নয়াদিল্লি: হ্যাঁ, কেঁচো খুড়তে গিয়ে কেউটে না বেরিয়ে পড়ার কথায় বলা হচ্ছে। দেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘ভুয়ো পরিচয়’ দিয়ে ভারতে ঘাঁটি গেড়ে থাকার অভিযোগকে কেন্দ্র করে এমনই আশঙ্কা ক্রমেই ঘন হচ্ছে। উঠে আসছে একাধিক প্রশ্ন। কারণ, এ কেউটে যে সে কেউটে নয়!
নিশীথ প্রামাণিক ‘বাংলাদেশি’? স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নাগরিকত্বে নিয়ে ওঠা অভিযোগ সত্য হলে বাংলার শাসক তৃণমূল কি দায় এড়িয়ে যেতে পারবে? প্রশ্ন তুলেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা৷ কারণ, কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ তথা অসমের কংগ্রেস নেতা রিপুন বোরার দাবি বা অভিযোগ সত্য হিসেবে ধরে নিলে এই মোক্ষম প্রশ্নটা উঠে আসবেই৷
রিপুনের অভিযোগ অনুযায়ী, অমিত শাহের সহযোগী হিসেবে নিযুক্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক ভারতের নাগরিকই নন! তিনি আদতে বাংলাদেশের পলাশবাড়ির হরিনাথপুরের বাসিন্দা। কম্পিউটার কোর্স করার অছিলায় ভারতে ঢুকে তিনি কোচবিহারে থেকে যান। রাজনীতির হাতে খড়ি তৃণমূলে৷ পরে বিজেপি-তে যোগ দিয়ে হন সাংসদ। বর্তমানে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী৷ রীতিমতো তথ্য সহকারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে এমনই বিস্ফোরক লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন রিপুন৷
আর এই অভিযোগকে সামনে রেখেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অভিযোগ সত্য হিসেবে প্রমাণিত হলে তৃণমূল বা বিজেপি কোনও পক্ষই দায় এড়িয়ে যেতে পারে না৷ ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী’কে তৃণমূল কেন দলে নিয়েছিল, এই প্রশ্ন যেমন উঠছে, তেমনই ‘বাংলাদেশি’কে কেন দেশের সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ করে দিলেন গেরুয়া শিবিরের শীর্ষ নেতারা৷ এই প্রশ্নও কিন্তু হাঁটি হাঁটি পা পা করে হাজির হচ্ছে তারপরেই৷ যদিও, কংগ্রেস নেতা রিপুন বোরার তোলা অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষ বিষয়! যার সত্যতা কোনও ভাবেই যাচাই করে দেখেনি আজ বিকেল ডট কম৷
কংগ্রেস সাংসদের অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে তো বড়সড় প্রশ্নচিহ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যেতে পারে দেশের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা অফিসারেরাও৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাজনীতির কারবারিরা এলাকার দখল নেওয়ার তাগিদে অনেক সময়ই অসৎ উপায় অবলম্বন করে থাকেন৷ অতীতে একাধিক ঘটনায় সেই প্রমাণ বারে বারে সামনে এসেছে৷ কিন্তু দেশের ইন্টেলিজেন্স বিভাগের পদস্থ আধিকারিকরা তাহলে কি কিছুই জানতেন না? না কি, এখানেও সেই ‘প্রভাবশালী’ সমীকরণ?
ঘটনাচক্রে, দেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ‘অনুপ্রবেশকারী’- অভিযোগ সামনে আসার পরই সরব হয়েছে তৃণমূল৷ শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু টুইটারে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘এই ধরনের লোককে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করার আগে কেন কোনও কিছুই খতিয়ে দেখা হল না?’’ নিশীথের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অপরাধমূলক মামলা চলছে, মনে করিয়ে দিয়ে রাজ্যের আর এক মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের প্রশ্ন, ‘‘অনুপ্রবেশকারীর হাতেই যদি দেশের স্বরাষ্ট্র দফতর থাকে, তাহলে সেই সরকারকে নিয়ে আর কি বলা যেতে পারে?’’ পাল্টা যুক্তি হিসেবে বিজেপির বঙ্গের নেতা সায়ন্তন বসুর ব্যাখ্যা, ‘‘তর্কের খাতিরে অভিযোগ মেনে নিলেও এটা তো ঠিক যে, নিশীথ হিন্দু। বিজেপি মনে করে, সব হিন্দুই ভারতীয়।’’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, হাস্যকর যুক্তি পাল্টা যুক্তির মধ্যে না গিয়ে অবিলম্বে ঘটনার প্রকৃত তদন্ত হওয়া দরকার৷ নিশীথ দোষী প্রমাণিত না হলে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে যেমন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিও তোলা হয়৷ তেমনই পাল্টা প্রশ্নটাও কিন্তু উঠে আসছে৷ যদি সত্যি নিশীথ বাংলাদেশি হন? তাহলে বাংলাদেশিকে এদেশে অনুপ্রবেশ করানোর ‘দায়’, দলে যোগদান কি তৃণমূল এবং বিজেপির শীর্ষ নেতারা মাথা পেতে স্বীকার করে নেবেন? নাকি আরও পাঁচটা ঘটনার মতো চাঞ্চল্যকর এই তথ্যও চাপা পড়ে যাবে সরকারি লাল সুতোর ফাঁসে? প্রশ্ন তুলছে নাগরিক সমাজ!