ‘বাংলা-জয় সহজ নয়’, মুকুলে বিরাগভাজন বিজেপি! বাংলায় ফিরে কী বার্তা গেরুয়া নেতার?
মুকুল নিজেও বোঝেন; গত তিন বছরে কোনও বড় পদ পাননি তিনি। ফেরা হয়নি রাজ্যসভায়। জোটেনি মন্ত্রিত্বও। রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগও নামমাত্র। বঙ্গে রাজনীতি করলেও মুকুল রায়ের ঘাঁটি এখনো সেই নয়া দিল্লি। মুকুল অনুগামীরাই মুকুলের এই পারফর্মেন্সে হতাশ সেখানে বিজেপি তাঁকে কেন গুরুত্ব দেবে? মমতাকে রুখতে? বিজেপি এখনও তো পুরোদমে ময়দানে নামায় নি মুকুলকে?
বিজেপির মূল চালিকাশক্তি আরএসএস। বিপরীত রাজনৈতিক শিবির থেকে গিয়ে কঠোর আনুগত্য প্রমাণ না করতে পারলে বিজেপিতে হালে পানি পাওয়া সহজ নয়। সংগঠক হিসাবে মুকুলের সুনাম থাকতে পারে, কিন্তু তাঁর জনসমর্থন কোথায়। জনতার ভোটে আইনসভার সদস্য মুকুল হননি।
আরও পড়ুন- তৃণমূলের গুরুদায়িত্বে বাম-কংগ্রেসের ঋতব্রত-ওমপ্রকাশ! প্রাক্তন তৃণমূলীরাও এখন ‘বিশুদ্ধ বিজেপি’
ভুরিভুরি দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। তৃণমূল দলের তরফে চিটফান্ডের সঙ্গে বোঝাপড়ার দায়িত্ব ছিল মুকুলেরই ওপরে। ফলে ভবিষ্যতে চিটফান্ড কাণ্ডে তৃণমূলকে চাপে ফেলতে গেলে মুকুলের গায়েও হাত দিতে হবে বিজেপিকে। আগে থেকে তাঁকে বড় পদ দিয়ে নিজের হাত নিজেই পোড়াবে বিজেপি?
লোকসভা নির্বাচন মিটতেই বারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে পুরসভা ও পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদের ঝাঁকে ঝাঁকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে বিজেপিতে যোগদান করিয়েছিলেন মুকুল। সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই সেই সব জনপ্রতিনিধিরা ঝাঁকে ঝাঁকে ফিরে গিয়েছেন তৃণমূলে। এ ধরণের হঠকারী কাজ কি কোনও দল ভাল ভাবে নেয়?
আরও পড়ুন- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন মমতা: সুজন
নিজের এলাকায় কি মুকুল বিজেপির সংগঠন চাঙ্গা করতে পেরেছেন? মুকুলের খাসতালুক কাঁচরাপাড়ায় বিজেপির সংগঠন তো অর্জুন সিংয়ের দৌলতে। বিজেপি ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের পিছনের সারিতে রাখে। মুকুলের এখনই বয়স ৬৬ বছর। মুকুল তৃণমূলে যতবড় ভাঙন ধরাবে বলে মনে হয়েছিল তেমনটা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে দলে চিটফান্ড কেলেঙ্কারির একজন কুশীলবের গুরুত্ব বাড়ানো যে কাজের নয় তা বিজেপি দেরিতে হলেও বুঝেছে।