দেবময় ঘোষ: আজ ৮ জুলাই জ্যোতি বসুর জন্মদিন। এর মাঝেই ' বাক্য বোমা ' ফাটালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, সিপিএম আমলে পঞ্চায়েতের দুর্নীতি, চুরি ছিল ১০০ শতাংশ। সেই পুরান অভ্যাস থেকে গিয়েছে। মমতা যুক্তি দিয়েছেন, তাঁর সরকারের প্রায় ১০ বছরের শাসন কালে সিপিএমের ৩৪ বছরের পঞ্চায়েত দুর্নীতি ঢাকা দিতে পারা যায়নি। ৭-৮ শতাংশ থেকে গিয়েছে। পরে যদিও অন্য একটি কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, তাঁর আমলে ৯০ – ১০ অর্থাৎ পঞ্চায়েত ১০ শতাংশ দুর্নীতিগ্রস্ত, ৯০ শতাংশ সৎ। অন্য রাজ্যে ঠিক উল্টো, অর্থাৎ ১০ – ৯০। এই রাজ্যে যা চুরি, দুর্নীতি হচ্ছে তা সিপিএমের তৈরি 'মেকানিজম'। এইটাকে 'ট্যাকেল' করতে তাঁকে 'ডে-নাইট' ফাইট করতে হয়। পঞ্চায়েতে টাকা করা চুরি করে ? মমতা বুঝিয়েছেন, সিপিএম চুরি করে।
বুধবার মমতার কথায়, “সিপিএমের আমলে ১০০ এ ১০০ শতাংশ চুরি করত পঞ্চায়েতে। আমরা তো অন্তত ১০০ শতাংশ না পারি, একবারে সব চোর উৎখাত করা সম্ভব নয়। ৯০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছি, তার কারণ আমি আমার পার্টিকেও ছেড়ে কথা বলি না। মানুষের টাকা যেন কেউ না নেয়, এটা আমাদের নির্দেশ। হ্যা, ৭-৮ শতাংশ কোথাও আছে সেটা চেষ্টা চলছে। পুলিশ এফ এই আর করছে, গ্রেফতার করেছে। তার বিরুদ্ধে 'একশন' নেওয়া হচ্ছে। সেটাও আস্তে আস্তে কমে যাবে। অন্য রাজ্যে এটা দেখুন ১০-৯০। আমাদের এখানে এটা ৯০-১০। একদিনে কী আর সবার অভ্যাস পরিবর্তন হয়? এই মেকানিজম টা সিপিএম তৈরি করেছে ৩৪ বছর ধরে। ওদের এই মেজানিজম তা এখনও, নিচু স্তরে, সরকারি …, কিছু জায়গায় আছে। এইটাকে ট্যাকেল করতে গিয়ে রোজ ডে-নাইট আমাকে ফাইট করতে হয়।”
রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বা তাঁর উত্তরসূরি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আমলের বিভিন্ন ঘটনাক্রম 'সিপিএমের কারসাজি' / 'সিপিএমের দোষ' / 'সিপিএমের আমলে তৈরি' / 'সিপিএম করেছে – এমন কথা বলতে মমতা বড় কুণ্ঠা বোধ করতেন না কোনও দিনও। ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যে বামশক্তি বেড়েছে তা অতি বড় বাম সমর্থকও বলবেন না। এককালের 'জগদ্দল পাথর' বামেরা বরং বিরোধী হিসাবে মমতার সু-দৃষ্টিতেই ছিল বা আছে। বুদ্ধবাবু বা কান্তি গাঙ্গুলি'রা তাঁর চোখে সৎ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
কিন্তু, বিধানসভা নির্বাচনের ৮-৯ মাস আগে এসে মমতাকে কেন পুরান অভ্যাস ফিরিয়ে আনতে হল? আপাতদৃষ্টিতে যা মনে হয়, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ কালে রাজ্য জুড়ে রেশন বন্টন নিয়ে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ এবং আমফান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ বণ্টনে ব্যাপক চুরির অভিযোগ থেকে মুক্তির পথ খুঁজেছেন মমতা। তবে কলকাতা পুলিশের একটি অনুষ্ঠানে হাজরা মোড়ে দাঁড়িয়ে বুধবার মমতা যা বললেন, তা একপ্রকার স্বীকারোক্তি। আমফান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি বানাতে টাকা দিচ্ছে রাজ্য। দো-তলা পাকা বাড়ির মালিক তৃণমূল নেতারা সেই টাকা পকেটে পুরছেন। গণমাধ্যমের প্রচারে বিরোধীদের একটু সাহস বেড়েছে। তাই, এক প্রকার বাধ্য হয়েই রাজ্য সরকার এবং তৃণমূল সেই টাকা লুঠেরাদেরবথেকে ফিরিয়ে আনার তোড়জোড় শুরু করেছে। তৈরি হচ্ছে নতুন তালিকা। এর মাঝেও খবর পাওয়া গিয়েছে, সেই তালিকাতেও নাকি দূর্নীতি। ফের চুরির অভিযোগে উঠেছে। এই অবস্থায়, আত্মপক্ষ সমর্থনে কী করতেন মমতা? নিজের পার্টির / সরকারের কলঙ্ক ঢাকতে সিপিএমকে 'ঢাল' হিসাবে ব্যবহার করা তাঁর পুরান অভ্যেস। ইতিহাস ফিরে আসে। অভ্যাসও ফিরে আসে। -ফাইল ছবি