তপন মল্লিক চৌধুরী: একদিন নেতাই থেকেই সিপিএমের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই আন্দোলনের সামনের সারিতে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সেই তিনি ঝাড়গ্রামে নেতাই দিবসে অনুপস্থিত। স্বভাবতই জল্পনার পারদ চড়ছে। তিনি কি সত্যিই তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করছেন?
কেন শুভেন্দু অধিকারীর পরিবর্তে দোলা সেন নেতাই দিবসে নেতাই-কাণ্ডে নিহতদের পরিজনদের হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দিলেন? লোকসভা নির্বাচনের পর ঝাড়গ্রামের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছিল শুভেন্দুর হাতে। পরে শুভেন্দুর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম। তারপর থেকেই কি শুভেন্দু ঝাড়গ্রামকে এড়িয়ে যাচ্ছেন?
আরও পড়ুন- এক সময় সিপিএমের কুনজরে ছিলেন সোমেন, কীভাবে বদলেছে সমীকরণ?
এর আগে হুল দিবসেও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে একই মঞ্চে অনুপস্থিত ছিলেন শুভেন্দু। নেতাজি ইন্ডোরের ‘বাংলার গর্ব মমতা’ ইভেন্ট-এও হাজির ছিলেন না শুভেন্দু। ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের ‘পাঠচক্রে’ হাজির থাকতে রাজি নয় শুভেন্দু। সম্প্রতি লকডাউন চলাকালীন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অনেক ভার্চুয়াল বৈঠকেও হাজির থাকেননি তিনি।
একুশের নির্বাচনের আগে শুভেন্দুকে নিয়ে জল্পনা বাড়ছে। মুখ না দেখিয়েও প্রচার টেনে নিচ্ছেন। যদিও ২৩ জুলাই তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের সর্বস্তরে যে নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে সেখানে শুভেন্দুকে দলের শীর্ষ স্তরের তিনটে কমিটিতে রাখা হয়েছে।
আরও পড়ুন- সোমেন মিত্রর পর প্রদেশ সভাপতি কে? চর্চায় উঠছে কাদের নাম
আসলে কৌশলগত ভাবে পর্যবেক্ষক পদের অবলুপ্তি ঘটিয়ে বেশ কয়েকটি জেলায় দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁর সরাসরি যোগাযোগ কমানোর রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। কার্যত তাঁর ক্ষমতা ক্ষর্ব হয়েছে। নতুন ঘোষণায় দল একক ভাবে শুভেন্দুকে কোনও সাংগঠনিক দায়িত্ব দেয়নি। তার অনুগামীরা ক্ষোভপ্রকাশও করেছেন। তবে শুভেন্দু নিজে এখনও কোনও মন্তব্য করেননি।
গত কয়েক মাস ধরে তৃণমূলের অন্দরমহলের রাজনীতিতে শুভেন্দুকে নিয়ে জোর অশান্তির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ২৩ জুলাই তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের নতুন কমিটির কথা ঘোষণা করেন। সেই রদবদলের শুভেন্দু অধিকারীকে দেওয়া হয়েছে রাজ্য সংগঠনের সাধারন সম্পাদকের পদ। এতে খুশি নন শুভেন্দু। কারণ, রাজনীতিতে অভিজ্ঞতায় ও অবদানে তৃণমূল কংগ্রেসে অনেকের চেয়ে বেশি কর্তৃত্বের অধিকারী নন্দীগ্রাম বিধায়ক।
আরও পড়ুন- মন্ত্রিত্ব, রাজ্যসভা এবং সারদা! ৩ কাঁটায় আটকে মুকুল-সাম্রাজ্য
শুধু এই রদবদল নয়, দীর্ঘ সময় ধরে চলা তৃণমূল অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সমীকরণের হাতবদল নিয়েও শিশির অধিকারী পুত্রের ক্ষোভের খবর প্রায়ই শোনা যায়। এর পরের সমন্বয় কমিটির বৈঠকে কি তিনি যোগ দেবেন?
তৃণমূলে প্রশান্ত কিশোরের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রথম থেকেই আপত্তি ছিল শুভেন্দু অধিকারীর। তাঁর আপত্তির কথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তা সত্বেও তৃণমূল তাঁর সংযুক্তির রুখতে পারেননি পরিবহনমন্ত্রী।
আরও পড়ুন- পুলিশ-কর্তাদের সম্পত্তি হিসেব চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে টুইট রাজ্যপালের
লোকসভা নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর আর এবিষয়ে ঝুঁকি নিতে চায়নি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর সাংসদ ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পরামর্শদাতা হিসেবে প্রশান্ত কিশোরের আগমনকে সেই ভালো চোখে দেখেননি শুভেন্দু। তবে দলে ইতিমধ্যে তাঁকে পূর্ণ সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়ার দাবি উঠেছে। তাঁকে সক্রিয় করে তোলার মতো পরিবেশ দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। কারণ, দলের সঙ্গে শুভেন্দুর দূরত্ব বৃদ্ধিতে তৃণমূলের হাত থেকে বেরিয়ে যেতে বসেছে লালগড়।
২০২১-এর বিধানসভায় তৃণমূলের ভালো ফলের জন্য সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানো জরুরি। ঝাড়গ্রামে যেভাবে তৃণমূল কংগ্রেসকে সরিয়ে বিজেপি আধিপত্য বিস্তার করেছে, শুভেন্দুর সঙ্গে দলের দূরত্ব অবিলম্বে ঘুচিয়ে একুশের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতির প্রয়োজন।