Aajbikel

মুসলিম ভোট কী সরে যাচ্ছে? তথ্য সন্ধানে দ্রুত কমিটি গড়ে দিলেন মমতা! ড্যামেজ কন্ট্রোল হবে?

 | 
তৃণমূল

নিজস্ব প্রতিনিধি: বিভিন্ন দুর্নীতির ইস্যু যখন নিত্য তৃণমূলকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে ঠিক তখনই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত সাগরদিঘি বিধানসভার উপ-নির্বাচনে তৃণমূল হেরে গিয়েছে। সংখ্যালঘু ভোটের কার্যত একচেটিয়া অধিকার তৃণমূলের দখলে থাকলেও সাগরদিঘিতে অন্যরকম ফল হয়েছে। এই অবস্থায় আর দেরি না করে হারের কারণ খুঁজতে কমিটি গড়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার বিধানসভায় দলের পাঁচ জন নেতাকে নিয়ে এ বিষয়ে বৈঠক করেন তিনি। রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী, সেচ প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আখরুজ্জামান, সংখ্যালঘু প্রতিমন্ত্রী গোলাম রাব্বানি ও জঙ্গিপুরের বিধায়ক জাকির হোসেনকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজের ঘরে বৈঠক করেছেন। সাগরদিঘি ভোটের বিপর্যয় নিয়ে একটি রিপোর্ট তাঁদের জমা দিতে বলেছেন মমতা, এমনটাই সূত্রের খবর। এর পাশাপাশি ওই পাঁচ সদস্যের কমিটিকে প্রয়োজনে সাহায্য করার জন্য রাজ্যের দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণভাবে মুখ্যমন্ত্রীর গড়ে দেওয়া কমিটিতে স্থান পাননি জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান। বিধায়ক জাকির হোসেন স্থান পেলেও কেন খলিলুর কমিটির বাইরে রইলেন তা নিয়ে ফিসফিসানি শুরু হয়ে গিয়েছে মুর্শিদাবাদ তৃণমূল রাজনীতিতে। সূত্রের খবর রাজ্য জুড়ে সংখ্যালঘুদের মনোভাব খতিয়ে দেখবেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী সিদ্দিকুলা চৌধুরী এবং সাবিনা ইয়াসমিন।

একুশের বিধানসভা নির্বাচনে শূন্য হয়ে গিয়েছে বাম এবং কংগ্রেস। কিন্তু সাগরদিঘির উপনির্বাচনে বামেদের সমর্থন নিয়ে কংগ্রেস বড় ব্যবধানে তৃণমূলকে হারিয়ে দিয়েছে। কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস তেইশ হাজার ভোটে পরাজিত করেছেন তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যেহেতু সাগরদিঘিতে ৬৪ শতাংশ সংখ্যালঘু মানুষের বাস রয়েছে, তাই তৃণমূলের হারে প্রশ্ন উঠে যায়। তবে কি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তৃণমূলকে আগের মতো আর বিশ্বাস করতে চাইছেন না? তাঁরা কি তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন? এই চর্চা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। উল্লেখ্য পরাজয়ের পরেই তৃণমূল প্রচার শুরু করে সাগরদিঘিতে বাম, কংগ্রেস এবং বিজেপির 'অশুভ' জোট হয়েছিল বলেই তাদের হারতে হয়েছে। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্ব ভাল করেই জানেন এটা বলতে হয় তাই বলা। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কেন্দ্রে এই পরাজয়কে তৃণমূল অশনি সংকেত হিসেবেই দেখছে। শুধু সাগরদিঘি কেন্দ্র বলে নয়, রাজ্যের প্রত্যেকটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চলে তৃণমূল সম্পর্কে মানুষের মনোভাব বদলাচ্ছে কিনা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ তৃণমূলের পাশ থেকে সরে যাওয়ার কথা ভাবছেন কিনা, তাঁদের আর কি কি দাবি রয়েছে, এই সমস্ত বিষয়গুলিও মমতার ঠিক করে দেওয়া পাঁচ সদস্যের কমিটির সদস্যরা খতিয়ে দেখবেন বলে খবর। অর্থাৎ এটা পরিষ্কার সাগরদিঘির হার অসম্ভব ভাবিয়ে তুলেছে তৃণমূলকে।

রাজনৈতিক মহল মনে করছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ তৃণমূলকে দু'হাত ভরে ভোট দিলেও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তাদের বহু ক্ষোভ রয়েছে। যেভাবে বিজেপি বিরোধী একাধিক ইস্যুতে তৃণমূল সাংসদরা দিল্লিতে কংগ্রেসের ডাকা বৈঠকে বিভিন্ন সময়ে অনুপস্থিত থেকেছেন। তাতে ক্ষুব্ধ বাংলার মুসলিমরা। বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনে প্রার্থী দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট কেটে বিজেপির সুবিধা করে দেয়, এই অভিযোগ বহুদিন ধরে করছে কংগ্রেস। এই বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের উপর বাংলার মুসলিম সমাজের একাংশ ক্ষুব্ধ বলেই খবর। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি বলে পরিচিত গৌতম আদানি পশ্চিমবঙ্গে শিল্প স্থাপনে আগ্রহ দেখিয়ে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। রাজ্যে শিল্প হবে, এর চেয়ে ভাল কিছু হতে পারে না। কিন্তু যেহেতু সেই শিল্পপতির নাম গৌতম আদানি তাই বিষয়টি নিয়ে অনেকের মনেই খুঁতখুতানি রয়েছে। এর পাশাপাশি নওশাদ সিদ্দিকী চল্লিশ দিনের বেশি জেলে ছিলেন। যে বিষয়টিকে একেবারেই ভাল চোখে দেখছে না বাংলার সংখ্যালঘু সমাজ। এর পাশাপাশি আনিস খানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে। সেই আনিসের বাবা সাগরদিঘি উপনির্বাচনের প্রচারে গিয়ে কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন। এই ধরনের নানা কারণে রাজ্য সরকারের উপর ক্ষুব্ধ সংখ্যালঘু সমাজের একটা বড় অংশ, এমনটাই মনে করে ওয়াকিবহাল মহল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁরা তৃণমূলকে ভোট দিয়ে আসছেন একটাই কারণে যে, যাতে বিজেপিকে হারানো যায়। তাই ট্র্যাডিশনাল বাম-কংগ্রেসের মুসলিম ভোটাররা মনের সঙ্গে লড়াই করেই তৃণমূলকে ভোট দিচ্ছেন। কিন্তু সাগরদিঘির পরাজয়ে তৃণমূল অশনি সংকেত দেখছে। বাম-কংগ্রেস তাদের হারানো সংখ্যালঘু ভোট যদি ফিরে পায় তাহলে রাজ্যে তৃণমূলের ক্ষমতায় থাকা কার্যত অসম্ভব হয়ে উঠবে বলেই মত রাজনীতির কারবারিদের। আর সেটা বুঝতে পেরেই মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত কমিটি গড়ে ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা করছেন। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে সংখ্যালঘু সমাজ কি করে সেটাই দেখার।

Around The Web

Trending News

You May like