উত্তরবঙ্গ থেকে জঙ্গলমহল হয়ে খোদ দিলীপ ঘোষের গড়, বিজেপির ভাঙন অব্যাহত

উত্তরবঙ্গ থেকে জঙ্গলমহল হয়ে খোদ দিলীপ ঘোষের গড়, বিজেপির ভাঙন অব্যাহত

তপন মল্লিক চৌধুরী : আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্য দখলে মরিয়া বিজেপি নেতৃত্ব সংগঠন মজবুত করতে আদাজল খেয়ে নেমেছে ঠিকই কিন্তু দলবদলের রাজনৈতিক পরিস্থিতির যে ছবি কিছুকাল ধরে দেখা যাচ্ছে তাতে গেরুয়া শিবিরে ভাঙন লেগেই আছে।প্রায় রোজই দু-একজন করে বিজেপি নেতা নিজের দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন। আর বিজেপি ছেড়েই পুরনো দলের দলের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছেন তাঁরা।

 

প্রসঙ্গত, দু’দিন আগে উত্তরবঙ্গের কোচবিহারের তৃণমূলে যোগ দিয়ে দুর্নীতি ইস্যুতে পুরনো দলকে আক্রমণ করলেন দলত্যাগী বিজেপি নেতা উৎপলকান্তি দেব।এরপরই বিজেপি নেতাদের দলত্যাগ নিয়ে শুরু হয় রাজনৈতিক চাপানউতোর।

কোচবিহারে তৃণমূলের জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় জানান,বিজেপির দুর্নীতির প্রতিবাদে দলত্যাগ করছেন নেতা-কর্মীরা, তাদের স্বাগত,আগামী দিনে আরও অনেকেই আসবেন।অন্যদিকে, বিজেপির জেলা সভানেত্রী মালতি রাভা রায়  বলেন,ব্যক্তিগত স্বার্থে দলত্যাগ করছেন। আর এমন একটা দলে যাচ্ছেন যে দলে সব স্তরেই দুর্নীতি।

গত বছর লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার আসনটি তৃণমূলের থেকে ছিনিয়ে নেয় বিজেপি।তারপর থেকেই এই জেলায় দু’দলের মধ্যে রেষারেষি তুঙ্গে।তারইমধ্যে দুই বিজেপি নেতা তৃণমূলে যোগ দেন। লোকসভা ভোটে গোটা উত্তরবঙ্গে দারুণ ফল করেছিল বিজেপি। প্রায় সবগুলো লোকসভা আসন দখল করেছিল গেরুয়া শিবির। তারপর থেকেই ঘর গোছাতে শুরু করে তৃণমূল।কিন্তু এখন প্রায় প্রতিদিনই নিয়ম করে বিজেপির ঘর ভাঙছে তাাঁরা। দিন কয়েক ধরেই জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন ব্লক থেকে গেরুয়া শিবির ছেড়ে নেতা কর্মীরা যোগ দিচ্ছেন তৃণমূল শিবিরে।

আগস্ট মাসে মাল বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপির সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক জাকিরুল হোসেন সহ প্রায় দেড়শো জন তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন। এরপর মাল বিধানসভা কেন্দ্রে ২০১১ সালের বিজেপি প্রার্থী বলরাম এক্কা সহ মোট ৫০ জন শাসকদলে যোগ দেন। ওই সময়ে ধূপগুড়িতেও বেশকিছু বিজেপি কর্মী তৃণমূলে যোগদান করেন।আলন্দপুর, মালবাজার, রাজগঞ্জের একাধিক কর্মী বিজেপি ছেড়েছেন।

