বোলপুর: সকালে প্রশংসা, দুপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বেপরোয়া আক্রমণ শানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ অনুব্রত মণ্ডলের গড়ে দাঁড়িয়ে মমতাদির সরকারের বিদায়ের ঘণ্টা বেজে গিয়েছে বলেও জানান নমো৷ ইলামবাজারে জনসভায় থেকে নরেন্দ্র মোদির কড়া হুঁশিয়ারি, ‘‘২৩ মের পর থেকে মমতাদির সরকারের বিদায়ের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে যাবে৷ বাংলার মানুষ তাঁর যোগ্য জবাব দেবে৷’’
এদিনের জনসভা মঞ্চ থেকে বাংলার শিল্পনীতি ও কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গ তোলেন৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার উন্নয়ন থমকে দিচ্ছে বলেও কটাক্ষ করেন তিনি৷ তৃণমূলের গুন্ডামি ও সিন্ডিকেটের জন্য বাংলার বিকাশ থমকে রয়েছে বলেও জানান মোদি৷ সাফ জানিয়ে দেন, ‘‘এখানে শিল্প আসছে না৷ কারখানা বন্ধ৷ এখানে কর্মসংস্থান হয়নি৷ শুধু গুন্ডামির জন্য পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার৷’’
বাংলায় শক্তহাতে নির্বাচন পরিচালোনার জন্য নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানান৷ কমিশনকে ধন্যবাদ জানিয়ে মমতাকে কটাক্ষ করেন তিনি৷ বলেন, ‘‘এখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করানো হচ্ছে৷ মমতাদি তাই নির্বাচন কমিশনকে গালাগালি করছেন৷ আসলে দিদি ভয় পেয়ে গিয়েছেন৷’’
অন্যদিকে, রাজনৈতিক মঞ্চের দাঁড়িয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঘোষণা করলেও, মোদি-মমতার সম্পর্ক অনেক গভীরে৷ বুধবার অভিনেতা অক্ষয় কুমারের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ‘দিদি’র প্রসঙ্গ তোলেন মোদি৷ এদিন, অন্য মেজাজে সাক্ষাৎকার দেন মোদি৷ নিজের শৈশব থেকে শুরু করে প্রশাসক হিসাবে তাঁরা দক্ষতার প্রসঙ্গও উঠে আসে৷ রাগ-অভিমান নিয়েও নিজের মতামত জানান মোদি৷ এরপরই ওঠে অন্য রাজনৈতিক দলের নেতা মন্ত্রীদের সম্পর্কের প্রসঙ্গ৷ এদিন এই বিষয়ে বলতে গিয়ে গোলাম নবী আজাদের কথা তুলে ধরতেই মোদির মুখে উঠে আসে ‘মমতা দিদি’র কথা৷
বলেন, ‘‘এটা বললে হয়তো আমার নির্বাচনে ক্ষতি হতে পারে, তবুও বলি, আপনি জানানে, মমতাদিও আমার জন্য উপহার পাঠান৷ বছরে দু’তিন বার আমার জন্য কুর্তা পাঠান৷ বাংলাদেশ থেকেও আমার জন্য মিষ্টি পাঠানো হয়৷ মমতাজিও আমাকে দু’এক বার মিষ্টি পাঠিয়েছেন৷ মমতা নিজের পছন্দ করে আমার জন্য কুর্তা পাঠান৷’’
বিরোধী নেতাদের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক, অক্ষয় কুমারের প্রশ্নের জবাবে মোদি বলেন, ‘‘বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রয়েছে। আমরা বছরে এক-দু’বার খাওয়া-দাওয়া করি। অনেক আগের কথা, তখন আমি মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম না। কোনও একটা কাজে সংসদে গিয়েছিলাম। গুলাম নবি আজাদের সঙ্গে আড্ডা মারছিলাম। আমাদের একসঙ্গে আড্ডা মারতে দেখে অবাক হয়ে সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপানার একসঙ্গে আড্ডা মারছেন! এই কথায় গুলাম নবি দারুণ কথা বলেছিলেন, আপনারা বাইরে থেকে যা ভাবেন তা নয়। সকলেই পরিবারের মতো।’’
তবে, মোদির এই মন্তব্যের জেরে রাজনৈতিক মহলে তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা৷ মোদির মুখে দিদির প্রশংসা শুনে বিরোধী শিবিরে নানান বিতর্ক তৈরি হয়েছে৷ অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, এটা কি নয়া ‘সেটিং’-এর ইঙ্গিত? বিরোধী শিবিরের তরফে ‘সেটিং’ তত্ত্ব খাঁড়া করা চেষ্টা চলেও মোদি-মমতার রাজনৈতিক সৌজন্যতার বর্তাই এদিন তুলে ধরতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী৷ দাবি গেরুয়া শিবিরের৷