কলকাতা: একাধিক মামলায় অভিযুক্ত হয়ে মা জেল হেফাজতে৷ শিশু সন্তানকে নিজের কাছে নিতে চেয়েও পুলিশি উদাসীনতার কারণে পাচ্ছেন না বাবা! ফলে ৬ বছরের শিশু রাজশ্রী পড়ে রয়েছে হোমে৷ মিলছে না দেখা করার অনুমতি৷ এমনকী হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ করার পরেও কোনও হেলদোল নেই চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির!
কিশোরীর আকুল আর্তি, ‘‘আমি বাড়ি যেতে চাই৷’’ কিন্তু কে শুনবে কার কথা? শিশুটির বাবা সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, কোনও উদ্যোগই নিচ্ছে না বেলেঘাটা থানার পুলিশ ও চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি৷ কলকাতার বেলেঘাটার কবি সুকান্ত সরণির বাসিন্দা সুভাষ মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী অনুরাধা মুখোপাধ্যায় সেন তাঁদের একমাত্র কন্যা সন্তান ক্যালকাটা গার্লস স্কুলের প্রথম শ্রেণির পড়ুয়া রাজশ্রী৷ এখন স্কুলে যেতে হচ্ছে ইলিয়াড রোডের একটি হোম থেকে৷ মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে থেকেও তার বাবা তাকে চোখে দেখতে পর্যন্ত পারছেন না বলে অভিযোগ৷
ঘটনার সূত্রপাত অবশ্য ২০১৭ সালে৷ সেই সময় সুভাষ মুখোপাধ্যায় ও অনুরাধা মুখোপাধ্যায় আলাদা থাকতে শুরু করেন৷ শিশুটি থাকতো তার মায়ের কাছেই৷ কিন্তু, সেখানে তার দেখভাল ভালো হচ্ছিল না৷ এই মর্মে অভিযোগ জানিয়ে তাকে নিজের কাছে রাখতে চান বাবা সুভাষ মুখোপাধ্যায়৷ তিনি চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি কাছে আবেদন জানান৷ তবে কমিটি কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ৷ ওই বছর ১৭ এপ্রিল মামলায় হাইকোর্টে হাইকোর্ট চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলে৷ কমিটির সিদ্ধান্ত নেয়, সপ্তাহে তিন দিন সন্ধ্যায় শিশুটিকে দেখতে অনুরাধা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে যেতে পারবেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়৷ এরপরই ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়৷
অনুরাধা মুখোপাধ্যায় নাবালিকার বাব হিসাবে অন্য একজনকে পরিচয় দেন৷ এভাবেই চলতে থাকে বিষয়টি৷ সম্প্রতি গত ৯ অক্টোবর মারামারি, ছিনতাইয়ের অভিযোগ দায়ের হয় অনুরাধা মুখোপাধ্যায় বিরুদ্ধে৷ ২২৩ থেকে শুরু করে ৩৭৯ ধারা দায়ের হয় এফআইআর৷ সেদিন বেলেঘাটা থানার পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে৷ সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, সেই সময়ে রাজশ্রী মায়ের সঙ্গে বেলেঘাটা থানাতেই ছিল৷ পরদিন শিয়ালদা কোর্টে মামলা ওঠে৷ সেখানে অনুরাধা মুখার্জির পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক৷ তার জামিন নাকচ হয়৷ ফের মামলা উঠে৷ জেল হেফাজত হয় তাঁর৷
বাবার অভিযোগ, শিশুটির সম্পর্কে কোনও তথ্য দেয়নি বেলেঘাটা থানার পুলিশ৷ পরে সুভাষ মুখোপাধ্যায় জানতে পারেন, চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি তত্ত্বাবধানে রয়েছেন তার কন্যা৷ জানিয়েছে, বর্তমানে এলিয়ট রোডের একটি হয়ে রয়েছে সে গত ১৬ অক্টোবর তিনি মেয়ের হেফাজতের চেয়ে চিঠি দেন৷ কমিটিকে কিন্তু তাঁর কোন উত্তর আসেনি৷ ২০ অক্টোবর প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে ঘটনার কথা জানিয়ে চিঠি দেন তিনি৷ গত বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি জানান, আইন অনুযায়ী যা যা করণীয় সবই করতে পারেন আবেদনকারী সুভাষ মুখোপাধ্যায়৷ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাবা দেখা করার ব্যবস্থা করবে৷ কিন্তু অভিযোগ, তার পরেও সমস্যা সমাধান হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন শিশুর বাবা৷