তৃণমূলের শহিদ দিবসের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে দলনেত্রী ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়েছিলেন সর্বস্তরের কাছে। সেই আবেদনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তৃণমূল ভবনে ঘাসফুল পতাকা হাতে তুলে নেন দক্ষিণ দিনাজপুরের এক সময়ের দাপুটে তৃণমূল নেতা বিপ্লব মিত্র। দিল্লিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে তিনি এবং তাঁর ভাই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তারপর থেকে একদিনও বিরাম নেই। জলপাইগুড়ি থেকে ঝাড়গ্রাম, তৃণমূলে ঘর ওয়াপসি চলছেই। সপ্তাহ খানেক আগেই এই পুরুলিয়া জেলাতেই বিজেপির বাঘমুণ্ডি মণ্ডল কমিটি বিলীন হয়ে গিয়েছিল তৃণমূলে। এবার মমতা ব্যানার্জির ডাকে সাড়া দিয়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন আরও দুই দাপুটে নেতা শঙ্কর নারায়ণ সিংদেও এবং চঞ্চল মৈত্র। এর ফলে হাতছাড়া হয়ে যাওয়া জঙ্গলমহলে ফের তৃণমূলের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

পঞ্চায়েত ভোটে জঙ্গলমহল, বিশেষ করে পুরুলিয়া জেলায় বেশ ভালো ফল করেছিল বিজেপি। লোকসভা ভোটেও তৃণমূলকে হারিয়ে জয়লাভ করেছিলেন বিজেপি প্রার্থী। এই এলাকা নিয়ে চাপেই ছিল তৃণমূল নেতৃত্ব। এই পরিস্থিতিতে বিধানসভা ভোটের আগে এলাকার দাপুটে নেতা তথা রাজ পরিবারের সদস্য শঙ্কর নারায়ণ সিংদেও তৃণমূলে যোগ দিলেন। ২০১৮ সালে কংগ্রেস ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে যোগ দেওয়া শঙ্কর নারায়ণ সিংদেও ওই এলাকায় বিজেপির নির্বাচনী সাফল্যের অন্যতম প্রধান কারিগর বলে মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তিনি ছিলেন জয়পুর ব্লকের বিজেপি আহ্বায়ক। এবার তাঁর তৃণমূলে যোগদানে জঙ্গলমহলে তৃণমূলের দাপট বাড়ল, চাপ বাড়ল বিজেপির। এখানেই শেষ নয়, রাজ্যে যে কয়েকটি জায়গায় এখনও কংগ্রেসের দাপট আছে তার মধ্যে পুরুলিয়া অন্যতম। কিন্তু তৃণমূল এবার ভাঙন ধরালো কংগ্রেসের সেই দূর্গেও। মমতার ডাকে সাড়া দিয়ে হাত ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন কংগ্রেসের জয়পুর ব্লকের প্রেসিডেন্ট তথা পুরুলিয়া যুব কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট চঞ্চল মৈত্র।

বিজেপিতে ভাঙন অব্যাহত উত্তরবঙ্গ থেকে জঙ্গলমহল সর্বত্র। শুধু কি তাই, বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের গড়ের চার হেভিওয়েটও যোগ দিলেন তৃণমূলে।প্রায় প্রতিদিনই বিজেপি ছেড়ে যোগ দিচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেসে। তার মধ্যে এই দলবদল একটু স্বতন্ত্র কারণ, দিলীপ ঘোষের গড়ে থাবা বসাতে সক্ষম হল তৃণমূল। লোকসভায় ৫০ হাজার লিড থাকা সত্ত্বেও খড়গপুর সদর আসনটি তৃণমূলের কাছে খোয়াতে হয় বিজেপিকে। যে চার নেতা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে সেই খড়গপুরেই ফের ভাঙন ধরিয়ে চার নেতাকে নিজেদের দিকে টেনে নিল তৃণমূল। বছর ঘুরলেই রাজ্যে নির্বাচন, সেই সময় রাজ্য বিজেপির কপালে চিন্তার ভাঁজ চওড়া হচ্ছে, অন্যদিকে শাসক দল নানা সমস্যার মধ্যেই পাচ্ছে অক্সিজেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *