সবুজ মুখোপাধ্যায়: সন ২০৩০৷ সত্তরোর্ধব নরেন্দ্র মোদি আজ রাজনীতি থেকে অনেক দূরে৷ 'রাজধর্ম' ত্যাগ করে কেদারের কাছে এক গুহায় গিয়ে সন্ন্যাসীর জীবন যাপন করছেন একদা বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দোর্দণ্ডপ্রতাপ প্রধানমন্ত্রী৷ সেই গুহায় এখন বিজেপি নেতারা তো দূর অস্ত, সঙ্ঘ পরিবারে কাউরও প্রবেশ নিষেধ৷ মোহন ভাগবত নিজে এসে অনেক করে বুঝিয়েছিলেন মোদিকে, “রাজনীতিতে না ফিরুন, সঙ্ঘের কাজে মন দিন৷” কিন্তু না, মোদিকে আর টলানো যায়নি৷
মোদি আজ সম্পূর্ণ অন্য মানুষ৷ সঙ্ঘের আদর্শ থেকে শতহাত দূরে তিনি আজ বড়ই একাকী, নিঃসঙ্গ৷ একদা দেশের এই লৌহমানব, আজ গুহায় বসে সারাক্ষণ শুধু যোগাভ্যাস করেন আর থেকে থেকেই গান্ধিকে নিয়ে রামচন্দ্র গুহ-র লেখা সব বইপত্তর পড়েন (সেই রামচন্দ্র গুহ, বিজেপিশাসিত রাজ্যে নাগরিত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়ে যিনি আটক হয়েছিলেন যিনি দশবছর আগে)৷ বিজেপির কোনও নেতারই মুখ দেখতে তিনি আর রাজি নন৷ মোদির অভিমান, এনআরসি আর সিএএ নিয়ে তাঁরা সবাই তাঁকে ভুলপথে চালিত করেছিলেন৷ ইনফ্যাক্ট তাঁর নিজের মনেও যখন কিঞ্চিৎ সংশয় তৈরি হয়েছিল, তখনও বিজেপি নেতৃত্ব তাঁকে বুঝিয়েছিলেন, এগুলো চালু হলে মেরুকরণের পুরো ফায়দা তুলতে পারবে দল৷ দেশে আর তখন বিজেপির সামনে দাঁড়াবার মতো কোনও প্রতিপক্ষই থাকবে না৷
হিন্দুরাষ্ট্রের স্বপ্ন আর অধরা থাকবে না৷ কিন্তু কোথায় কী? লোকসভায় তিনশোর বেশি আসন পাওয়া দল আর তিরিশটা আসনও ধরে রাখতে পারেনি গোটা দেশে৷ এমনকি খাস গোবলয়ে কার্যত নিশ্চিহ্ন বিজেপি৷ তাঁর মনে পড়ে, এই তো সেদিন…৷ যোগী আদিত্য কত কথাই না বললেন তাঁকে৷ উত্তরপ্রদেশে বিক্ষোভ হলে তিনি একাই সামলে দেবেন৷ বিক্ষোভকারীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে উচিত শিক্ষা দেওয়া হবে তাদের৷ কিন্তু কোথায় কী? খাস গোবলয়ে কিনা গেরুয়া ভ্যানিশ করে গেল এই দশবছরের মধ্যে!
হিমালয়ের পাদদেশে বসে, যোগ করতে করতেও এসব ভেবে তাঁর মন কেমন চঞ্চল হয়ে ওঠে৷ অবশ্য খানিকক্ষণের মধ্যেই আবার নিজেকে সামলে নেন৷ যোগীর আবার চঞ্চলতা কীসের? তারপর ফিরে আসেন গুহায়৷ দিনে একবার অন্তত চা খাওয়ার অভ্যেস ছাড়তে পারেননি তিনি৷ দীর্ঘদিন স্ট্রেস নিতে-নিতে ইরেটেবল বাওয়েল সিনড্রোম হয়ে গিয়েছে তাঁর৷ ফলে ভীষণ কোষ্ঠবদ্ধতা৷ যা যোগেও পুরোপুরি সারছে না৷ রাতে রোজ নিয়ম করে ইসবগুলের ভুষি খেতে হয় আর সকালে বড়কাপের এককাপ চা৷ অবশ্য শুধু সেই কারণেই নয়৷ চা মানে তো তাঁর নিজের শিকড়, যাকে আর ভুলতে চান না তিনি৷ একসময়ে এই চায়ের ধোঁয়া থেকে কীভাবে টিআরপি বাড়িয়েছিলেন তিনি, তা ভেবে আজ নিজেই নিজেকে ধিক্কার দেন৷ শুধু তাই নয়, পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে তীর্থযাত্রীদের জন্য বিনা পয়সায় একটা চায়ের স্টলও খুলেছেন তিনি৷ প্রধানমন্ত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধি মোদির এই বাসনার কথা জানা মাত্রই নাকি যাবতীয় অনুমতির ব্যবস্থা করে দিয়ে নজিরবিহীন সৌজন্যের পরিচয় দেখিয়েছেন৷ চা অবশ্য তিনি গুহায় বসে-বসে বানান, স্থানীয় দুই যুবক সেই চা বাইরে এনে বিলি করেন৷
বিশ্বস্তসূত্রে খবর, গোটা দেশের মধ্যে কেবল পশ্চিমবঙ্গ থেকে এক বিজেপি নেতা নাকি মোদির সঙ্গে কথা বলার অফুরন্ত সুযোগ পান৷ কারণ, তিনি মাঝেমধ্যেই মোদিকে রামকৃষ্ণ কথামৃত পড়ে শোনান৷ কিন্তু ওই একজন বাদ দিয়ে আর কোনও বিজেপি নেতা তাঁর ধার ঘেঁষার সাহস পান না৷ বলতে গেলে রাজনীতির আর কাউর সঙ্গেই তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই৷ যদিও সম্প্রতি রাহুল গান্ধি একবার এসেছিলেন কেদারে৷ খবর পেয়ে নিজে ডেকে গুহায় নিয়ে আসেন৷ বিশ্বস্তসূত্রে খবর, তারপর নাকি বলেন, “অমিত আপনাকে বারবার 'রাহুল বাবা' বলে ব্যঙ্গ করত৷ কিন্তু বিশ্বাস করুন আপনার প্রতি আমার কোনওদিন কোনও বিদ্বেষ ছিল না৷ সংসদে যেদিন আপনি চোখ মটকিয়ে আপনার গলা জড়িয়ে ধরলেন, সেদিন থেকেই বুঝেছিলাম, আপনি মন থেকে অতীব সরল৷ আর আজ বুঝেছি, কাশ্মীর নিয়ে আপনার পিতামহ যা করেছিলেন, তা-ই ঠিক ছিল৷ আমি মিছেই ৩৭০ ধারা রদ করতে গেলাম৷ কাজের কাজ তো কিছুই হল না৷ মাঝখান থেকে আম্বানিরা সব উপত্যকার জমি দখল করে কীসব শুরু করে দিল৷ … আর হ্যাঁ, মমতাদিদির সঙ্গে যদি দেখা হয়, তাহলে নোটবাতিলের জন্য তাঁর কাছে আমার হয়ে ক্ষমা চেয়ে নেবেন৷” তারপরেই নাকি জয় শ্রীরাম বলে ঢোক গিলে নিলেন, নিজেকে শুধরে বললেন, ‘হে রাম…৷’