তপন মল্লিক চৌধুরী: করোনা অতিমারির মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের নিট-জেইই পরীক্ষা নেওয়ার বিরোধিতা করে আসছেন মমতা। প্রধানমন্ত্রীকে একাধিক চিঠি দিয়েছেন। প্রকাশ্যে আপত্তিও জানিয়েছেন। সর্বোপরি এই ইস্যুতে বুধবার বিরোধী শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের সওয়াল করেছেন। তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দলকেও রাস্তায় নামিয়েছেন। এ বার সেই দাবিকে রাজনীতির মঞ্চে নিয়ে এলেন তিনি।
শুক্রবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চে নিট-জেইই পরীক্ষা নিয়ে তৃণমূলনেত্রী যে সুর চড়াবেন তা জানাই ছিল। এদিন তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে তুলোধনা করে বললেন, জেইই-নিট-সহ সব পরীক্ষা নিয়েই দুশ্চিন্তা। সবাই ভাবছে পরীক্ষা দিতে গিয়ে অসুস্থ হব না তো? পরীক্ষা নিয়ে পরিবারের লোকজনও চিন্তিত। পরীক্ষা নিয়ে গায়ের জোরে সিদ্ধান্ত চাপানো হচ্ছে। জেইই-নিট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথা বলেছে, প্রথম চিঠিতে ইউজিসি বলে পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। জুলাইয়ে চিঠি দিয়ে বলল পরীক্ষা নিতে হবে। তখন সুরক্ষার কথা বলা হল, এখন তাহলে কী হল? এ প্রশ্ন তৃণমূল নেত্রীর। মমতা এদিন কেন্দ্রীয় সরকারকে কটাক্ষ করে বলেন, কেন্দ্র ভোটের সময় আদালতকে দেখিয়ে দিচ্ছে। কেন্দ্রের নতুন শিক্ষানীতিকেও আক্রমণ করেন মমতা।
শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানের আগে পরে তৃণমূলের দলীয় সংগঠনে ব্যাপক রদবদল হয়েছে। মমতা সামনে এনেছেন অপেক্ষাকৃত তরুণ প্রজন্মের নেতাদের। দায়িত্ব দিয়েছেন তাঁর রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। টিএমসিপির প্রতিষ্ঠা দিবসের দিন থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে কেন্দ্র বিরোধী আন্দোলন শুরু করলেন মমতা। করোনার সময় নিট-জয়েন্টের বিরোধিতার পাশাপাশি কেন্দ্রের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কিভাবে বিরোধিতা করবেন সেই ছক আগেই মমতা সাজিয়ে ফেলেছেন। নিট-জেইই পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার দাবিতে তিনি গত বুধবার আইনি লড়াইয়ের কথা বলেছিলেন। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় সেপ্টেম্বরের গোড়ায় নির্ধারিত নিট-জেইই পরীক্ষা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে অ-বিজেপি অনেক রাজ্য। বৃহস্পতিবার সনিয়া গাঁধী ও বিভিন্ন বিরোধী-শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টের রায় পুনর্বিবেচনার পথ বাতলে দিয়েছেন মমতা। এদিন তিনি আরও সুর চড়ালেন।
নিট-জেইই নিয়ে আইনি ও প্রশাসনিক- দু’দিক দিয়ে প্রতিবাদ করলে লাভ বলে মনে করছেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি ভাবছেন, পরীক্ষা স্থগিত থাকলে বিরোধীদের জয়। অন্যদিকে পরীক্ষাসূচি অপরিবর্তিত থাকলে পড়ুয়া ও তাঁদের অভিভাবকদের সমর্থন মিলবে। তাই করোনা পরিস্থিতিতে কীভাবে ২৬ লাখ পড়ুয়া নিট ও জেইই পরীক্ষায় বসবেন, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন মমতা।
মমতা ভোটের কারণেই পড়ুয়াদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বলে মনে করে বিজেপি। বিজেপি দলের জাতীয় তথ্য প্রযুক্তি সেল-এর প্রধান অমিত মালব্য বলেন, ‘জয়েন্ট এন্ট্রান্স ও এনইইটি পরীক্ষা আয়োজনের অপারগতার কথা জানিয়ে দরবার করার পরে এবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজ্যজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেছেন, যাতে ১৩ সেপ্টেম্বর পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে দুর্ভোগের মুখে পড়েন। নিজের রাজনৈতিক লাভের জন্য তিনি কী বিপজ্জনক পথ অবলম্বন করছেন না?’
২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম বার ভোট দিতে চলা নবীন ভোটারদের দিকে তাকিয়ে এ দিন তাঁর মুখে কেন্দ্র-বিরোধী ভাষণে নিট-জেইই পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই সরব হতে শোনা গেল। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজ্যের কংগ্রেস এবং বাম শিবিরও। বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান এবং সিমিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক এবং বাংলার রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে যৌথ উদ্যোগে চিঠি লিখে ওই দুই পরীক্ষা বাতিলের আবেদন জানান।
এদিকে জেইই-নিট পরীক্ষা নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন ৬ বিরোধী রাজ্যের মন্ত্রীরা। করোনা পরিস্থিতিতে নিট ও জেইই করতে কেন্দ্রকে অনুমতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টে রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী মলয় ঘটক, ঝাড়খণ্ডের রামেশ্বর ওরাওঁ, রাজস্থানের রঘু শর্মা, ছত্তীসগড়ের অমরজিত ভগত, পাঞ্জাবের বিএস সিধু ও মহারাষ্ট্রের উদজয় রবিন্দ্র সাওয়ান্ত। উল্লেখ্য়, নিট ও জেইই স্থগিতের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।